পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের উপনির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ২০ আসনের মধ্যে পিটিআই পেয়েছে ১৫ আসন। অপরদিকে পিএমএল-এন দল পেয়েছে মাত্র ৪ আসন। আর এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে গেছে ১টি আসন। এ খবর দিয়েছে দ্য নিউজ। খবরে জানানো হয়, রোববার সারাদিন পাঞ্জাবের ২০টি আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই ২০টি আসনের চারটিই লাহোরে। সাধারণভাবে এ ধরনের নির্বাচন তেমন গুরুত্ব পায় না। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। নির্বাচনের ফলাফল পাঞ্জাবের এবং সেই সঙ্গে পুরো পাকিস্তানের রাজনীতির জন্য ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
বর্তমানে পাঞ্জাবের ক্ষমতায় রয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। এর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শাহবাজ শরীফ।
ক্ষমতায় থাকতে হলে তার দরকার ছিল অন্তত ১০ আসন। অপরদিকে ক্ষমতায় ফিরতে হলে ইমরান খানের পিটিআই’র দরকার ছিল ১৩ আসন। এর আগে হামজা শাহবাজ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন পিটিআইয়ের ২৫ জন এমপিএর সমর্থন নিয়ে। এদের মধ্যে ২০ জন সরাসরি নির্বাচিত সদস্য। বাকি পাঁচজন ছিলেন সংরক্ষিত আসনের। তারা দলীয় নির্দেশ অমান্য করে শাহবাজ শরীফকে ভোট দিয়েছিলেন।
এর আগে রোববার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কয়েকটি পোলিং স্টেশনে ছোট্ট কিছু সংঘর্ষ ও অসঙ্গতি ঘটলেও এদিন সন্ধ্যায় সুষ্ঠুভাবেই ভোট শেষ হয়। করাচি ভিত্তিক গণমাধ্যম ডন জানায়, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই বেসরকারি ফলাফল আসতে শুরু করে। তাতে দেখা যায়, পিটিআই বড় ব্যবধানে জয় পেতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় পিটিআইকে ১৫ আসনে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
এদিকে পাঞ্জাবে ভোটে জয় পাওয়ায় পিটিআইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির সাংবাদিক, রাজনীতিক ও বিশ্লেষকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনে রীতিমতো ভাসছেন ইমরান খান। খ্যাতনামা সাংবাদিক খুররম হুসাইন এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে পাকিস্তানের তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে আবারও সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে ফিরে এসেছেন ইমরান খান। এটা ২০১৮ সালের ২৫ জুলাইয়ের চেয়েও বেশি কিছু। আরেক সাংবাদিক মেহরিন জাহরা মালিক টুইটারে লিখেছেন, এবার আগামী সাধারণ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের জন্য আরও কঠিন হয়ে গেল।
এদিকে পিএমএল-এন নেতারা ইতোমধ্যে নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করেছেন। সেই সঙ্গে পিটিআই’র এ ভূমিধস জয়ে অভিনন্দনও জানাচ্ছেন তারা। পিএমএল-এন ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল খুশি মনে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিচ্ছে। যে কারও জনগণের ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তকে বিনয়ের সঙ্গে মেনে নেয়া উচিৎ। দলের জয়ের পর আবারও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন চেয়ারম্যান ইমরান খান। টুইটারে তিনি বলেন, প্রথমেই আমি আমার পিটিআই নেতা-কর্মী ও ভোটারদের ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ তারা শুধুমাত্র পিএমএল-এনকেই নয়, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকেই পরাজিত করেছেন। বিশেষ করে পুলিশি হয়রানি ও সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনকে জবাব দিয়েছেন তারা। পরে ভিন্ন আরেকটি টুইটে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লেখেন, এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে। সেটি হচ্ছে, একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় দেশ আরও বড় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে।