ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে ইউরোপ-আমেরিকা রাশিয়ার ওপর বিস্তর নিষেধাজ্ঞা-অবরোধ দিয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত চার হাজার ৩৬২টি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ব্যক্তির ওপর তিন হাজার ৯১৫টি বাকি ৪৩৭টি দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের ওপরে। এর আগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান, সে দেশে ৩৬১৬টি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল যা এখনো চলছে। মাত্র তিন মাসে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা সাবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র। তবে মিত্র দেশগুলোর তুলনায় এখনো নিষেধাজ্ঞার তালিকায় পিছিয়ে। এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের ওপর ২৯৩ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে রয়টার্স জানায়, রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমা ও এর ৩২৮ সদস্য এবং ৪৮টি প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়া নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ৪৭৯টি। এখন পর্যন্ত ৫২৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কানাডা। ফ্রান্স নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ৬৯৬টি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো একযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ৭০৫টি। নিষেধাজ্ঞার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য। ক্রেমলিনের ওপর সবচেয়ে বেশি ৮৭৮টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এই তালিকায় রুশ ব্যাংক, ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ধনকুবের কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভের সৎ কন্যাও রয়েছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জনসন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজনদের ওপর অবরোধ দিয়েছেন। অবরোধের আদলে পুতিনের সম্মান ও ব্যক্তিত্বকে খাটো করার জন্য এসব নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। পুতিনের পরিবার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কন্যা ও খুঁজে খুঁজে প্রেমিকাদের ওপর এসব নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে অলিম্পিক পদকজয়ী আলিনা কাবায়েভা, যার কথা বিশ্বে বেশি প্রচারিত হয়নি। এদের বিদেশে ভ্রমণ নিষিদ্ধসহ তাদের সম্পদ জব্দ করার ঘোষণা রয়েছে। পশ্চিমা সরকারগুলো কাবায়েভাকে পুতিনের অন্তত তিন সন্তানের মা বলে চিহ্নিত করেছে। আলিনা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের উপপতœী বা রক্ষিতা হিসেবেও পরিচিত। তাকে ‘সিক্রেট ফার্স্ট লেডি’ নামেও ডাকা হয়। কাবায়েভা রাশিয়ার ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যাংক রোসিয়া গ্রুপের এক-তৃতীয়াংশের মালিক এবং এটি পুতিনের অর্থের ভালো চ্যানেল। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর মনে করে এদের মাধ্যমে পুতিন তার সম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন। যুক্তরাজ্য বলেছে, পুতিনের অভ্যন্তরীণ বৃত্তের সঙ্গে জড়িতদের হাজার হাজার কোটি সম্পদ চিহ্নিত করা হয়েছে। জিমন্যাস্ট কাবায়েভা নতুন নিষেধাজ্ঞার তালিকার শীর্ষে। সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস সত্ত্বেও এই অলিম্পিয়ানকে খুব কমই জনসমক্ষে দেখা গেছে। রাশিয়া ইউক্রেনে যখন বোমা বর্ষণ করছিল, তখন ওই জিমন্যাস্ট তার সন্তানদের সঙ্গে একটি দূরবর্তী রিসোর্টে নিরাপদে বাস করছিলেন। তখন গুজব ছড়ায় যে পুতিন তার পরিবারকে সাইবেরিয়ার নিরাপদ বাংকারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ব্রিটেন বলেছে, এই অবরোধ-নিষেধাজ্ঞায় পুতিনের বিলাসবহুল জীবনযাত্রাকে তুলে ধরার চেষ্ট করা হয়েছে। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাস এ বিষয়ে ১৩ মে গণবিবৃতি দিয়েছেন। পুতিনের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্টের চাচাতো ভাই ইগর পুতিন এবং রুশ ফেডারেশনের সাবেক ফার্স্ট লেডি ও পুতিনের স্ত্রী লুডমিলা ওচেরেতনায়া। ২০১৪ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বিশ্বাস করে যে ওচেরেতনায়া ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর সাথে লাভজনক ব্যবসায়িক সম্পর্ক’ থেকে উপকৃত হচ্ছেন। লুডমিলা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মহিলা ছাড়াছাড়ি হলেও বিরোধ নেই। ক্রেমলিনের নেতার অনুগত সমর্থক ও বন্ধুদের লক্ষ্য করেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে- যাদের অনেকেই সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন পুতিনের বন্ধু আলেকজান্ডার পেখভ। মিখাইল ক্লিশিন, ব্যাংক রোসিয়ার, শীর্ষ নির্বাহী; ভ্লাদিমির কোলবিন, পুতিনের ছোটবেলার বন্ধু এবং ব্যবসায়িক সহযোগী পিটার কোলবিনের ছেলে; এবং ইউরি শামালভ, নিকোলাই শামালভের পুত্র, যাকে ২০১৪ সালে ব্রিটেন নিষিদ্ধ করেছিল। পুতিনের কাছে যারা তাদের সম্পদ ও ক্ষমতার জন্য ঋণী, বর্তমান নিষেধাজ্ঞায় তারা আক্রান্ত হবেন এমনই বললেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাস। বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কাবায়েভাকে কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞার বাইরে রেখেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা তাকে কঠিন শাস্তি থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ভয়ে যে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে আগ্রাসনের অবসানের জন্য আলোচনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে এবং রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, ‘কাবায়েভার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা টেবিলের ওপরেই রয়েছে।’ ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ১,০০০ এরও বেশি ব্যক্তি এবং ১০০টি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুক্তরাজ্যের মতে, যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তাদের মোট বৈশ্বিক মূল্য ১৪২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। জনসন এম১৬ গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, পুতিনের আরো কিছু গোপন বান্ধবী রয়েছেন তাদের তালিকা ও সম্পদের বিবরণ যেন তাড়াতাড়ি তৈরি করা হয়। যুক্তরাজ্য পুতিনকে খোঁচা দেয়ায় মস্কো এবং খোদ যুক্তরাজ্যের ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলো বিশেষ করে মিরর ও সান বরিস জনসনের প্রেম ভালোবাসার গোপন সুড়ঙ্গগুলো উন্মোচন শুরু করেছে। রাশিয়ার স্পুটনিকও রসালো নিবন্ধ ছাপিয়েছে। সেখানে দেখা যায়, বরিস জনসনের অনেক বান্ধবী, অনেক প্রেমিকা। এরা জনসনকে কলেজ জীবন থেকে মৌমাছির মতো জেঁকে বসে আছে। প্রেমের প-িতরা এখন দেখছেন, প্রেমের পাঠে জনসনের কাছে পুতিন একজন নস্যি বালক!
২০০৫ সালে বরিস জনসন, তখন জানতেন না তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন, ঝবাবহঃু-ঞড়ি ঠরৎমরহ বা ৭২ কুমারী নামে। ওই বইয়ের সমালোচনায় বরিস নিজেই বলেছেন যে, তিনি কখনো কখনো নিজেকে নিজের বড় বিপদ মনে করেন। বইতে তিনি যেভাবে মানুষের জীবনকে ব্যাখ্যা করেছেন তা এখানে না বলাই ভালো। তিনি বিবিসিতে বইটি প্রচারের জন্য নিয়ে গেলে তাকে উপস্থাপিকা জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কেন আগুন নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন?’ অনেকে বলে থাকেন, জনসনের কয়টি সন্তান তিনি তা ক্রমান্বয়ে বলতে পারেন না। ক্যারি সাইমন্ডসের গর্ভে যে সন্তান হয় সেটি ১০ না ১১ তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়ে পত্রিকায় গড়ায়। তবে জনসন মহিলা মাহফিলে খুবই জনপ্রিয়। লন্ডনের সবচেয়ে আলোচিত নাটকগুলোর একটির নাম টবি ইয়ং এর ‘হুজ দ্য ড্যাডি?’ যেখানে জনসন সম্পাদক ছিলেন। তার প্রেমিকা মেরিনা হুইলার বলেছেন, বরিস জনসন আসলে একজন নিরীহ ব্যক্তি। তাই তাকে আঘাত করা যায় না। ২০০১ সালে যখন রক্ষণশীল এমপি হয়েছিলেন তখনই ‘দ্য মেইল অন সানডে’ প্রকাশ করে যে, পেটসি বরিস জনসনের দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বরিসের নির্বাচনী এলাকার মহিলারা কখনো জনসনকে দোষ না দিয়ে বরং মহিলাদের দোষ দিতেন। দেখা গেছে, স্টেফানির লম্বা সোনালি কেশগুচ্ছে বরিস ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুখ ঢুকিয়ে রাখতেন। স্টেফানি (২১), লারা লেটিস (২৭), মিলো আর্থার (২৫), ক্যাসিয়া পিচস (২৩), থিওডোর অ্যাপোলো (২১) বরিসের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন প্রেমিকামাত্র। তবে মিডিয়া বিভিন্ন নিবন্ধে উল্লেখ করেছে যে, বরিস জনসনের প্রেমিকার সংখ্যা ‘অগণিত’। উল্লেখ্য, মেরিনার গর্ভে জনসনের চারটি সন্তান রয়েছে। তবে সব নারী এক নয়। বরিসের ফ্লাটের পাশের একজন দ্যা গার্ডিয়ানকে জানায় যে, এক নারী চিৎকার করে জনসনকে বলেছিল, ‘এটি আমার ফ্ল্যাট তোমার নয়, এখনই বেরিয়ে যাও।’ ধাক্কাধাক্কি ও আঘাতের শব্দ হওয়ায় সেখানে পুলিশ এসেছিল। বরিস নিজের দোষ না দেখলেও বিল ক্লিনটনকে মোনিকা লিওনস্কিকের ঘটনার জন্য দায়ী করেছিলেন ও প্রেসের সমালোচনা করেছিলেন। দি গার্ডিয়ান লিড নিউজে লিখেছে, “জনসন কার সাথে ঘুমান সেটি বড় নয় বরং তিনি দেশকে ‘স্ক্রু’ করেন কিনা সেটি বড়।” প্রেমিকা জেনিফার আরিকুরি বলেন, ‘এটি তার চোখ দিয়ে শুরু হয় এবং তার প্রতিটি কাজ আমাদের দেখায় যে তিনি কে।’ মারিয়ার রূপও জনসনকে এক অভাবী মানুষে পরিণত করেছিল। চার পাশে ভ্রমরের মতো মহিলাদের গুঞ্জন থাকা সত্ত্বেও জনসন যেন আরো কাউকে খুঁজে বেড়াতেন। জনসন ১৯৮৭ সালে অক্সফোর্ড বান্ধবী আলেগ্রা মোস্টাইন-ওয়েনকে বিয়ে করেন। তখন তাদের দুজনেরই বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। জনসন বিয়ের দিনটিকে ‘সম্পর্কের সমাপ্তি, শুরু নয়’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। বিয়ের পাঁচ বছর যথেষ্ট ছিল কেননা তখন ট্যাবলয়েড পত্রিকার এক কভার গার্লকে তিনি ‘স্বর্গের পরীর’ সাথে তুলনা করতেন ও অস্থির হয়ে পড়তেন। ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে তারা বিবাহবিচ্ছেদে সম্মত হন এবং মাত্র ১২ দিন পরে জনসন মেরিনা হুইলারকে বিয়ে করেন, যিনি বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন। ব্যারিস্টার মেরিনা এবং জনসনের ১৯৭০-এর দশকে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় স্কুলে দেখা হয়। তখন থেকেই প্রেম ও ডেটিং-এর সূত্রপাত। ৫২ বছর বয়সী সাংবাদিক পেত্রোনেলা ওয়াইটের সাথে চার বছরের সম্পর্ক ছিল, তখন তিনি স্পেকটেটর ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন। জনসন মেরিনাকে ছেড়ে তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হলে পেত্রোনেলার পর্ব শেষ হয়। কিন্তু একই সময়ে তিনি আরেকজন সাংবাদিক, আন্না ফাজাকারলির সাথেও ডেটিং করতেন। ৪৭ বছরের আর্টস কনসালট্যান্ট হেলেন ম্যাকিনটারের গর্ভে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী জনসনের পঞ্চম, একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। পিতৃত্ব গোপন রাখার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল যখন একজন বিচারক রায় দিয়েছিলেন যে লন্ডনের ‘বেপরোয়া’ মেয়র শিশুটির বাবা ছিলেন তা জানার অধিকার জনসাধারণের রয়েছে। একসময় টোরি নেতা জনসনকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন এবং হাওয়ার্ড তাকে বরখাস্ত করেছিলেন। পেত্রোনেলা বলতেন, জনসন একজন ‘নিঃসঙ্গ’ মানুষ। তাকে সঙ্গ দেয়া উচিত। জনসন তার পুরুষ বন্ধুদের বলতেন, ‘একজন নারীর মধ্যে আমাদের সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।’ তিনি আরো বলতেন, ‘অনেক নিঃসঙ্গের মতো, তাকেও পছন্দ করার ক্ষতিপূরণের প্রয়োজন রয়েছে।’ অক্সফোর্ডে থাকাকালে জনসন ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন উপনদী সহ-সম্পাদনা করেছিলেন, এরপর দ্য টাইমসে প্রশিক্ষণার্থী হওয়ার জন্য পারিবারিক সংযোগগুলো ব্যবহার করেছিলেন। জনসন রক্ষণশীল পাবলিক রিলেশন গুরু ক্যারি সাইমন্ডস-এর সাথেও জড়িয়ে পড়েন তবে সেটি বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। জনসন তার গডফাদার, ইতিহাসবিদ স্যার কলিন লুকাসের কাছ থেকে একটি উদ্ধৃতি আবিষ্কার করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন এবং সম্পাদক চার্লি উইলসন তাকে বরখাস্ত করেছিলেন। তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফের লেখক হিসাবে আরো সফল ছিলেন এবং ১৯৮৯ সাল থেকে পাঁচ বছরের জন্য ব্রাসেলস সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। টোরি গ্র্যান্ডি এবং ইইউ উৎসাহী লর্ড প্যাটেন তাকে ‘ভুয়া সাংবাদিকতার সেরা প্রকাশক’ বলে ডাকতেন। টেলিগ্রাফের সম্পাদক স্যার ম্যাক্স হেস্টিংস জনসনের যুদ্ধ সাংবাদিক হওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তার পরিবর্তে জনসনকে রাজনৈতিক কলামিস্ট হিসাবে গড়ে তোলেন। এই অভিজ্ঞতা এখন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে খুব কাজে লাগছে। তবে, ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত কলামিস্ট হিসাবে পাঁচ বছরে জনাব জনসন আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করেছিলেন যা তখন থেকেই তাকে তাড়া করে চলেছে।
বিবিসি জানায়, বর্তমানে, ২০২০ ও ২১ সালে কোভিড লকডাউনের সময় বিধিনিষেধ ভেঙে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অফিসে পার্টি করার ঘটনা নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর পদত্যাগের প্রচ- চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভোটে তিনি উতরে গিয়েছেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাড়িতে রাতভর ড্রিঙ্কিং পার্টি হয়েছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এমন আচরণ অনেককে ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত করেছে। পার্টির বেশির ভাগই ছিল ডাউনিং স্ট্রিটের কর্মকর্তাদের বিদায়, অথবা কাজের শেষে একসাথে বসে গলা ভেজানো, আর একটি ছিল প্রধানমন্ত্রী জনসনের জন্মদিন পালন। এগুলো পার্টিগেট কেলেঙ্কারি নামে পরিচিতি পেয়েছে। এসব পার্টিতে ৩০ জনেরও বেশি লোকের সমাগম হয়, কোনো সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। পার্টিতে বিপুল পরিমাণ মদ পান করা হয়, এত রাত পর্যন্ত পার্টি চলে যে অনেকে ডাউনিং স্ট্রিটেই রাত কাটায়, যা ব্রিটিশরা পছন্দ করেনি। ২০২০ সালের মে মাস থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে মোট ১৬টি পার্টি হয়, এর মধ্যে ১২টি পুলিশ তদন্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি প্রমাণে অনেক ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ জনসনের শতাধিক কর্মকর্তাকে জরিমানাও করেছে। বিরোধী দল লেবার পার্টি বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর উচিত ব্যাগ গুছিয়ে বিদায় নেয়া। কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের উদ্দেশে তারা বলেন, জনসনের খেলা শেষ হয়ে গেছে। বিধি-নিষেধ ভঙ্গ করে পার্টি করায় নাগরিকদের কাছে পরে পার্লামেন্টে ক্ষমা চেয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ব্রিটিশ পুলিশ তাকে ৫০ পাউন্ড জরিমানাও করেছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এমন শাস্তির মুখে পড়া প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। পুতিনের ওপর রসালো নিষেধাজ্ঞা জারি করার মাসুল ইতোমধ্যে গুনতে শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। ইউক্রেনে যুদ্ধরত দুই ব্রিটিশ কমান্ডোকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন পুতিন। নিউ স্টেটসম্যান ব্রিটেনকে ‘ইউরোপের অসুস্থ দেশ’ নামে রিপোর্ট ছাপিয়েছে। মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধির একটি চার্টে যুক্তরাজ্য অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাজ্যে এই বছর এবং পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্য ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বাড়তে পারে, যা গ্রুপ অব সেভেনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞ ফিলিপ অ্যালড্রিক বলেন, ‘যখন সমস্যা হয়, তখন যুক্তরাজ্য দ্বিধায় পড়ে। কারণ, অন্যদের তুলনায়, এর অর্থনীতিতে স্থিতিস্থাপকতার অভাব রয়েছে।’ জনসনকে নানা দিক দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বেষ্টনী দিচ্ছেন। ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান স্যার হাওয়ার্ড ডেভিস বলেছেন যে, তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন। তার মতে, ‘ব্রেক্সিট একটি উল্লেখযোগ্য ভুল’। ‘লন্ডন প্রচুর ট্যাক্স দিচ্ছে, সময় বলে দেবে যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিটের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ ব্রেক্সিটের কারণেই আয়ারল্যান্ড স্বায়ত্তশাসন চাইছে, যা মোকাবেলা করা জনসন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় বলে সব পক্ষ মনে করেন। যুক্তরাজ্যের এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে মস্কোর সেনা কমান্ডাররা দারুণ খেপেছেন। তারা মনে করেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ কোনো একসময় শেষ হবে। তখন যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধেই রাশিয়ার প্রথম বদলা নেয়া দরকার। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার