মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সরিষাবন ও ছাতক এলাকায় ফের দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। কিন্তু এই ভাঙ্গণ এলাকার ৫শ ফিটের মধ্যেই চলছে অবৈধভাবে নদী হতে বালু উত্তোলন। এতে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। কাটার যন্ত্র দিয়ে পদ্মা নদী হতে বালু উত্তোলন করে বালহেড দিয়ে বিভিন্নস্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক লাখ ফুট বালু দুটি কাটার যন্ত্র দিয়ে উত্তোলন করে দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ওই এলাকায় ভাঙ্গনের তিব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত প্রায় ৭ দিন যাবৎ পদ্মা নদীর ছাতক গ্রাম হইতে অবৈধভাবে এই বালূ উত্তোলন চললেও মানুষ মুখ খুলে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। ভূক্তভোগী পরিবারদের অভিযোগ কেউ মুখ খুললেই তাকে খুণ করে পদ্মায় ভাসিয়ে দেওয়া হবে এমন ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে – সরিষাবন, রাজারচর এলাকার বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে পদ্মা নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মানুষ ভাঙ্গনকবলিত স্থান হতে দ্রুত ঘরবাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছেন। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রচন্ড স্রোতের তিব্রতায় একে একে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর রাস্তাঘাট। জিএ ব্যাগ ভর্তি বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে নদীর পারে তারপরেও ঠেকানো যাচ্ছেনা ভাঙ্গন। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সরিষাবণ, ছাতক, কান্দাপাড়া, পুুর্ব হাসাইল ও তার আশে পাশের এলাকার বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে এ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আরও দেখা যায়, পদ্মা নদীর ছাতক এলাকায় নদী হতে খনন যন্ত্র বসিয়ে মাটি কাটছেন জম জম নামের মাটি খনন যন্ত্র। ওই খনণ যন্ত্রের দায়িত্বে থাকা সোহেল সৈয়াল বলেন, দিঘিরপাড়া গ্রামের মিজান খানের খনন যন্ত্র এটি। তিনি আরো বলেন, কাটার যন্ত্র দিয়ে ঠিকমতো বালু উঠছে না। সারাদিনে মাত্র দুই বালহেড মাটি বিক্রি করছেন। এ সময় খনন যন্ত্রের মাধ্যমে বালহেডে মাটি ভরাট করছিলেন তিনি। নদীর পাশে মাটি নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় করছে আরও ৭ থেকে ৮টি বালহেড। একেকটি বালহেডে ১০/১২ হাজার ফুট বালু বহন করা হয়। এভাবে দিন-রাত্রী বালহেডে তুলে প্রতিদিন লাখ লাখ ফুট বালু এ পদ্মা নদী হতে অবৈধভাবে উত্তোলন করে দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকাবাসী বলেন, মিজান খান, সাবেক কামাড়খাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হালদার, শামীম মোল্লা, কামাল মোল্লা,লোটাস কামাল সহ আরও কয়েক জন বেশ কয়েক বছর যাবৎ পদ্মা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু কাটছে। এ বালু কাটার কারনে প্রতিবছরই আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। ছাতক গ্রামের মো. শাহিন বলেন, এর আগে ৭ বার আমাদের বাড়ি নদীতে ভাঙ্গছে। এবার আবার আমার এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আমিসহ আমার গ্রামের কাদির বেপারী, বাদশা দেওয়ান, মজিবুর দেওয়ান, মোহন খান, মোবারক মুন্সী, মোস্তাফা মিজি, ইব্রাহিমসহ ৮০টি পরিবারের ঘর বাড়ি ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে, কামরখাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হালদারের মুঠোফোন একাধিকবার ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে মিজান খান বালু উত্তলোনের বিষয় অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ওই খনন যন্ত্র তার না। ওই ব্যবসা অন্য কারো। এসময় তাকে বলা হলে, আপনার স্যালোক স্বীকার করেছেন খনন যন্ত্র আপনার। পরে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা তানজিম অন্তরা রোববার বিকেলে বলেন, বালু উত্তলনের বিষয়টি জানতে পেরে আমরা নদীতে গিয়ে ছিলাম। তখন কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।