বিদায় গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনের শহীদ নুরে আলম। পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলমের জানাজা নামাজ ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (০৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টায় নুরে আলমের নিজ বাড়ি ভোলা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড চরনোয়াবাদ খেয়াঘাট সড়ক এলাকায় আলতাজের রহমান কলেজ মাঠে হাজারো মুসুল্লির উপস্থিতিতে জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মরহুমের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ভোলা দারুল হাদিস আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল বাশার আব্দুর রহিম জানাজা নামাজ পরিচালনা করেন। এর আগে নুরে আলমের লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ভোলা শহরের ইলিশা বাসস্ট্যান্ড পৌঁছলে সেখানে আগে থেকে অপেক্ষারত নেতাকর্মীরা মিছিলসহ বিএনপির জেলা কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরে সেখানে দলীয় নেতৃবৃন্দ মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাত সোয়া ৮টায় ঢাকা থেকে ভোলায় এসে পৌঁছে নূরে আলমের লাশ। এ সময় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের শতশত নেতাকর্মী এবং শোকাহত সাধারণ মানুষ নিহত নুরে আলমকে এক নজর দেখতে ও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দলীয় কর্যালয়ের সামনে জড়ো হয়।
জানাজা নামাজে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ভোলা জেলা বিএনপি সভাপতি আলহাজ গোলাম নবী আলমগীর, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য হায়দার আলী লেলিন, কেন্দ্রীয় যুবদল সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা কাজি মোক্তার হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি সাইফ মাহামুদ জুয়েল, জেলা বিএনপির সম্পাদক হারুন অর রশিদ ট্রুম্যান, সিনেমার যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোপানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
জানাজায় অংশ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিমের রক্তে ভোলার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। নুরে আলম দলের জন্য নয়, এই দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশির নির্বিচার গুলিবর্ষণে রক্তাক্ত জখম হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেউ নিরাপদ নয়। সরকারের অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করতে যাবে তাকেই সরকারের বাহিনী পুলিশ গুলি করে নুরে আলম, রহিমের মত হত্যা করবে।
তিনি বলেন, নুরে আলম জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য নিজের জীবন দিয়ে যে ত্যাগ শিকার করেছেন আমরা তা বৃথা যেতে দেব না। গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেব। মেজর হাফিজ আরো বলেন, নুরে আলমের ৫ বছরের কন্যাশিশু তার বাবাকে হারিয়েছে, স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে, মাতাপিতা তার সন্তানকে হারিয়েছে, ভাই তার ভাইকে হারিয়েছে। আজ পুরো পরিবার শোকে শোকাহত। আমরা এই শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি নুরে আলমের শিশুকন্যাকে নিজ হাতে লালন পালন করুন। তার পরিবারকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন। শহীদ নুরে আলমের মাগফেরাত কামনা করছি। প্রসঙ্গত, লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৩১ জুলাই বিক্ষোভ সমাবেশ করে ভোলা জেলা বিএনপি। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত হন। এ ঘটনায় বিএনপির আরো বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে নুরে আলমও ছিলেন। বুধবার (৩ আগস্ট) বিকেলে তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।