হোক লো স্কোরিং গেম। তারপরও ২৮ আগস্ট দুবাইতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে প্রমাণ হয়েছে হার্দিক পান্ডিয়ার সামর্থ্য কতটা? খেলার শেষ ওভারে যখন তিন বলে ৬ রান দরকার, তখনো কি অবিচল আস্থায় ব্যাট করেছেন পান্ডিয়া। মাথা ঠান্ডা রেখে এতটুকু ভড়কে না গিয়ে নিজের স্নায়ু ঠিক রেখে এক ছক্কায় দলকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে। হার্দিক পান্ডিয়ার অসীম সাহসী আর প্রত্যয়দীপ্ত উইলোবাজিতেই চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে এবারের এশিয়া কাপে শুভ সূচনা করেছে রোহিত শর্মার ভারত।
সব ঝানু ক্রিকেট পন্ডিতরা সবাই একমত, পান্ডিয়ার ওই কার্যকর ব্যাটিংটাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। দলে এমন এক অতি কার্যকর অলরাউন্ডার থাকার সুবিধা কতটা- তার প্রমাণও দিয়েছেন পান্ডিয়া। এ ভারতীয় অলরাউন্ডার এবং ইংলিশ চৌকশ ক্রিকেটার বেন স্টোকসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাংলাদেশের নতুন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শ্রীধরন শ্রীরাম এবং তার অনুভব দলে এমন কার্যকর অলরাউন্ডার থাকার সুবিধা অনেক। আশার কথা, নিজ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মাঝেও হার্দিক পান্ডিয়া আর বেন স্টোকসের ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন নতুন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার। আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচের আগে জুম কনফারেন্সে অনেক কথার ভিড়ে অধিনায়ক সাকিব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হার্দিক পান্ডিয়া ও বেন স্টোকসের প্রসঙ্গ টেনে নিজ দলের অধিনায়ক সাকিবের প্রশংসার পাশাপাশি তার মতো একজন কার্যকর অলরাউন্ডারের দলে থাকটাকেও বড় সুবিধা বলে মন্তব্য করেছেন শ্রীরাম। টাইগার টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারের কথা, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অলরাউন্ডারদের জন্য একটা বাড়তি সুবিধা থাকেই। কেউ একজন যদি পুরো চার ওভার বল করে দেয়, আর সঙ্গে ৫ থেকে ৬ নম্বরে নেমে ভাল ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ছক্কা হাঁকাতে পারে, সেটা অনেক কাজে দেয়। মহামূল্যবান অবদান হিসেবে পরিগণিত হয়।’
‘তবে হার্দিক পান্ডিয়া আর বেন স্টোকসের কথা ভিন্ন। তারা আসলে ভিন্ন মাত্রার। তারা দু’জন থাকার অর্থ দলের ব্যালেন্স বেড়ে যাওয়া। মানে একজন বাড়তি পারফরমার থাকা। আমি কোন এক জায়গায় পড়েছি যে, হার্দিক পান্ডিয়া থাকায় ভারত যেন ১২ জন নিয়ে খেলতে পারে। এরকম একজন উঁচু মানের ও অতি কার্যকর পারফরমার থাকা অনেক বেশি সুবিধার। আমাদেরও একজন সাকিব আছে। যে চার ওভার পুরো বোলিং করে দেবে। পাশাপাশি তার ব্যাটিংটাও আছে। সেটাও একটা বাড়তি সুবিধা হিসেবে কাজ করে।’ অধিনায়ক সাকিবের প্রশংসা করে শ্রীরাম যোগ করেন, ‘সাকিব একজন খুব বুদ্ধিমান ক্রিকেটার। আজকাল আপনি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চান, তাহলে স্কিলকে উন্নত করার বিকল্প কিছু নেই। সাকিব অনেক ভাল ক্রিকেটার। সে দীর্ঘদিন একটা মান বজায় রেখে ধারাকিহভাবে পারফর্ম করছে। সাকিবের সাফল্যের অন্যতম গোপন রহস্য হলো সে ধারাবাহিকভাবে নিজের পারফরমেন্স উন্নত করেছে। ব্যাটার ও বোলার দুই পরিচয়েই সাকিব নিজের কাজটা ঠিকমত করে যাচ্ছে। তাকে এজন্য কৃতিত্ব দিতেই হবে।’
আইপিএল, সিপিএলসহ বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলাটা সাকিবের অভিজ্ঞতাকে করেছে সমৃদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গতি, ছন্দ ও লয়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়া এবং ধরে রাখার ক্ষেত্রেও ওই লিগ গুলো বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করেন শ্রীরাম। তার অনুভব বিশ্বের বিভিন্ন কন্ডিশনে প্রচুর বিদেশি লিগ খেলার কারণেই সাকিবের আন্তর্জাতিক এক্সপোজার অনেক বেশি। সেটাই তার সঙ্গে নিজ দলের ক্রিকেটারদের প্রধান পার্থক্য। ‘সাকিবের সঙ্গে দলের বাকি ক্রিকেটারদের মূল পার্থক্যর জায়গাই হলো আন্তর্জাতিক এক্সপোজার। সাকিব বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। তার বিশ্বের বিভিন্ন লিগ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এতে করে বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলার অভ্যস্ততা হয়েছে। সাকিব দীর্ঘদিন ধরে আইপিএল খেলছে। সিপিএলও খেলছে প্রায় নিয়মিত। এটাই বাকিদের সাথে সাকিবের প্রধান পার্থক্য।’ বাংলাদেশের নতুন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার মনে করেন, ‘সাকিবের মত আরও বেশি সংখ্যক ক্রিকেটারকে দেশের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে তারাও শিখবে।’