শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

ধীরে ধীরে যেভাবে লুটিয়ে পড়ল রাজাপাকসের সরকার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২

বাসভবনে হামলার পরপরই দ্বীপদেশ শ্রীলংকা ছেড়ে পালালেন দেশটির সমালোচিত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তা-ও গিয়ে উঠলেন আরেক দ্বীপদেশ মালদ্বীপে।
২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি গত কয়েক মাস ধরে যে ভয়াবহ সংকটময় অর্থনীতির ধকল সামলাচ্ছে-সেটা না-সামলানোর মতোই। অর্থনৈতিক ভরাডুবি থেকে উত্তরণ তো দূরে থাকুক, কোমর সোজা করে দাঁড়ানোরও অবস্থা নেই দেশটির।
এ অবস্থায়ই জনবিক্ষোভের কাছে হার মানে পরিবারতন্ত্র। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০ জুলাই। ফিরে দেখা যাক, পতনের শুরু থেকে কীভাবে ধীরে ধীরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল রাজাপাকসের সরকার।
১ এপ্রিল, জরুরি অবস্থা : রাজাপাকসে একটি অস্থায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। বিক্ষোভের পর সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার ও আটক করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়।
৩ এপ্রিল, মন্ত্রিসভার পদত্যাগ : শ্রীলংকার প্রায় সব মন্ত্রী গভীর রাতের এক বৈঠকে পদত্যাগ করেন-যা থেকে গোতাবায়া ও মাহিন্দাকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল।
৫ এপ্রিল প্রেসিডেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো : অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি নিয়োগের একদিন পরেই পদত্যাগ করায় প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের সমস্যা আরও গভীর হয়। সাবেক মিত্ররা তাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানানোয় বিবদমান নেতা তার সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান। তিনি জরুরি অবস্থা তুলে নেন।
১০ এপ্রিল, ওষুধের ঘাটতি : শ্রীলংকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের চরম অভাব দেখা দিয়েছে এবং এই সংকট থেকে উত্তরণ না-ঘটলে করোনাভাইরাসের আক্রমণে বহু লোকের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হয়।
১২ এপ্রিল, বিদেশি ঋণখেলাপি : সরকার ঘোষণা করেছে তারা প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ফুরিয়ে যাওয়ার পর ‘শেষ অবলম্বন’ হিসাবে ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণখেলাপি হচ্ছে।
১৯ এপ্রিল, প্রথম হতাহতের ঘটনা : পুলিশ একজন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে, কয়েক সপ্তাহের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে এটাই প্রথম হতাহতের ঘটনা।
৯ মে, সহিংসতা দিবস : সরকারি অনুগতদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৯ জন নিহত এবং আরও কয়েকশ বিক্ষোভকারী আহত হন। এদিন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে সেনাহেফাজতে জনরোষ থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপরই পদত্যাগ করেন মাহিন্দা, তার স্থলাভিষিক্ত হন রনিল বিক্রমাসিংহে।
১০ মে, গুলি করে হত্যার আদেশ : প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় লুটপাট বা জীবনের ক্ষতি করার সঙ্গে জড়িতদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে আরও বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারি কারফিউ ভাঙতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
১০ জুন, মানবিক জরুরি অবস্থা : জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে শ্রীলংকা একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে এবং লাখ লাখ লোকের জরুরি সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। জাতিসংঘ বলছে, দেশের তীব্র খাদ্য সংকটের কারণে জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশের বেশি তাদের খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। ২৭ জুন, জ্বালানি বিক্রি স্থগিত : সরকার জানিয়েছে, শ্রীলংকায় জ্বালানি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। জরুরি পরিষেবায় ব্যবহারের জন্য জনগণের কাছে পেট্রোল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
১ জুলাই, মুদ্রাস্ফীতির নতুন রেকর্ড : আইএমএফ শ্রীলংকাকে দামের ওপর লাগাম লাগাতে বলার একদিন পর সরকার তথ্য প্রকাশ করেছে যে মুদ্রাস্ফীতি টানা নবম মাসে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
৯ জুলাই, প্রেসিডেন্টের বাড়িতে ঢল : বিক্ষুব্ধ জনতার ঝড় নেমেছিল প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনে। এ সময় সেনাদের সহায়তায় কলম্বোতে পালিয়ে বাঁচেন প্রেসিডেন্ট। এদিন প্রধানমন্ত্রী রলি বিক্রমাসিংহের বাসভবনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংসদের স্পিকার মাহিন্দা আবেবর্ধন একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেছেন, রাজাপকাসে ১৩ জুলাই পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন। এলো সেই ১৩ জুলাই : এদিনও তার পদত্যাগ করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো পদত্যাগপত্র না দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com