সুখের সংসার গড়ে তোলার জন্য স্বামী-স্ত্রীর যৌথ কিছু দায়িত্ব আছে। এখানে স্বামী-স্ত্রীর কিছু যৌথ কর্তব্য আলোচনা করা হলো: পরস্পরের ভালো গুণ প্রাধান্য দেওয়া : সুখী সংসার গড়ে তোলার জন্য পরস্পরের ভালো গুণগুলো প্রাধান্য দেওয়া স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘…তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা যদি তাদের অপছন্দ করো, তাহলে এমন হতে পারে—আল্লাহ যে বস্তুর মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তা অপছন্দ করছ। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
দ্বিনদার নয়, এমন কাউকে বাড়িতে প্রবেশ করতে না দেওয়া : স্বামী-স্ত্রীর অন্যতম করণীয় হলো, যার দ্বিনদারি সন্তোষজনক নয়, এমন নারী-পুরুষকে বাড়িতে প্রবেশ করতে না দেওয়া। যাতে তারা বাড়িতে প্রবেশ করে কোনো ফিতনা সৃষ্টি করতে না পারে। দ্বিনহীন লোক বিভিন্ন ধরনের ফিতনা-ফ্যাসাদ দ্বারা পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বেলে দেবে। এ ক্ষেত্রে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে। রাসুল (সা.) বলেন, তাদের প্রতি তোমাদের অধিকার এই যে তোমরা যাদের পছন্দ করো না তারা যেন সেসব লোককে দিয়ে তোমাদের বিছানা পদদলিত না করায় এবং যেসব লোককে অপছন্দ করো তাদের বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬৩)
পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা : স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা বজায় রাখা পরিবারে সম্প্রীতি-সদ্ভাব বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। এ জন্য রাসুল (সা.) জাবের (রা.)-কে বলেন, কুমারী নারী (বিবাহ) করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলতে, সেও তোমার সঙ্গে খেলত। তুমি তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাত। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৬৭)
সন্তানদের স্নেহ করা : স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত সন্তানদের আদর-স্নেহ করা। সর্বদা ধমক দেওয়া, রাগারাগি করা, শাসনের সুরে কথা বলা উচিত নয়। বরং সন্তানদের স্নেহ করা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আকরা বিন হাবেস (রা.) দেখলেন যে নবী করিম (সা.) হাসানকে চুম্বন করছেন। তখন তিনি বলেন, আমার ১০টি ছেলে, আমি তাদের কাউকে চুমা দিইনি। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৭)
নিন্দিত স্বভাব প্রতিহত করা : কোনো ব্যক্তি ও পরিবার মিথ্যা বলা, গিবত-তোহমত, চোগলখুরি করা ও অনুরূপ দোষত্রুটি থেকে মুক্ত নয়। এসব থেকে পরিবারের সদস্যদের বিরত রাখার চেষ্টা করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কর্তব্য। আয়েশা (রা.) বলেন, মিথ্যা থেকে বেশি ঘৃণিত চরিত্র রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আর কিছু ছিল না। রাসুল (সা.)-এর সামনে কেউ মিথ্যা বললে তা অবিরত তাঁর মনে থাকত, যে পর্যন্ত না তিনি জানতে পারতেন যে মিথ্যাবাদী তার মিথ্যা কথা থেকে তাওবা করেছে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৩) পরিবারের অসুস্থ সদস্যের প্রতি বিশেষ লক্ষ দেওয়া।
এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষতিকর মুহূর্ত ও অনিষ্টকর জিনিস থেকে রাসুল (সা.) উম্মতকে সাবধান করেছেন। তিনি বলেন, যখন রাত শুরু হয় অথবা (বলেছেন) যখন রাতের অন্ধকার নেমে আসে তখন তোমরা তোমাদের শিশুদের ঘরে আটকে রাখবে। কারণ এ সময় শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর যখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হবে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পারো আর তুমি তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করো (‘বিসমিল্লাহ’ বলো)। তোমাদের ঘরের বাতি নিভিয়ে দাও এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলো। তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ ঢেকে রাখো এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলো। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখো এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলো। সামান্য কিছু হলেও তার ওপর দিয়ে রেখে দাও। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৮০)