পবিত্র নগরী মক্কা ও কাবা ঘরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা মুমিনের ঈমানের সৌন্দর্য। শরিয়ত মক্কা নগরীতে অবস্থানের সময় কিছু আদব ও শিষ্টাচার রক্ষার নির্দেশ ও নির্দেশনা দিয়েছে। ইমাম বুখারি (রহ.) সহিহ বুখারিতে ‘মক্কা প্রবেশের আগে গোসল’ শীর্ষক একটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন মক্কায় আসতেন, তখন জি-তুওয়া নামক স্থানে রাত যাপন করতেন।
ভোরে গোসল করতেন এবং সেখান ফজরের নামাজ আদায় করতেন। এরপর মক্কায় প্রবেশ করতেন। তিনি বলতেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমলও অনুরূপ ছিল। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। অবশ্য জেদ্দা থেকে গোসল করে এলেও মক্কা প্রবেশের সময় গোসল করার সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। (আহকামুল হজ ওয়াল ওমরাহ)
ইসলাম মক্কা নগরীর একটি নির্ধারত অঞ্চলকে হারাম বা পবিত্র ঘোষণা করেছে এই নগরীর সম্মানে। হেরেমের ভেতর শিকার করা, এমনকি শিকারিকে শিকারের ব্যাপারে পথ প্রদর্শন বা কোনো রকম সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম। অবশ্য ইসলামপূর্ব সময় থেকেই হেরেম নিরাপদ ও সম্মানিত স্থান হিসেবেই গণ্য হয়ে আসছে। যুদ্ধরত আরব গোত্রগুলো জাহেলি যুগেও হেরেমের সম্মান রক্ষা করে চলত। চরম শত্রুকেও নাগালের মধ্যে পেয়েও তারা তাকে হত্যা করত না, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করত না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে বলেন, কিয়ামত পর্যন্ত এটা আল্লাহ প্রদত্ত সম্মানের ভিত্তিতে সম্মানিত। সুতরাং হারাম এলাকায় কাঁটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং তার শিকার জন্তুকে হাঁকানো হবে না। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) হিদায়া গ্রন্থকার লেখেন, যখন বাইতুল্লাহ নজরে আসবে, তখন ‘আল্লাহু আকবার’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ উচ্চারণ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এই সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতেন।
বাবুস সালাম দিয়ে মসজিদে হারামে প্রবেশ করা উত্তম। মসজিদুল হারাম দেখার সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই হাত ওপরে তুলে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! এই ঘরের মান-মর্যাদা, সম্ভ্রম বৃদ্ধি করুন এবং যারা এই ঘরে হজ বা ওমরাহ করে তাদের মান-মর্যাদা, সম্ভ্রমও বৃদ্ধি করুন। ’ (হিদায়ার পার্শ্বটীকা) পবিত্র কাবার দরজায় প্রবেশের সময় ডান পা প্রথমে রাখবে এবং দরুদ পাঠ করবে। এভাবে দোয়া করবে—‘হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন এবং জীবিকার দরজাগুলো আমার জন্য সহজ করে দিন। ’ মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কাজ হলো তাওয়াফ করা। এখানে ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ নফল নামাজ পড়তে হবে না। (আহকামুল হজ ওয়াল ওমরাহ) লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা