ভারতে কোনোভাবেই ইউনিফর্ম সিভিল কোড গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দিয়েছেন দেশটির শীর্ষ আলেমরা। তারা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন ইসলামে হস্তক্ষেপের শামিল। আলেমরা বিজেপি সরকারের নেয়া পরিকল্পনা- ইউনিফর্ম সিভিল কোড তথা ‘অভিন্ন নাগরিক নীতি’র তীব্র বিরোধিতা করেছেন।শনিবার সকালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দে ওসমান নগর ঈদগাহ ময়দানে দেশটির মুসলমানদের সর্ববৃহৎ পুরনো সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের (এম) দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হয়। ওই সম্মেলনের তরফ থেকে আলেমরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে তারা আরো বলেন, ইউনিফর্ম সিভিল কোড-এটি সংবিধানের মূল চেতনা ও ভারতের সংবিধানের দেয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ আলেমদের এই অভিমত দলের প্রস্তাব হিসেবে ঘোষণা করে এবং উপস্থিত শীর্ষ আলেমরাও তা মেনে নেন এবং তারা দাবি করেন, ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যক্তিগত আইন বাতিলের লক্ষ্যে অভিন্ন নাগরিক নীতি বাস্তবায়নের কথা বলছেন। সম্মেলনের সভাপতি ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সাইয়েদ মাহমুদ আসআদ মাদানি বলেন, দেশে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি এমনটি ঘটে, তাহলে দেশের নিরাপত্তা ও ভ্রাতৃত্ববোধ হুমকির মুখে পড়বে।
অপরদিকে সঙ্কটময় এই মুহূর্তে গোটা ভারতীয় মুসলিমদের ঐক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন সম্মেলনের অতিথি জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের (এ) সভাপতি আওলাদে রাসূল সা: মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানি। বৃহৎ ঐক্যের প্রয়োজনে ভবিষ্যতে দুই জমিয়ত এক হতে পারে বলে স্পষ্টভাবে জানান এই শীর্ষ মুসলিম নেতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দুই জমিয়ত এক হয়ে যেতে পারে। শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশনে তিনি বলেন, ‘আমরা দুজনে (অন্যজন মাওলানা মাহমুদ মাদানি) একে অন্যকে সদরে জমিয়ত (জমিয়ত-সভাপতি) আখ্যায়িত করছি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, হয়তো খুব শিগগির-ই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। শনিবারে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে গোটা ভারতের অন্তত পাঁচ হাজার শীর্ষ আলেম উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম।
জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সাইয়েদ মাহমুদ আসআদ মাদানির সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে বিশ্বখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানি, আসাম রাজ্যের জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও ধুবড়ি লোকসভার সদস্য মাওলানা বদরুদ্দিন আজমলসহ অসংখ্য খ্যাতিমান ওলামায়ে কেরাম ও মুসলিম নেতা উপস্থিত হন। একইসাথে এখানে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন মুসলিম পারসোনাল ল’ বোর্ড, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডসহ ভারতের বৃহৎ বৃহৎ মুসলিম সংগঠনের নেতারা। সম্মেলনে জ্ঞানবাপী মসজিদ, মাথুরা ঈদগাহের শাহি মসজিদ, দিল্লীর কুতুব মিনারসহ ভারতে মুসলিমদের অন্যান্য চলমান সঙ্কট বিষয়ে আলেম, বুদ্ধিজীবী ও মুসলিম প্রতিনিধিরা মতবিনিময় করেন। সূত্র : কওমি আওয়াজ ও ইটিভি ভারত