শয়তান আদম আ:কে অভিবাদন না করে আল্লাহর দরবার হতে যখন ধিকৃত হয়ে বিতাড়িত হলো; তখন সে আদম আ:কে পথহারা, লাঞ্ছিত করার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করল। বেহেশত থেকে তাকে ও তার একমাত্র সঙ্গিনী হাওয়া আ:কে বের করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। আর সেটা করার জন্য প্রথমে তাদের জান্নাতি পোশাক খুলে নেয়ার পরিকল্পনা করল। টার্গেট ছিল তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ করে দেয়ার। ছলেবলে কৌশলে একদিন সে সফল হলো। পরিচয় গোপন করে হিতাকাক্সক্ষী সেজে তাদেরকে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করাল। শপথ খেয়ে বলল, ‘আমি তোমাদের কল্যাণকামী’। কুরআনুল কারিমে ঘটনা এভাবে বর্ণিত হয়েছেÑ ‘অতঃপর শয়তান তাদেরকে প্ররোচনা দিলো, যাতে সে তাদের জন্য প্রকাশ করে দেয় তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের থেকে গোপন করা হয়েছিল এবং সে বলল, ‘তোমাদের রব তোমাদেরকে কেবল এ জন্য এ গাছ থেকে নিষেধ করেছেন যে, (এখান থেকে খেলে) তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা তোমরা চিরস্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ আর সে তাদের নিকট শপথ করল যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের উভয়ের জন্য কল্যাণকামীদের একজন’। অতঃপর সে তাদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে পদস্খলিত করল। তাই তারা যখন গাছটির ফল আস্বাদন করল, তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে গেল। আর তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদের ঢাকতে লাগল এবং তাদের রব তাদের ডাকলেন যে, ‘আমি কি তোমাদের ওই গাছটি থেকে নিষেধ করিনি এবং তোমাদের বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু? তারা বলল, ‘হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের রহম না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’ তিনি বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু এবং জমিনে তোমাদের জন্য ক্ষণস্থায়ী আবাস ও ভোগ-উপকরণ রয়েছে’। তিনি বললেন, ‘তোমরা তাতে জীবন যাপন করবে এবং তাতে মারা যাবে। আর তা থেকে তোমাদের বের করা হবে।’ হে বনি আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম। এগুলো আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। হে বনি আদম, শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল; সে তাদের পোশাক টেনে নিয়েছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখানে তোমরা তাদের দেখো না। নিশ্চয় শয়তানকে আমি বন্ধু বানিয়েছি তাদের যারা ঈমান আনে না।’ (সূরা আরাফ : ২০-২৭) উপর্যুক্ত আয়াত থেকে শয়তানের প্রধান হাতিয়ার নগ্নতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। যুগে যুগে শয়তান তার এ ঘৃণ্য হাতিয়ার মুমিন-মুত্তাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে আসছে। হজরত ইবরাহিম আ:কে নমরুদ যখন আগুনে নিক্ষেপ করতে ব্যর্থ হচ্ছিল (ফেরেশতাদের ক্ষেপণাস্ত্রে ধরে থাকার কারণে) তখন সে নগ্ন-নর্তকীদের সেখানে ছেড়ে দিতে বলল। নমরুদ বাহিনী এমনটাই করল। উলঙ্গ যুবতী নর্তকীদের সেখানে এনে ধুমধাম করাল। সাথে সাথে ফেরেশতারা চলে গেলেন। আর তারাও তাদের কাজে সফল হলো। এভাবে বনি ইসরাইলের আবেদ, মুত্তাকি একটি মুজাহিদ বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছিল নগ্ন যুবতীদের ফাঁদে ফেলে। মানবজাতির গোপনাঙ্গ নিয়ে এমন ঘৃণ্য লীলাখেলা শয়তান এবং তার দলবলের ইতিহাসের শুরু থেকে ছিল, আছে, কিয়ামততক চলতে থাকবে। স্বল্পবসনা বা উলঙ্গরা তার প্রিয় সহচর। সুতরাং তাদের বেশভূষা পরিহার করা মুমিনের কর্তব্য। এ জন্য নর-নারী দু’জনকেই শালীন পোশাক পরতে হবে, হিজাব প্রথা মানতে হবে। নতুবা মানবে দানবে ব্যবধান থাকবে না।
দুনিয়াতে কোনো প্রাণিকেই আল্লাহ উলঙ্গ রাখেননি। কোনোটির লজ্জাস্থান ঢেকে দিয়েছেন পশম দ্বারা, কোনোটির পালক দ্বারা, কোনোটির ছোট-বড় লেজ দ্বারা। আর মানুষের জন্য ব্যবস্থা করেছেন উন্নত সাজ-পোশাকের। প্রকৃতিতে লক্ষ করলে দেখবেন একটি উলঙ্গ বৃক্ষ দেখতে কেমন বেমানান লাগে। তাই বৃক্ষ-লতাকেও মহান আল্লাহ বাহারি পাতা-পল্লবে ঢেলে সাজিয়েছেন। কিন্তু নগ্নবাদীরা এসব দেখে না, বুঝে না, গবেষণাও করে না। প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম বাদ দিয়ে উল্টোপথে চলতে চায়, বস্ত্রহীন থাকতে পছন্দ করে। এ জন্য আল্লাহ তায়ালাও অনন্তকাল তাদের উলঙ্গ থাকার ব্যবস্থা করেছেন। হাশরের দিন তাদের সবাইকে উলঙ্গ করেই জাহান্নামে ছেড়ে দেবেন। তখন নগ্নবাদীরা নগ্নতার আসল স্বাদ পাবে! তারা সৃষ্টির অধম উভয় জাহানে। শারীরিকভাবে তারা মানুষ হলেও প্রকৃত মানব তারা হতে পারেনি। ‘উলা-ইকা কাল আনয়ামি বালহুম আদল্লু’। তাই আমরা পোশাক পরতে চাই। মানব হতে চাই। তবে পোশাক পরাটা নিজের মতো পরলেই হবে না। ধর্ম যেভাবে পরায় সেভাবেই পরতে হবে। ধর্ম ঘরে পরায় এক পোশাক বাইরে আরেক পোশাক। আপনজনের কাছে একরকম পরজনের কাছে আরেকরকম। পুরুষের জন্য একটি নারীর জন্য অন্যটি। সুতরাং নারী-পুরুষের পোশাকে ইসলামে ভিন্নতা রয়েছে। ভিন্নতা রয়েছে পরিমাণেও। পুরুষকে নাভি থেকে টাখনু ঢেকে নিলেই চলে। তবে সৌন্দর্য আর তাকওয়ার বিবেচনায় তা যথেষ্ট নয়। নবীজি সা:-এর ভাষ্যমতে লম্বা ঢিলেঢালা বহির্বাস দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে রাখাই উচিত। আর নারীর অলঙ্কারের জায়গা ছাড়া সবই ঢেকে রাখতে হয় অন্তঃপুরে নিকটাত্মীয়দের কাছে। বাইরে গেলে কিংবা পর পুরুষের সামনে গেলে তখন আপাদমস্তক ঢেকে বের হতে হয়। এটার নামই হিজাব, নারীর পর্দা। এটা তার অলঙ্কার, শ্রেষ্ঠ ভূষণ! সুতরাং একজন মুমিনের কর্তব্য হলো সবসময় সভ্য ও শালীন পোশাক পরিধান করা। শয়তানকে খুশি না করে আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করা। লেখক : শিক্ষক ও ইসলামী গবেষক