নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ায় দুস্কৃতিকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে ৫টি পরিবারকে ৫ হাজার করে টাকা এবং দু’টি মন্দিরে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু,ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, নিপূন রায় চৌধুরী, নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ^াস জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক মো: মনিরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ জুলফিকার আলী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক আকরামুজ্জামান মিলু, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মো: আলী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ, লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জি এম নজরুল ইসলাম, সদস্য সচিব কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিম, নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহিদুর রহমান পলাশ, বিএনপি নেতা আবু হায়াত সাবু, জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক সায়াদাত কবির রুবেল, মো: শহীদুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো: ফরিদ বিশ্বাসসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক দিলীপ সাহার বাড়ি পরিদর্শনকালে অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতারা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কাপুরুচিত হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দোষীদের বের করতে হবে এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।কিন্তু এ ঘটনায় উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো হলে প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যাবে। বিএনপি নেতারা দিলীপ সাহার ভাই দীপংকর সাহা ও বৃদ্ধ মা বিজলী সাহার সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে শান্তনা দেন।।দীপংকর সাহা ও তার বিজলী সাহা গত ১৫ জুলাই ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। নিরাপত্তায় বসবাস করাই এখন আমাদের কাছে মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরে তারা অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র পান ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহার বাড়িঘর পরিদর্শন করেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর নেতৃবৃন্দ দিঘলিয়া রাধা গোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি শিবনাথ সাহার সঙ্গে কথা বলেন এবং সমবেদনা জানান।এখানে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বিএনপি প্রতিনিধি দলের নেতারা। খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, এ হামলার ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পেলে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা সবাই বাংলাদেশী। এখানে কোন সম্প্রদায়গত শ্রেণী-বিভাগ না করে এক হয়ে বসবাস করতে পারলে তবেই সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হবে, শান্তি আসবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা হলেও, সেগুলো বিচার না হওয়ায়; একই ঘটনা বারবার ঘটছে। এসব ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী হয়রানি করা হচ্ছে। হামলার সময় পুলিশের নিরব ভূমিকারও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জুলাই লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহা ফেসবুকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তির করায় ওনদিন জুম্মার নামাজের পর থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আকাশ সাহার গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিক্ষুদ্ধ লোকজন একপর্যায়ে সন্ধ্যার পর সাহাপাড়ার ৩টি বাড়ি ও দিঘলিয়া বাজারের দু’টি দোকান ভাংচুর করেন এবং গোবিন্দ সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের ঘরটি পুড়ে যায়। এছাড়া সাহাপাড়ার রাধা গোবিন্দ মন্দিরের চেয়ার ও সাউন্ডবক্স এবং আখড়াবাড়ি মন্দিরের টিনের চালা ভাংচুর ও মহাশ্মশান কালিবাড়ি মন্দিরের ক্ষতি সাধন করে বিক্ষুদ্ধরা। সে সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। সেই থেকে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে ২০০ থেকে ২৫০ অজ্ঞাতনামা আসামি করে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ১০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।