শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবেশে নানান বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে,বেড়েছে তাপদাহ। এ অবস্থায় পাটগাছ বেড়ে গেলেও মাটিতে পানির অভাবে রস না থাকায় অপরিপক্ব অবস্থায় পাট কাটতে হচ্ছে। পাটের ফলনও কম। আর জাগের সমস্যা তো আছেই। প্রবল বাতাস কালো মেঘ তাড়া করায় বর্ষণ হচ্ছে না। এদিকে অর্থকরী ফসল পাট নিয়ে দুর্ভাবনা বাড়ছে। পাটচাষিদের বক্তব্য, অল্প পানিতে পাট পচালে আঁশ কালো হয়ে যায়, যার দাম সামান্য। তাই এবার পাট চাষে লোকসানের শঙ্কা কৃষকদের। বাজারে বর্তমানে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। তবে আঁশ ভালো না হলে ও কালো হয়ে গেলে পাটের দাম কমে যেতে পারে। সালথা উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, কয়েক বছরের মধ্যে এবার এই উপজেলায় পাটের চাষ বেশি হয়েছে। প্রায় ৫০০ হেক্টরে পাট চাষ করা হলো বিজেআরআই-৮ প্রজাতির। অন্যান্য জাতের চাষ হয়েছে একই উপজেলাতে ১৩ হাজার ৩৯০ হেক্টর। কর্তৃপক্ষও স্বীকার করে, পানি না থাকায় পাটচাষিরা সমস্যায় পড়ে গেছেন। প্রশাসন বলছে, পানির অভাব হলে রিবন রেটিং ব্যবহার করতে হবে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ‘উপজেলার ৯২ শতাংশ জমিতেই পাট চাষ করা হয়েছে। এটি সংশ্লিষ্ট টার্গেটের চেয়েও বেশি। মাঠপর্যায়ে, পরিস্থিতি এমনিতে ভালো। রোগব্যাধি ও পোকামাকড় দমন, ব্যবস্থাপনাসহ নানা ক্ষেত্রে সরকার থেকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে পাটচাষিদের। তবে প্রাকৃতিক কারণে পানির অভাব হলে কারো হাত থাকে না এ বিষয়ে। পুকুর, ডোবা ভরাট করা না হলে শ্যালো মেশিনে পানি উঠত কিছুটা হলেও। তা না হলে, রিবন রেটিং পন্থা অবলম্বনে সহায়তা করা হবে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের নাটোরেও পানির অভাবে পাট জাগ দিতে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সেখানে একজন কৃষকের অভিযোগ, বিএডিসি খাল খুঁড়তে একাধিক বাঁধ দেয়ায় প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। দু’বাঁধ অপসারণ হলে ১০ গ্রামের তিন হাজার হেক্টর জমিতে পাট পচানো যাবে। কর্তৃপক্ষ মনে করে, অনাবৃষ্টির ফলে পাটের ফলন অনেক হ্রাস পাবে। পানির সঙ্কটে পাঞ্চিং পদ্ধতিতে পাট পচিয়ে আঁশ ছাড়ানো যায়।
এবার পাটের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও দেশের কৃষকরা হতাশ। কারণ পানির অভাব এই ভরা বর্ষায়ও। এ খবর ফরিদপুর অঞ্চলসহ উত্তরবঙ্গের। পানি অপ্রতুল হওয়ায় সোনালি আঁশ পাটের জাগ দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের মতে, এটি বাংলাদেশে জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব। প্রথম দিকে বৃষ্টির পানি পেয়ে অনেক পাটচাষি ভরসা করলেও তারা ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছেন পানির অপর্যাপ্ততায়। অনেকে বর্ষণের আশায় এখনো জাগ দিচ্ছেন না। এ দিকে সোনালি আঁশ পাট নিয়ে সরকারি প্রচারণার অন্ত নেই।
জাতীয় পত্রপত্রিকায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন মোতাবেক, ‘সোনালি আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর’ স্লোগান নিঃসন্দেহে গর্বের; কিন্তু এই মৌসুমি ঋতুতেও অনাবৃষ্টির দরুনই এ আঁশের চাষে বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন, ফরিদপুরের নগরকান্দা-সালথা এলাকায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও পানি যেন পাটচাষের আনন্দ মিইয়ে দিয়েছে। এর পাশাপাশি, পত্রিকার সচিত্র খবর: উত্তরবঙ্গের নাটোরের ‘সোনালির স্বপ্ন পানির অভাবে মলিন’। পত্রিকার প্রতিবেদন- নদীনালা ও খালবিলে তেমন পানি না থাকায় পাট জাগ দেয়া অর্থাৎ পচানো যাচ্ছে না। একই পানিতে বারবার পাট ধুলে বা জাগ দিলে পাটের আঁশ ভালো হয় না। ফলে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা এখন বেকায়দায়। তারা শঙ্কিত; উদ্বিগ্ন, এবার পাটের বাজার জমবে কি না। ফলে পাটের দাম কম হওয়ার দুশ্চিন্তায় তাদের অনেকের ঘুম আসছে না। অপর দিকে ফরিদপুর অঞ্চলের মানুষের জোর দাবি, ফরিদপুর জেলা শহরে টেপাখোলা নামক স্থানের বেড়িবাঁধ খুলে দিলে, স্লুইস গেট দিয়ে পানি ঢুকলে কৃষকরা কিঞ্চিৎ স্বস্তি পেতেন। তখন এ পানি দিয়ে পাটের কিছুটা হলেও জাগ দেয়া সম্ভব হতো। গ্রামাঞ্চলের চাষিরা জানান, আষাঢ় মাসেও বৃষ্টি না হওয়া অস্বাভাবিক। শুধু পাটচাষিরা নয় সবক্ষেত্রে পড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়। আমরা আশা করি, সর্বক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের অশুভ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সরকার আশু ব্যবস্থা নেবে বলে দেশবাসী আশাবাদী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com