ক’দিন বাদেই ঈদ। ঈদকে ঘিরে নাট্যাঙ্গনে শিল্পীদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। এরইমধ্যে অনেকেই কাজ শেষ করে বিরতিতে গিয়েছেন আবার অনেকেই কাজ করবেন চাঁদরাত পর্যন্ত। দর্শকরাও মুখিয়ে থাকেন তার প্রিয় তারকার নতুন কাজ দেখার জন্য। নাট্যাঙ্গনের মধ্যমণি মেহজাবীন চৌধুরী ইতিমধ্যেই তাঁর কাজ শেষ করেছেন। পারিবারিক ব্যস্ততা ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য এবার খুব বেশি কাজ করতে পারেন নি। দর্শকদের জন্য এবারের ঈদ উপহার হিসেবে থাকছে তাঁর অভিনীত ৭টি নাটক। ঈদের কাজ এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা হয় সময়ের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন এ অভিনেত্রীর সঙ্গে। সেই আলাপচারিতার চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো…
এবার ঈদের কাজগুলো প্রসঙ্গে জানতে চাই…? খুব বেশি কাজ করতে পারিনি এবার। প্রথম থেকেই পরিকল্পনা ছিলো যে, এবার কাজ একটু কম করবো। দেশে ফেরার পর হাতে কিন্তু তেমন সময়ও ছিলো না অনেক কাজ করার। যেটুকু সময় পেয়েছি তারমধ্যেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বেছে বেছে কয়েকটা কাজ করেছি। এরমধ্যে ৬ টা নতুন কাজ, আর একটা পুরনো কাজ; সব মিলিয়ে ৭টার মত নাটক প্রচারিত হবে। অ্যাম্বুলেন্স গার্ল, ব্যবধান, ভয়েজ ক্লিপ, বিভ্রান্তি, অন্ধ প্রেম, হারানো সংবাদ ও নীল জলের কাব্য।
যে কয়েকটা কাজ ভালো মনে হয়েছে শুধু সেগুলোই করেছি। আমি এতটুকুতেই তৃপ্ত। তাছাড়া গত বেশ কয়েকদিন ধরেই আমি একটু অসুস্থ, যার কারণে আরও কাজ করা হয়ে উঠেনি। নাহলে হয়তো আরও এক/দুইটা কাজ করা যেতো। অসুস্থতা নিয়ে কাজ করার প্রেশার নিতে পারতাম না। এখন প্রায় সবারই ভাইরাস জ্বর হচ্ছে, আমারও তাই হয়েছে। কোভিড পরীক্ষা করেছি, রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে কিন্তু তারপরও অসুস্থতা বোধ করছি এখনও।
সংখ্যায় কম হলেও মান কিংবা সার্বিক দিক বিবেচনায় কাজগুলো নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কতটুকু? ঈদ উৎসবে দর্শকরা নতুন কাজ দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি বেছে বেছে ভালো কিছু কাজ করার জন্য। এখন দেখার পর দর্শকরাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা যারা শিল্পী তারা তো দর্শকদের জন্যই কাজ করি। আমার জায়গা থেকে চেষ্টাটুকু ছিল, বাকিটা দর্শকের হাতে।
ওটিটি প্লাটফর্মে রাজকীয় অভিষেক, ‘রেডরাম’, ‘সাবরিনা’ দিয়ে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। আপনার সহশিল্পীদের অনেকেই এই মাধ্যমে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু এই মাধ্যমে আপনার নতুন কোন কাজের খবর পাওয়া যায়নি অনেকদিন…
দুটো কাজ থেকেই দর্শকদের যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি তাতে আমি আনন্দিত। যাদের ব্যাটে-বলে সবকিছু মিলছে তারা হয়তো কাজ করছেন। আমার সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হচ্ছে কিন্তু এখনও জানানোর মত সময় আসে নি। সবকিছু চূড়ান্ত হলে আমি নিজেই সবাই জানাবো।
ওটিটি প্লাটফর্মের কারণে নতুন এই মাধ্যমে শিল্পী-নির্মাতাদের ব্যস্ততা বাড়ছে। টেলিভিশনে নাটকের সংখ্যা কমে আসছে। এতে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে নেগেটিভ প্রভাব পড়ছে না? আমার কাছে এমনটা মনে হয় না। নতুন একটা মাধ্যম এলে সেটা নিয়ে একটু মাতামাতি তো থাকবেই, স্বাভাবিক। যারা এখন ওটিটিতে ব্যস্ত তারা যখন নাটকে ব্যস্ত ছিলেন তখন অনেকেই কিন্তু বলতেন যে, নতুনদেরকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ওটিটি আসার কারণে এই মাধ্যমে হোক বা টেলিভিশনে হোক; দুই জায়গাতেই কিন্তু নতুনদের কাজ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এটা কিন্তু খুব পজেটিভ দিক। সময়টাই তো এখন পরিবর্তনের। পরিবর্তন আসবেই। একটা জায়গার মানুষ আরেক জায়গায় কাজ করবে, সে জায়গায় আবার নতুনরা এসে কাজ করবে। এভাবেই তো পরিবর্তন আসে। এটাকে নেগেটিভভাবে দেখার কিছু নেই। একটা সময় কিন্তু এটাই দাবি ছিল, নতুনদেরকে সুযোগ দেওয়া হোক। এখন তো সবারই কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, কাজ করতে পারছে স্বাচ্ছন্দ্যমতো। এখন সবার কাজ করার সুযোগ বেড়েছে। আমি এটাকে পজেটিভলি দেখছি।
নারীপ্রধান গল্পে কাজের সংখ্যা যেন বাড়ে, এমন কথা প্রায় সময়েই বলেছেন আপনি। এরপর একাধারে কিছু কাজও করেছেন আপনি, হয়েছেন প্রশংসিতও। এখন অনেকেই সেই পথ ধরে হাঁটছেন। এ বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন আপনি? আমি আমার জায়গা থেকে বলার চেষ্টা করেছি এবং নিজেও কিছু গল্পে কাজ করেছি। চেয়েছি আরও অনেক বেশি কাজ হোক। দর্শকরা সেগুলো গ্রহণ করেছেন, ভালোবাসা দিয়েছেন। এখন এরকম গল্পে অনেক কাজ হচ্ছে, এটা খুবই ভালো দিক। ভালো ভালো গল্পে কাজ হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিতে নারীপ্রধান গল্পে কাজের সংখ্যাও বাড়ছে; এটাই তো অনেক বড় পাওয়া। তাতে আমাদের মেয়েরা ভালো গল্পে কাজ করার সুযোগ পাবে, নিজেদের প্রতিভাকে আরও একধাপ বিকশিত করার সুযোগ পাবে; এটা খুবই ভালো। তাছাড়া এই ধরণের গল্পগুলোকে দর্শকরা যদি আরেকটু সাপোর্ট দেয় তাহলে আরও বেশি বেশি কাজ হবে। অন্যান্য মেয়েরাও এই গল্পগুলোতে কাজের সুযোগ পাবে এবং প্রযোজকরাও এ ধরণের কাজ করতে বেশি আগ্রহী হবে। এরমধ্যে আমি কিছু নাটকের পোস্টার দেখেছি, ট্রেলার দেখেছি। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আমি চাই এ ধরনের গল্পে কাজের সংখ্যা আরও বাড়ুক। যারা যারাই এবার এ ধরণের গল্পে কাজ করেছে, তাদের সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
এখন তো সবাই ভিউয়ের দিকেই ঝুঁকছে বেশি। যার কারণে ভিউ পেতে অনেকে নি¤œমানের কন্টেন্ট নির্মাণ করছে। এতে করে আপনারা কোন চাপ অনুভব করেন কিনা? কোন বিষয় নিয়ে মাতামাতি করলেই মাতামাতি হয়। এই সুযোগটাই দেওয়া উচিত নয়। এখন অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে, সবাই যদি ভালো কাজগুলো নিয়ে কথা বলে কিংবা সেগুলোকে সাপোর্ট করে তাহলেই কিন্তু ভালো কাজের সংখ্যা বাড়বে তেমনি ভিউও। এই সমস্যাগুলো নিয়ে শুধু কথা বললেই হবে না, কীভাবে এগুলোর সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এই দায়িত্ব শুধু শিল্পীদের না; পরিচালক, প্রযোজক এমনকি দর্শকেরও। এখানে কম বেশি দায়ভার সবারই আছে। আমাদের সবার জায়গা থেকে আরেকটু সচেতন হলেই এর সমাধান সম্ভব। আর দর্শকদের উচিত সবসময় ভালো কাজগুলোকে সাপোর্ট করা, সেগুলো নিয়ে কথা বলা। মাঝখানে বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন, যেটি নির্মাণ করেছেন আদনান আল রাজীব। কাজটি নিয়ে অভিজ্ঞতা জানতে চাই…
কক্সবাজারে শুট করছিলাম আমরা। বৃষ্টির কারণে একটু ঝামেলা হয়েছিলো তারপরও রান আউট ফিল্মসের পুরো টিম বেশ সুন্দরভাবে গুছিয়ে কাজটি শেষ করেছে। আর বাংলালিংকের সঙ্গে বলা যায় আমি সেই ছোটবেলা থেকেই কাজ করছি। আমি তাদের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আছি এখন। আর আদনান আল রাজীবের সঙ্গেও অনেকদিন পর কাজ হয়েছে। আদনান এবং তার রানআউট ফিল্মস পুরো টিমটাই বেশ গোছানো। নির্মাতা অনেক মেধাবী, যার কারণে কাজ করেও ভালো লাগে। ঈদেই বিজ্ঞাপনটি প্রচারে আসবে।
সবশেষ প্রশ্ন, এবারের ঈদ নিয়ে পরিকল্পনা কি? এখন যে সময়টা পার করছি আমরা, প্রায় সবাই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমার মনে হয় সবারই এই ঈদে একটু বিশ্রামে থাকা উচিত, যেহেতু কম বেশি সবাই অসুস্থ হচ্ছেন। আমার অবস্থাও একই। জ্বর কিছুটা কমলেও শারীরিক দুর্বলতা এখনও কাটেনি। ঢাকাতেই থাকবো, সম্পূর্ণ বিশ্রামে।-বাংলাদেশ জার্নাল