বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা চৌদ্দগ্রামে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ কালিয়ায় কন্যা শিশু দিবস পালিত ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন তারাকান্দায় ১০ গ্রেডে উন্নীতের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কালীগঞ্জে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকদের মানববন্ধন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিলন সম্পাদক পাভেল কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর মানিকগঞ্জে সাড়ে ৪লাখ ছাগলের বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচী শুরু আন্দোলনে নিহত নয়নকে বীরের মর্যাদা দেয়া হবে-দুলু

ভুল লাগেজে দেড় কোটির হীরা-সোনা 

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ জুন, ২০২২

এসআইয়ের বিচক্ষণতায় ছাড়া পেলেন প্রবাসী 

দেড় কোটি টাকার হীরা ও সোনা চোরাচালানের অভিযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন দুবাই প্রবাসী শাহজাহান মিয়া। যেতে হয় কারাগারে। শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে থাকা ব্যাগে এসব হীরা, সোনা পাওয়া গেলেও তার দাবি, জিনিসগুলো তার নয়। কিন্তু দাবির পক্ষে নেই প্রমাণ। চোরাচালানের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শেখ শুরু করেন তদন্ত। অবশেষে তিনিই প্রমাণ করেন, শাহজাহান মিয়া চোরাচালানকারি নন। ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর দুবাই থেকে ঢাকায় আসেন প্রবাসী শাহজাহান মিয়া। এমিরেটস এয়ারলাইনের ইকে ৫৮৪ ফ্লাইটে সকাল ১১টার দিকে বিমানবন্দরে অবতরণ করে, কাস্টমসের কাছে ২৩২ গ্রাম ওজনের ২টি স্বর্ণের বারের ঘোষণা দিয়ে শুল্ক পরিশোধ করেন তিনি। তার সঙ্গে ছিল আরও ৯৬ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার। শুল্ক পরিশোধ করে শাহজাহান মিয়া গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় তার লাগেজ স্ক্যান করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। সে সময় লাগেজের ভেতরে স্বর্ণের ইমেজ পাওয়া যায়। বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তার ট্রলি ব্যাগ থেকে হীরাসহ অন্যান্য অলঙ্কার বেরিয়ে আসে। যার মধ্যে ছিল বেশ কিছু নেকলেস, আংটি ও চেইন। সবগুলোর ওজন দুই হাজার ২৫৭ দশমিক ১৮৬ গ্রাম। এরপর প্রবাসী শাহজাহান মিয়াকে মিথ্যা ঘোষণা প্রদান করার অভিযোগে আটক করে কাস্টমস। আটককৃত অলংকারের আনুমানিক বাজারমূল্য ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।

পরে ঢাকা কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রিভেন্টিভ) কে এম রেদওয়ানুল ইসলাম বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয় শাহজাহান মিয়াকে। আটকের সময় শাহজাহান জানান, তার সঙ্গে নিজের যে ২টি স্বর্ণের বার আছে সেটাও তার নয়। সেটা রিসিভ করতে বিমানবন্দরের বাইরে লোক আছে। পরে সেই ব্যক্তিকেও আটক করা হয়। তার নাম জিহাদুল ইসলাম। কাস্টমসের করা এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান বিমানবন্দর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শেখ। আদালতের মাধ্যমে আসামিদের দুদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পান তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে শাহজাহান মিয়া জানান, এসব সোনা-হীরা তার নয়। তার দাবির সূত্র ধরে ক্লু খুঁজতে থাকেন তিনি। আসাদুজ্জামান বলেন, আলামত হিসেবে শাহজাহান মিয়ার ট্রলি ভালো করে চেক করে দেখি। তখন সেখানে একটি ভিএসকে জুয়েলার্স নামের প্রতিষ্ঠানের ইনভয়েস পাই। তাতে কিছু লেখা ছিল না।
আসাদুজ্জামান শেখ বলেন, তখন আমি ইনভয়েসে থাকা ইমেইল অ্যাড্রেসে পরিচয় গোপন রেখে ইমেইল করি। তাদের জানাই, দুবাই বিমানবন্দরে একটি ট্রলিব্যাগ পেয়েছি, যাতে অলংকার আছে এবং সেগুলো ফেরত দিতে চাই। ফিরতি মেইল পেলাম। সেখানে ভিএসকে জুয়েলার্স মালিক পরিচয়ে বিশঙ্ক সঞ্জয় কোঠারি নামের এক ব্যক্তি উত্তর দেন। তিনি মেইলে জানান, তিনি ও তার সহকর্মী দুবাই থেকে বাহরাইন যাওয়ার সময় দুবাই বিমানবন্দরে তাদের গয়নাসহ হ্যান্ড ল্যাগেজ হারিয়ে ফেলেন। যেসব অলংকার ছিল সেগুলো দুবাই কাস্টমসে ঘোষণাকৃত এবং ট্রলিব্যাগ হারানোর পরে তিনি দুবাই পুলিশের কাছে অভিযোগও করেছেন। মেইলের জবাব পাওয়ার পর আসাদুজ্জামান শেখ বুঝতে পারেন শাহজাহানের দাবি সত্য হতেও পারে। এরপর তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উত্তরা জোনের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন এবং সেই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন।
সাব-ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান বলেন, পরে বিশঙ্ক নামের ওই ব্যক্তিকে পরিচয় দিয়ে বিস্তারিত জানাই। তাকে কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলি। জানা গেছে, ভিএসকে জুয়েলার্স-এর মালিক বিশঙ্ক কোঠারি দুবাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল বরাবর চিঠি দেন। এরপর দুবাই কনসুলেটের ফার্স্ট সেক্রেটারি মনোয়ার ফোন করে বিস্তারিত জানতে চান। সেই সঙ্গে দুবাই থেকে কূটনৈতিক অ্যাফেয়ার্সের পুলিশ অফিসার ক্যাপ্টেন বাদের আল যাফিনও এসআই আসাদুজ্জামানকে ফোন করে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নেন। এ ঘটনায় দুবাই থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে বিমানবন্দর থানায় যোগাযোগ করে মামলার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। দুবাইয়ের ঘটনার বিষয়েও অবহিত করা হয়।
সাব-ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান শেখ বলেন, পরে আমাকেও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দফতরে চিঠি যায়। সার্বিকভাবে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। দুবাই বিমানবন্দরে একই রকম লাগেজ হওয়ায় প্রবাসী শাহজাহান ও ভিএসকে জুয়েলার্সের মালিকের লাগেজ অদলবদল হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছি। ইতোমধ্যে আটক প্রবাসী শাহজাহানসহ দুই ব্যক্তি মুক্ত হয়েছেন। শাহজাহান মিয়া বলেন, বিমানবন্দরে আটক হওয়ার পর থেকে বারবার বলেছিলাম, এসব আমার না। কেউ প্রথমে বিশ্বাস করেনি। পরিবারের কাছেও যেতে পারিনি। অনেক দিন জেলে থাকতে হয়েছে। সাব-ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান সাহেব যদি আমার কথা বিশ্বাস না করতেন, তাহলে হয়তো এই চোরাচালানের দায় নিয়ে এখনও জেলেই থাকতে হতো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com