বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ অপরাহ্ন

হাতিরঝিল থানায় তরুণের মৃত্যু: লাশ হস্তান্তরে পুলিশি শর্তের অভিযোগ পরিবারের

সাদেক মাহমুদ পাভেল:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২

রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে মারা যাওয়া তরুণের লাশ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পুলিশ শর্ত দিয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। মারা যাওয়া তরুণ সুমন শেখের (২৫) স্ত্রী জান্নাত আক্তার আজ রোববার দুপুরের দিকে প্রথম আলোর কাছে এ অভিযোগ করেন। গত শনিবার দুপুরে থানাহাজত থেকে সুমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। লাশ বুঝে পেতে পরিবার আজ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়েছিল। কিন্তু তারা পুলিশি শর্তের কারণে লাশ বুঝে পায়নি বলে জানায়।
জান্নাত আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা লাশ বুঝে পেতে মর্গে গিয়েছিলাম। কিন্তু লাশ আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। হাতিরঝিল থানা-পুলিশের এক এসআই আমাদের বলেছেন, গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জে নেওয়া হলে লাশ দেওয়া হবে। আর যদি বর্তমান বসবাসস্থান ঢাকার রামপুরায় নেওয়া হয়, তাহলে লাশ দেওয়া হবে না।’
জান্নাত আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী এভাবে মারা গেল। এখন তার লাশও বুঝে পাচ্ছি না।’ হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি এ বিষয় কথা বলতে পারব না। তবে বৈধ দাবিদারেরা গেলে লাশ তো বুঝে পাওয়ার কথা।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এ রকম তো হওয়ার কথা না। ব্যাপারটা আমি দেখছি।’ জান্নাত আক্তার জানান, তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। সে জন্য ইতিমধ্যে তাঁরা ঢাকার আদালতে গেছেন। তবে যে আইনজীবীর সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করেছিলেন, তিনি এখন ফোন ধরছেন না। পরে লাশ হস্তান্তরে শর্তের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার মরদেহ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের মর্গে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পরিবারের কেউ মরদেহ নিতে আসেননি।
পরিবারের ভাষ্য, সুমন রামপুরায় ইউনিলিভারের পানিবিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পিওরইটয়ের বিপণন অফিসে ছয় বছর ধরে কাজ করতেন। মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পেতেন। গত শুক্রবার রাতে সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পিওরইটের একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের দাবি, সুমন আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবারের অভিযোগ, সুমনকে ধরার পর পুলিশ পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় পুলিশ তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। সুমন শেখ পশ্চিম রামপুরার ঝিলকানন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জের দাড়িকান্দি এলাকায়। সুমনের বাবার নাম পেয়ার আলী। সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী গত শনিবার হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
‘আমার স্বামীকে তারা গ্রেফতার করেছে : হাতিরঝিল থানা হেফাজতে নিহত রোম্মানের স্ত্রী জান্নাত বলেন, ‘আমার স্বামীকে তারা গ্রেফতার করেছে। শুনেছি থানা হেফাজতে আত্মহত্যা করেছে। তাহলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা কী করেছে? এই অবহেলার দায় কারা নেবে?’ তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আসামি হাজতখানায় আত্মহত্যা করেছে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে হাতিরঝিল থানার দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক দরখাস্ত করা হয়েছে। ৩ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।’ রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা থেকে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) চুরির অভিযোগে সুমন শেখ ওরফে রোম্মানকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। গ্রেফতারের পর রাখা হয় হাতিরঝিল থানার হাজতখানায়। সেই হাজতখানায় শনিবার (২০ আগস্ট) ভোরে নিজের ট্রাউজার খুলে গ্রিলে পেঁচিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করে রোম্মান। এ সময় থানায় দায়িত্ব থাকা একজন এসআই ও একজন পুলিশ কনস্টেবলকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে একটি অপমৃত্যুর মামলা।
হাতিরঝিল থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম রামপুরা এলাকায় ওয়াটার পিউরিফায়িং ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রতিষ্ঠানে কাজ করা রোম্মান গত ১৩ আগস্ট রাতে ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে ঢোকে। সারারাত সেখানে অবস্থান করে ১৪ আগস্ট সকাল ৭টার পর বেরিয়ে যায়। অফিসে ঢোকে সময় তার পরনে ছিল রেইনকোট, মাথায় ছিল হেলমেট। অফিস রুমে ঢোকার পর প্রথমে প্রতিষ্ঠানটির টাকার ভোল্টের দিকে যায়। পরে সেখান থেকে যায় ক্যাশিয়ারের রুমে। ক্যাশিয়ারের রুমে ড্রয়ার থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরি করে বেরিয়ে যায়। এ সময় সে রুমে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
পরে ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা হয়। এরপর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে ৫৩ লাখ টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার পশ্চিম রামপুরা এলাকা থেকে রোম্মানকে গ্রেফতার করা হয়। বাদীর অভিযোগ এবং পুলিশি তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পরই গ্রেফতার করা হয় তাকে। এ সময় তার কাছ থেকে তিন লাখ বিশ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
হাতিরঝিল থানা-পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর চুরির টাকা উদ্ধারের জন্য গত শনিবার (২০ আগস্ট) সকালের দিকে অভিযান পরিচালনার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই হাজতখানায় আত্মহত্যা করে রোম্মান। হাজতখানায় থাকার সময় বেশ কয়েকজন হাজতির কাছে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। এ সময় সে বলেছিল, ‘টাকা যা নেওয়ার নিয়েছি। দরকার হলে আত্মহত্যা করবো, তবে কোনও টাকা দেবো না।’ আত্মহত্যার ঘটনার পর বেশ কয়েকজন হাজতির সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানতে পেরেছে পুলিশ। হাতিরঝিলের হাজতখানায় রোম্মানকে যে রুমে রাখা হয় সে রুমে রাত ১২টা পর্যন্ত আরও আসামি ছিল। ১২টার পর অন্যান্য আসামিকে অন্য রুমে রাখা হলে ওই রুমে রোম্মান একাই ছিলেন। ভোরের দিকে সে ‘আত্মহত্যা’ করে। শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সব ধরনের কার্যক্রম শেষে মরদেহ হাসপাতালে পাঠানো হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com