শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১০ অপরাহ্ন

সেতু ঘিরে গণপরিবহন পরিকল্পনা

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি সড়ক সংযোগে যুক্ত হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অচিরেই যুক্ত হবে রেল সংযোগও। সন্দেহ নেই যে এই পদ্মা করিডর জাতীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর সর্বোচ্চ সুফল পাওয়ার জন্য দেশের সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থায় অনেক নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। ইতিমধ্যেই গ্রহণ করা পরিকল্পনাগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলার এই সরাসরি সংযোগ এমন একটা নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে যা, দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কারের এক সুবর্ণ সুযোগ সামনে নিয়ে এসেছে। সেটা যেমন রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তেমনি ওই একুশ জেলার মধ্যে স্থানীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রেও। ফলে এখনই সময় রাজধানী ঢাকা এবং দেশে সমন্বিত গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার।
রাজধানী ঢাকার অভ্যন্তরে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ কমানোর জন্য যেমন উপরোক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা দরকার তেমনি দক্ষিণ-পশ্চিমের একুশ জেলার জন্য নতুন গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা দরকার। এক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছে পদ্মা সেতু। একদম নতুন এই করিডরের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলাকে নিয়েই দেশের প্রথম আন্তঃজেলা সমন্বিত বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করার চেষ্টা চালানো যেতে পারে। বিআরটিসিসহ সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণে যৌথভাবে এই বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালুর উদ্যোগ নিলে বর্তমান পরিবহন মালিকরাও সেখানে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু এমন কোনো পরিকল্পিত পথে না গিয়ে বেসরকারি পরিবহন মালিকদের নিজেদের ইচ্ছে মতো বিভিন্ন রুটে নতুন-পুরনো বাস সার্ভিস চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ অব্যাহত রেখে দিলে সেতুর কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাবে না। কেননা, বিপুল সংখ্যক মালিকের বিপুল সংখ্যক পরিবহন একই করিডরে বাস পরিচালনা করলে সেখানে প্রতিযোগিতা আর বিশৃঙ্খলা না হওয়ার কোনো কারণ নেই। একইসঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার দক্ষিণ-পশ্চিমের একুশ জেলার জেলা সদর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর-পৌরসভাগুলোকে পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত করার নতুন সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরির। আর সেটা করতে হবে ওই অঞ্চলের আগামী অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে। পদ্মা সেতু আজ সুযোগ করে দিয়েছে গণপরিবহন ব্যবস্থা সংস্কারের মধ্য দিয়ে দেশকে জাতীয় যোগাযোগব্যবস্থার নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার। এই সুযোগ হাতছাড়া করলে আমাদের আবারও পুরনো আফসোসই করতে হবে। কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমের একুশ জেলাই নয়, পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে গেল মোংলা ও পায়রা বন্দরও। এ কারণে রাজধানী ঢাকায় বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দিতে সরকার নানামুখী পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে সাভার থেকে কেরানীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালসড়ক এবং ঢাকা মহানগর ঘিরে বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার একটি কার্যকর বাইবাস ব্যবস্থা চালু হবে। সমস্যা থেকে যাচ্ছে ঢাকা মহানগরের ভেতরে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল নিয়ে। শোনা যাচ্ছে সরকার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ঢাকার আশপাশে নতুন জায়গা খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা বাস টার্মিনাল বললেও আসলে এগুলো একইসঙ্গে বাসের ডিপো বা পার্কিংয়ের জায়গা এবং মেরামতের ওয়ার্কশপ হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় টার্মিনাল ঢাকার বাইরে সরিয়ে নিলেও সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কেননা সেক্ষেত্রে ঢাকায় আসা সব মানুষকেই ছোট ছোট পরিবহন নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে এবং এর মধ্য দিয়েও ঢাকা মহানগরে আরও যানজটের সৃষ্টি হবে। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় অগণিত কোম্পানির ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিবহনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে গুটিকয়েক বড় কোম্পানির বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করাই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। বিশে^র সব উন্নত দেশেই এই নীতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। আবার ঢাকা মহানগরে পণ্যপরিবহনকারী ট্রাক-লরির ডিপো না থাকায় এসব যানবাহন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাই নিয়ম মেনে ট্রাক-লরির ডিপো তৈরি করাও জরুরি।
এছাড়াও,বাংলাদেশ রেলওয়ের কনটেইনার পরিবহন এবং ঢাকাসহ সারা দেশের ইপিজেড ও শিল্পাঞ্চলগুলোর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর বিন্যাস সংস্কার করা জরুরি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এভাবে গণপরিবহন ও পণ্যপরিবহন ব্যবস্থাপনা পাল্টাতে না পারলে নতুন সম্ভাবনার যথাযথ সুফল আমরা পাব না। আমরা আশা করব সরকার এসব বিষয়ে দ্রুত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর মতোই নতুন করে ভাবা প্রয়োজন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পণপরিবহন নিয়েও। কেননা, পদ্মা সেতু মোংলা ও পায়রা বন্দরকে রাজধানী ঢাকার নিকটতম বন্দরে পরিণত করেছে। আবার চট্টগ্রামের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রকল্পও এগিয়ে চলেছে। এছাড়া পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল হচ্ছে। এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় চট্টগ্রামের বন্দরগুচ্ছ এবং পদ্মা করিডরের দুটি বন্দরের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের পণ্যপরিবহন ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার। আশা করি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com