বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনারসের পাতার আঁশ থেকে সিল্ক কাপড় তৈরির শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাউজানে পথচারীদের মাঝে যুবলীগের ফলমূল ও ছাতা বিতরণ

পানিতে ডুবে মৃত্যু: সচেতনতাই বাঁচাতে পারে প্রাণ

মামুন হায়দার :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২

পানিতে ডুবে দীর্ঘ হচ্ছে শিশুমৃত্যুর মিছিল! স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হচ্ছে আকাশ-বাতাস। সরকারি-বেসরকারি সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ না থাকায় থামানো যাচ্ছে না এ নীরব মহামারি। জনসংখ্যার অনুপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় বাংলাদেশে। দেশে বছরে সাড়ে ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
পানিতে ডুবে প্রতিটি মৃত্যুই প্রতিরোধযোগ্য বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ। সোমবার (২৫ জুলাই) ‘বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে এক লিখিত বিবৃতিতে সংস্থা দুটি বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ হাজারের বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। ব্যাপকভাবে স্বীকৃত না হলেও দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। ফলে এটি একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তাই দেশে হাজার হাজার শিশুর অকাল মৃত্যু রোধে সচেতনতা বাড়াতে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, কমিউনিটি ও ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ।
অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা ও শিশুর প্রতি মনোযোগ বাড়াতে হবে। জনসচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তা হলেই আমাদের শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। পরিবার ও কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রাক-স্কুলের শিশুদের জন্য শিশু যতœ কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বিনিয়োগ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, সারা বিশ্বে পানিতে ডুবে যাওয়াকে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এবং পানিতে ডুবে প্রতিটি মৃত্যুই যে প্রতিরোধযোগ্য তা তুলে ধরতে ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। পানিতে ডুবে মারা যাওয়া প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তুলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা সময়ের দাবি। শিশুদের সুরক্ষার জন্য দেশব্যাপী একটি প্রকল্প কার্যক্রম হাতে নেওয়া জরুরি। পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করার মতো দুঃখজনক ঘটনা প্রতিরোধে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সোমবার (২৫ জুলাই) বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করে। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. মুস্তাফিজুর রহমান ওই অনুষ্ঠনে জানান, ‘বাংলাদেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩০ জন এবং ১৮ বছরের নিচে ৪০ জন মৃত্যুবরণ করে। এ দুটি পরিসংখ্যানের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তিনি বলেন, এ মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে আমাদের সাফল্য ম্রিয়মাণ হয়ে যেতে পারে।’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০’ থেকে দেখা যায়, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪৪ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া। এরপরই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর স্থান প্রায় ৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সফলতার দিক থেকে ডায়রিয়ায় মৃত্যুরোধে বাংলাদেশ এক নম্বর। গণটিকা দেওয়ার কারণে ডিপথেরিয়া বলতে গেলে একেবারেই নেই। ধনুষ্টংকার এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য এদেশে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি খাতে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধে উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে ১০টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এগুলো হলো-পুকুরের পাড়ে বেড়া দেয়া, শিশুর দিবাযতœ কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং শিশুকে সাঁতার শেখানো। শিশুদের সাঁতার শেখার গুরুত্বের ওপর স্কুলের শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রতিটি মানুষের শারীক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করা প্রয়োজন। সাঁতার একটি উত্তম ব্যায়াম। এ কারণে প্রতিটি মানুষের পানিতে সাঁতার কাটা অত্যন্ত জরুরি। সাঁতারের মাধ্যমে অনেক রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষ মুক্ত থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে তুলে ধরতে পারেন।
একজন মানুষ সাঁতার জানলে কি কি সুবিধা ভোগ করতে পারে এবং সাঁতার না জানলে কি কি অসুবিধার সম্মুক্ষীণ হতে পারে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ফলে মানুষ সাঁতার কাটতে উদ্বুদ্ধ হতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুমৃত্যু কমাতে প্রসূতিদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। এ সময় স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শের সঙ্গে শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করতে হবে। এছাড়া সমাজের প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ডোবা, নালা, পুকুর অথবা নদী আছে। সে সব এলাকার মা, বাবাসহ পরিবারের সব শ্রেণির মানুষদের সচেতন হতে হবে, যাতে কোনো শিশু পানির দিকে যেতে না পারে। প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক কারণে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উচ্চ ঝুঁকির একটি দেশ। দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ৬০ শতাংশ ঘটে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে। তাই এ সময়ে শিশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা গেলে শিশুমৃত্যু অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা ও শিশুর প্রতি মনোযোগ বাড়াতে হবে। জনসচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তা হলেই আমাদের শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। (সংকলিত) লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com