রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীতে বালিপাথর লুটতরাজ বন্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ কেশবপুরে বিশ্ব শিশু দিবস পালন ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধন শ্রীপুরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ ভালুকায় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ ঈশ্বরগঞ্জে স্কুলছাত্র রাব্বি হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কালীগঞ্জে এক রাতে ৯ গরু চুরি ভুক্তভোগী খামারীদের আহাজারী কলমাকান্দায় দশম গ্রেডের দাবীতে শিক্ষকদের মানববন্ধন নেত্রকোণা পৌরসভার সড়কে খানাখন্দ দুর্ভোগে পথচারীরা ত্রিশালে শহীদ ও আহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান লামায় চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন

বাগেরহাটে স্ত্রী, সন্তান ও বিধবা বোন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনমজুর বাশারের পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন

মোল্লা আব্দুর রব বাগেরহাট প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

সরকার যেখানে ভূমিহীনদের জমিসহ ঘর দিচ্ছেন,সেখানে ৫০ বছর ধরে থাকা এক ভূমিহীনকে সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। জমি থেকে তারাতে ভূমিহীন আবুল বাশারের টিন-কাঠের তৈরি ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বশত ঘরের মাটি কোদাল দিয়ে কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে মৎস্য ঘেরে।ফেলে দেওয়া হয়েছে, রান্নার সরঞ্জামাদি। পলিথিন দিয়ে কোন মতে শিশু সন্তান ও স্বজনদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।এমনকি জমি উচ্ছেদের জন্য অন্তসত্যা গৃহবধু ও শিশুদেরকে ভয় দেখিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন এমনই অভিযোগ করেছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের পাথুরিয়া কালিবাড়ি এলাকার মৃত আবুল হাশেমের ছেলে ভূমিহীন হতদরিদ্র আবুল বাশার। তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ ভুমিহীন, তাই আমাদের উপর এত অত্যাচার। আমি বাড়ি ছিলাম না, এই সুযোগে আমার মামা ভুমিদস্যু মোশারফ ফরাজী দুস্কৃতি লোকজন নিয়ে এসে আমার ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে। টিন খুলে নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। ঘরের মধ্যে যে মালামাল ছিলো সবই লুটপাট করে নিয়েছে তার লাঠিয়াল বাহিনী। বুধবার ২৭,০৭,২২ তারিখ বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার উপরে টিনের বেড়া ও চাল খোলা।বসত ঘরের উপর বাস, পলিথিন ও খেতা দিয়ে কোন মতে বসবাস করছেন তারা। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। আবুল বাশার বলেন, আমি ভুমিহীন নিজস্ব কোন জমি-জমা না থাকায় আমার বাবা উত্তর জিউধরা মৌজায় থাকা এক একর সরকারি জমি ডিসিআর কেটে ভোগদখল করতেন। আমরা ভাই-বোনরাও বাবার সাথে খেয়ে না খেয়ে ওই বাড়িতে থাকতাম। প্রায় ৫০ বছর ধরে আমরা এই বাড়িতে রয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে ২০০৬ সালে বাবার মৃত্যুর পরে আমার মামা ভুমিদস্যু মোশারফ ফরাজী আমাদের এই জমি ছেড়ে দিতে বলে।আমরা জমি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তিনি বিভিন্ন ভাবে আমাদের হয়রানি করতে শুরু করেন।আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও করেছেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি গোপনে অবৈধভাবে ডিসিআর কেটে আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে।তখন আমরা এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দারস্ত হলে তিনি মৌখিকভাবে আমাদেরকে এই জমি ভোগ দখল করতে বলেন।সেই সাথে জিউধরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে জমির দখল সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল জিউধরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সুমঙ্গল মজুমদার সরজিমন তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দেন। সেই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন আমার বাবা আবুল হাশেমের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী হিসেবে আমার বড় ভাই মোস্তফা শেখ, এছহাক শেখ, সুলথান শেখ, আবুল বাশার শেখ, রিজিয়া বেগম, রওশনারা বেগম, রাশিদা বেগম ওই জমি ভোগ দখলে আছেন। এরপরেও আমার মামা মোশারফ ফরাজী আমাদের বিভিন্নভাবে আমাদের এই জমি দখলের চেষ্টা করেছেন।এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুরে উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন আমাদের কোনো প্রকার অবগত না করে বিনা নোটিশে এসে আমাদেরকে বাড়ি থেকে নেমে যেতে বলে। আমি বাড়ি না থাকায় বাড়ির মহিলা ও শিশুদের সাথে তারা খারাপ ব্যবহার করেন। সরকারি লোকজনের সাথে থাকা মোশারফ ফরাজীর গুন্ডারা আমার বউকে মারধর করে, সেই আমার ৬ ও ৩ বছর বয়সীয় দুই বাচ্চাকে মারাত্মকভাবে ভয় দেখিয়েছে। আমার বসত ঘরের পোতার মাটি কুপিয়ে ফেলে দিয়েছে। ঘরে যা ছিলো সব লুটে নিয়েছে। এখন বউ বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব আমি।আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আবুল বাশার। আমি ভুমিহীন এভাবে তারিয়ে দিলে পরিবার নিয়ে আমি আত্বহত্য করবো।তিনি আরো বলেন, ২৮,০৭,২২ তারিখ সকাল ১০টায় আবারো ভুমিদস্যু মোশারেফ ফরাজীর সন্ত্রাসী বাহিনী এসে আমার বোন রিজিয়া(৭০) ও ভাগ্নে রমজান শিকারী ২ কে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে। তাদেরকে মোড়েলগজ্ঞ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আবুল বাশারের স্ত্রী চম্পা বেগম বলেন, হঠাৎ করে অনেক লোকজন এসে আমাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর সহ ঘরের মালামাল লুটপাঠ করে নিয়ে যায়। মোশারফ ফরাজীর যে লাটিয়ালরা ছিল তারা আমাকে খুভ মেরেছে। পাথুরিয়া কালিবাড়ি এলাকার বৃদ্ধ মোতালেপ খান বলেন, ৫০ বছরের উপরে আবুল হাশেম ও তার সন্তানরা এই জমি ভোগ দখল করতেন।কিন্তু মোশারফ ফরাজী কেন কিভাবে এই জমি দখল করে আমরা জানিনা। সব অত্যাচার গরীবের উপর এই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। শুধু মোতালেপ নয়, স্থানীয় মোঃ হালিম মল্লিক, মোঃ শাহজাহান মোল্লা, মহারাজ হাওলদার, মো: রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বলে আবুল বাশারের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। সকলেই ভুমিদস্যু মোশারেফ ফরাজীর দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চান। মোঃ ইব্রাহীম হাওলাদার নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, এই জমি আবুল বাশারদের।তারাই এই জমির দাবিদার। কিন্তু মোশারফ ফরাজী একজন লুটকারী, ভূমি দস্যু, নিজের ভাগ্নের জমি দখলের জন্যও সে জগন্যতম অন্যায় পথ অভলম্বন করছেন। অভিযুক্ত মোশারফ ফরাজী বলেন, ভাগ্নে হলেও, বাশারের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমি ডিসিআর কেটে জমি নিয়েছি, আমি ওই জমিতে কোনভাবেই বাশারকে থাকতে দিব না। মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই জমি নিয়ে আদালতে একটি মামলা ছিল। মামলায় মোশারফ ফরাজীর অনুকূলে আদালত রায় দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ অণুযায়ী আমরা আবুল বাশারকে ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করেছি। তবে ২৮,০৭,২২ তারিখের লুটপাট ও হামলার বিষয় তিনি অবগত নন। তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com