সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শনিবার রাতের বিস্ফোরণের পর পুড়ে যাওয়া কনটেইনারগুলোর ভেতর কোনও লাশ আছে কিনা তা খুঁজে দেখছেন সার্ভিসের সদস্যরা। একই সঙ্গে তারা আগুনে উত্তপ্ত কনটেইনার ঠান্ডা ও ডাম্পিং করার কাজ করছেন। গতকাল বুধবার (৮ জুন) দুপুরে ওই কনটেইনার ডিপোতে এই দৃশ্য দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন লাশ খোঁজার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে তাদের ছয়টি ইউনিটের ৪২ জন সদস্য আগুন নেভানোর কাজ করেছেন। এখন তাদের আরও কয়েক সদস্য এ কাজে যুক্ত হবেন। কনটেইনার যত দ্রুত স্তূপ থেকে নামিয়ে আনা যাবে, তত দ্রুত তাদের পক্ষে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’ ক্রেন বাড়ানো হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের চারটি ক্রেন ছিল। তার মধ্যে তিনটি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে ক্রেন দিয়ে তারা এখন কাজ করছেন, সেটিও পুরনো। কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে ক্রেন বাড়ানোর জন্য।’ দুপুর ২টার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানি ছিটিয়ে কনটেইনার ঠান্ডা করার কাজ করছেন। একটিমাত্র ক্রেন দিয়ে স্তূপ থেকে কনটেইনার নামানোর কাজ করছেন একজন ক্রেন অপারেটর। এ ছাড়া ডিপোর কয়েকজন শ্রমিক ও স্বেচ্ছাসেবী ভেতরে কাজ করছেন। বাইরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা অবস্থান করছেন। শ্রমিকরা ঠান্ডা করা কনটেইনারের ভেতরে থাকা প্যাকেটগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন। কনটেইনারের স্তূপ থেকে ক্রেন দিয়ে একটি একটি করে কনটেইনার নামিয়ে আনা হচ্ছে। এরপর সেটির দরজা খুলে আগুন নেভানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। তবে একটিমাত্র ক্রেন দিয়ে কাজ করার কারণে কনটেইনার নামাতে সময় লাগছে। এতে কনটেইনার ঠান্ডা করা ও ডাম্পিংয়ের কাজেও সময় লেগে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানিয়েছেন, এখনও ২০টির মতো কনটেইনার ঠান্ডা ও ডাম্পিং করার কাজ বাকি আছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় মাত্র চারটি কনটেইনার নামিয়ে এনে ভেতরে তুষের মতো জ্বলতে থাকা আগুন নেভানো গেছে। এরপর পুরোপুরি ঠান্ডা হলে কনটেইনারগুলো ডাম্পিং করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ডের আগুনে পুড়েছে ২৬০ কোটি টাকার পোশাক: সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আটটি ব্র্যান্ডের পোশাক। এতে প্রায় দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার অর্থাৎ প্রায় ২৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্র্যান্ডগুলো ৮০টি কারখানা থেকে এসব পোশাক সরবরাহ করেছিল। ব্র্যান্ডগুলো হলো- এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপ, টার্গেট, সিঅ্যান্ডএ, এফ-লজিস্টিকস, ফিট লজিস্টিকস, গ্লোরি ও ডিএইচএল। কারখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষয়ক্ষতির এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে পোশাক উৎপাদক ও রফতানি সংগঠন বিজিএমইএ। মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র চট্টগ্রাম অ লের ভাইস প্রেসিডেন্ট রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, পোশাক সরবরাহকারী কারখানাগুলোর তথ্যের ভিত্তিতে আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। কারখানার দেওয়া তথ্যের সঙ্গে কাস্টমস এবং শিপিং লাইনগুলোর তথ্য মিলিয়ে ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব করার চেষ্টা করেছি আমরা। ডিপোতে অক্ষত অবস্থায় ৬০টি কনটেইনার পেয়েছি। এগুলোতে পোশাক পণ্য রয়েছে। এসব পণ্যে আগুন লাগেনি। এগুলো রফতানিতে কোনও বাধা নেই। অন্য ডিপোর মাধ্যমে পণ্যগুলো জাহাজিকরণে ক্রেতাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। যাতে ক্রেতারা কম ক্ষতিগ্রস্ত হন। তিনি বলেন, রফতানি চুক্তি অনুযায়ী পণ্য বুঝে পাওয়ার পর সব দায়দায়িত্ব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের। রফতানির অপেক্ষায় থাকা বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনে পুড়ে নষ্ট হওয়া সব পণ্য ক্রেতার প্রতিনিধিরা বুঝে নিয়েছেন। সে হিসেবে ক্রেতারা দর পরিশোধ করবেন। ক্রেতারা বীমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাবেন। ইতোমধ্যে সুইডেনভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএমের পক্ষ থেকে বিনষ্ট পোশাকের মূল্য পরিশোধের কথা জানানো হয়েছে। ডিপোতে থাকা মোট পোশাকের মধ্যে ৫০ শতাংশই ছিল এইচঅ্যান্ডএমের।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের নিয়ম হচ্ছে, ক্রেতারা পণ্য বুঝে নেওয়ার পর সব দায়দায়িত্ব তাদেরই থাকে। তারা যখন কাঁচামাল আমদানি করেন সেখানেও একইভাবে দায়দায়িত্ব নেন। বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ওই দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এইচঅ্যান্ডএম। তারা যখন মূল্য পরিশোধের ঘোষণা দিয়েছে তখন বাকিরা নিয়মের ব্যত্যয় করবেন বলে মনে হয় না। কারণ, বাকিদের পণ্য খুব বেশি বিনষ্ট হয়নি। তাছাড়া বীমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা তো আছেই। পোশাক ব্র্যান্ড জি স্টারের কান্ট্রি ম্যানেজার সাফিউর রহমান বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকা-ের জন্য বাংলাদেশের পোশাক বাণিজ্যে কোনও ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর বাস্তবতা সারা বিশ্বের সংশ্লিষ্টদের কারও অজানা নয়। কাজেই এ ঘটনায় তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পোশাকবোঝাই ৬০টি কনটেইনার অক্ষত আছে। কনটেইনারের ভেতরে পোশাক পণ্যেরও কোনও ক্ষতি হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এগুলো রফতানি করা যাবে।