নদীর এ কুল ভাঙ্গে ও কুল গড়ে এই তো নদীর খেল। কবির এই বাণী চির অমর। তারপরেও মুন্সীগঞ্জ গজারিয়ায় মেঘনা নদীর ভাঙাগড়ার খেলায় দিশেহারা উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ভর কালীপুরা গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মেঘনার নদীর ভাঙন। প্রতিদিনই ভাঙছে নদীর পাড়। এতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে কালীপুরা গ্রামের নদীপাড়ের অর্ধশত মানুষের। কেউ কেউ ঘর ও মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। জমিজমা ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। সরজমিন নদীভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীপাড়ের মানুষের চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ। পরিবার-পরিজন নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় কাটছে তাদের দিনরাত। প্রতিটি মুহূর্ত শঙ্কিত থাকতে হয় তাদের। বিক্রি করে দিয়েছেন গাছপালা। চোখের সামনে ভিটাবাড়ি মেঘনায় বিলীন হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। মেঘনার ভাঙনের শিকার হওয়া কালীপুরা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ সরাফত আলী প্রধান দুঃখ ভারাক্রান্ত ভাবে বলেন, আমি দরিদ্র কৃষক। ১০ বছরে বাড়ি সরিয়েছি ৫/৬ বার। এবারও ভাঙনে আমাদের বসতবাড়ি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। দূরে কোথাও নতুন করে বাড়িঘর তোলার সামর্থ নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো রকমভাবে মানবেতর জীবণযাপন করতে হচ্ছে। শুধু সরাফত আলী প্রধান নয়; নদীপাড়ের অগণিত পরিবার একাধিকবার বাড়িঘর সরিয়েও মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও রক্ষা করতে পারছেন না। রাক্ষুসী মেঘনা গিলে খাচ্ছে লোকালয়। তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষগুলো। ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে হলেও তাদেরকে রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কমনা করেন তারা। স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, নদীভাঙনের কবলে এলাকার ৫০থেকে ৬০টি পরিবারের বসতভিটা হুমকির মুখে রয়েছে। ইতিমধ্যে ১০থেকে ১২টি পরিবার ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। ভাঙনের কবল থেকে নদীপাড়ের পরিবার গুলোকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এ ব্যপারে ইমামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুজ্জামান খাঁন জিতু জানান, নদীভাঙন রোধে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গজারিয়া উপজেলার নদী ভাঙ্গন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে আশা করি শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন।