স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। দ্বিতীয় ধাপের এই বন্যা ১৯৮৮ কিংবা ২০০৪ সালের বন্যার চেয়েও মারাত্মকরূপে আবির্ভূত হয়েছে। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার অবস্থা তেমন ভালো নেই। নেত্রকোনাসহ আরো কিছু এলাকা প্লাবিত। সিলেটে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেন আজাব আর গজবের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কেন আসে এমন দুর্ভোগ? আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমাদের প্রতি যে মুসিবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন (সূরা আশ-শুরা-৩০)। এ থেকে উদ্দেশ্য যদি ঈমানদাররা হয়, তবে অর্থ হবে, তোমাদের কোনো কোনো পাপের কাফফারা সেই বিপদাপদ হয়, যা তোমাদের গুনাহের কারণে তোমাদের ওপর আপতিত হয় এবং কিছু গুনাহ মহান আল্লাহ তো এমনিই ক্ষমা করে দেন। হাদিসে এসেছে- ‘মুমিন যেকোনো কষ্ট এবং দুশ্চিন্তা ও দুঃখের শিকার হয়; এমনকি তার পায়ে কাঁটাও যদি ঢুকে যায়, তাহলে তার ফলে মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন’ (বুখারি)।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের কী করণীয় হচ্ছে আল্লাহর কাছে তাওবা করা, তাঁর কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা, আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। রাসূলুল্লাহ সা:-এর নির্দেশনা- ‘দ্রুততার সাথে আল্লাহ তায়ালার জিকির করো, তাঁর কাছে তাওবা করো’ (বুখারি ও মুসলিম) হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ কামনা করি এবং আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই’ (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)। ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে’ (বুখারি)।
সাহাবায়ে কেরাম ‘বিপদে-মুসিবতে তাঁরা সালাতে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন’ (মিশকাত)। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা: হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন (সূরা বাকারাহ-১৫৩)। হাদিসে এসেছে, মুমিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। তার জন্য আনন্দেও কোনো কিছু হলে, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর ক্ষতিকর কোনো কিছু হলে, সে ধৈর্য ধারণ করে। এই উভয় অবস্থা তার জন্য কল্যাণকর (মুসলিম-২৯৯৯)।
করুণ এই পরিস্থিতিতে বন্যার্তদের পাশে সক্রিয়ভাবে দাঁড়ানো ও প্রয়োজনের আলোকে সাহায্যে এগিয়ে আসা নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব। হজরত জারির ইবনু আবদুল্লাহ রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না, তাকে আল্লাহ তায়ালাও দয়া করেন না (বোখারি ও মুসলিম)। হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা দয়ালুদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন, যারা জমিনে বসবাসকারীদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান থেকে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ তায়ালাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তায়ালাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন (তিরমিজি)। লেখক : সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীন