বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা চৌদ্দগ্রামে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ কালিয়ায় কন্যা শিশু দিবস পালিত ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন তারাকান্দায় ১০ গ্রেডে উন্নীতের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কালীগঞ্জে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকদের মানববন্ধন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিলন সম্পাদক পাভেল কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর মানিকগঞ্জে সাড়ে ৪লাখ ছাগলের বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচী শুরু আন্দোলনে নিহত নয়নকে বীরের মর্যাদা দেয়া হবে-দুলু

বাজেট: জনগণের ভাগ্যের চাকা এবার ঘুরবে কি?

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২

বছর যায় বাজেট আসে। জনগণের ভাগ্যের চাকা ঘুরে না। এবার ঘুরবে কি? না এবারও এমন আশা করছেন না বিশ্লেষকরা। কারণ দাম বাড়িয়ে ঘাটতি পূরণের কৌশলের কারণে এবার চাপে পড়বে জনগণ। স্বপ্ন পূরণ হবে বাধাগ্রস্ত। গত ৯জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি, দাম সম্বয়য়ের কথাই বলেছেন। ২০৮ পাতার ‘ডাউস’ সাইজের বাজেট বক্তৃতায় ‘মূল্যস্ফীতি’ ও ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধকে দেশের অর্থনীতির প্রধান ‘ভিলেন’ হিসেবে চিহ্নিত করা চেষ্টা করা হয়েছে। দেশে ‘আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতির’ কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি হয়তো অনেকখানি সত্যি। তারপরও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত দুর্বলতাকেও একেবারে ফেলে দেয়া যাবে না। তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ ঈদের পর বাজার থেকে সয়াবিন তেল হাওয়া হয়ে যাওয়া এবং হুটহাট করে তেলের দাম বৃদ্ধি। বাজারে পর্যাপ্ত তেলের মজুদ থাকাও সত্ত্বেও এই পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ বলে চালিয়া যাওয়া যাবে না। আর এখন ভরা বোরো মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধিকে কেউ যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ‘বলি’ হিসেবে চালিয়ে দিতে চান তাহলে বলার কিছু আর থাকে না। কারণ কে না জানে, বর্তমান চালের দামের উল্লস্ফন এককথায় কারসাজি ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতারই প্রতিফলন।
একদিকে মূল্যস্ফীতিকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বলা হচ্ছে- আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের ঘরে বেঁধে রাখা হবে। কিন্তু ঠিক তার বিপরীতেই ঘোষণা দেয়া হলো- জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম সমন্বয় (বাড়ানো) করা হবে। এসবের দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না, বরং বাড়বে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে টেনে সাড়ে ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প করা হয়েছে। কিন্তু আবার বলা হয়েছে, ‘চাহিদা কমিয়ে আনা হবে’। কিন্তু চাহিদা কমলে, ভোগও কমে যাবে, আর ভোগ কমলে বিনিয়োগও হোঁচট খাবে। তা হলে আকাশছোঁয়া প্রবৃদ্ধি কোথা থেকে আসবে। আর বিদ্যুৎ, গ্যাস জ্বালানি দাম বৃদ্ধি করলে ব্যবসায়িরা কী নতুন করে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন? এসব নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ থেকেই যাবে। কারণ উৎপাদন মূল্য বেড়ে গেলে, লাভের আশায় গুড়েবালি। আশানুরূপ মুনাফা না হলে ব্যবসায়িরা বিনিয়োগ কেন এগিয়ে আসবেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একজন ঝানু হিসাববিদ (চার্টার্ড অ্যাকাউটেন্ট) ছিলেন, অঙ্ক মেলানোই ছিল এক সময় তার প্রধান কাজ। অনেক ‘জটিল’ অঙ্কও হয়তো তিনি তার এই সত্তরোর্ধ্ব জীবনে মিটিয়েছেন, হেসেছেন তৃপ্তির হাসি! সেটি ছিল কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির হিসাব। তবে জাতীয় অর্থনীতির হিসাব মেলানো কিন্তু কঠিন! এ ক্ষেত্রে তিনি সেই অঙ্ক মেলাতে পারবেন কিনা নিয়ে মোটা দাগের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ তেল গ্যাস, সার ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে কোনোভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বাড়ানো সম্ভব নয়, বিনিয়োগ। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থানও হবে না। তা হলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির আশা, শুধু আশাই থেকে যাবে বলে মনে হচ্ছে। যদি অন্য কোনো অদৃশ্য কিছু না থাকে!
অর্থমন্ত্রীর সরল স্বীকারোক্তি : করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশে নতুন করে দারিদ্র্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে কর্মহীন বেকার হয়েছেন। দেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো গত দুই বছর ধরে এই বেকার ও দরিদ্র মানুষের পরিসংখ্যানই তুলে ধরেছেন। কিন্তু সরকার তা স্বীকারই করতে চাননি। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেল। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ভাইরাস (করোনা) প্রাদুর্ভাবের কারণে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় এক কোটি ৩১ লাখ দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য আমরা খাবারের ব্যবস্থা করেছি।’ এখানে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে সোয়া এক কোটিরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিল কোভিডের কারণে।
অর্থপাচারকারীদের জন্য সুখবর! : দেশ থেকে অর্থপাচারকারীদের জন্য রীতিমতো সুখবর দেয়া হয়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। কর দিয়ে যে কেউ তাদের পাচারকৃত অর্থ দেশে আনতে পারবেন। এ জন্য তাকে কোনো রূপ প্রশ্নও করতে পারবে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থমন্ত্রী ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থিত কোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবে না।
এ ছাড়া বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি দেশে না আনলে এর ওপর ১৫ শতাংশ, অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ কর বসানোর সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার এমন সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যাবে। এই সুবিধা দেয়ার ফলে দেশে কী পরিমাণ অর্থ ফেরত আসবে সে বিষয়ে কোনো আভাষ দেননি অর্থমন্ত্রী।
সুখবর নেই ব্যক্তিশ্রেণী আয়করদাতাদের : মূল্যস্ফীতির চাপে হাঁফিয়ে ওঠা মধ্যবিত্তদের জন্য বাজেটে তেমন কোনো সুখবর দেননি অর্থমন্ত্রী। করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই অর্থাৎ বার্ষিক তিন লাখ টাকাই বহাল রাখার কথা উল্লেখ করলেন অর্থমন্ত্রী। ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি ওঠে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
দেশে কর ও জিডিপি অনুপাত অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের মতো আশাব্যঞ্জক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশের সোপানে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে এ অনুপাত অনেকাংশে বাড়ানো প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে দেশের করযোগ্য বিপুল জনগোষ্ঠীকে করের আওতায় আনতে পারলে কর আহরণের সক্ষমতা ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতা বৃদ্ধি পাবে।’
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে যেসব প্রস্তাব করেছেন সেগুলো হচ্ছে- কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপন বাধ্যতামূলক। স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, পেনশন ফান্ড, অনুমোদিত সুপারএন্যুয়েশন ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ব্যতীত অন্যান্য ফান্ডের রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভার্সন চালু রয়েছে, তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিধান প্রবর্তন।
এ ছাড়া অন স্পট কর নির্ধারণের বিদ্যমান বিধানকে কেবলমাত্র গ্রোথ সেন্টারসমূহে সীমাবদ্ধ না রেখে সব পর্যায়ে এর প্রয়োগ বিস্তৃত করা হবে। ধারাবাহিক তিন বছর বা ততোধিক সময়ব্যাপী কোনো কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকলে পরিচালকদের নিকট থেকে বকেয়া অবিতর্কিত কর আদায়ের বিধান করা হবে। রাজস্ব দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিধান প্রবর্তন করার কথাও বলা হয় বাজেট বক্তৃতায়। করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ হলেও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত এ আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতার ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ হবে পাঁচ হাজার টাকা।
অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের ন্যূনতম চার হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এসব সিটি ছাড়া অন্যান্য এলাকার করদাতাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম করের পরিমাণ হবে তিন হাজার টাকা। করের আওতা বাড়ানোর মাধ্যমেও অর্থমন্ত্রী সরকারের আয় বাড়াতে চান। এ জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়াতে তিনি ছয়টি ‘আইনি বিধান’ আরোপের প্রস্তাব করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com