ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ নিয়ে কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর যে কোনো প্রশ্ন, আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে চ্যালেঞ্জ না ছুড়ে সামনাসামনি কথা বলতে বলেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে (অব.) আহসান হাবিব খান। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ইভিএমে কারচুপি নিয়ে চ্যালেঞ্জ যদি করতেই হয় সংবাদ সম্মেলনে কেন? আমাদের কাছে এসে চ্যালেঞ্জ করতে অসুবিধা কী? গতকাল বুধবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। গত ২৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইভিএমের অডিট কার্ড পরিবর্তন করে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়া সম্ভব। এছাড়া আঙুলের ছাপ না মিললে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ দিয়ে ওভাররাইট করে ব্যালট ইউনিট ওপেন করার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। এমন অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ইসি আহসান হাবিব খান বলেন, আমরা ইভিএম নিয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি, রাজনৈতিক দলের টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বসেছি। তাদেরও ডেকেছি। তারা কিন্তু আসেননি। আমরা পাঁচ মাস ধরে সময় দিয়েছি। কেন হঠাৎ করে এ সংবাদ সম্মেলন, উদ্দেশ্যটা কী? তিনি বলেন, তাদের জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা। তারা একদিন না দশদিন আসবে, ভীতি কোথায়? চ্যালেঞ্জ যদি করতেই হয়, সংবাদ সম্মেলনে কেন, আমাদের এখানে এসে চ্যালেঞ্জ করুক। তারা আমাদের চেয়ে অনেক শিক্ষিত, অনেক বড়। কাজেই আমাদের এখানে এসে চ্যালেঞ্জ করতে অসুবিধা কী?
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা চারটা নির্বাচন করলাম, কজন মারা গেছে? কয়টা জায়গায় অরাজকতা হয়েছে? অনিয়ম হলে সেটা তুলে ধরেন, অসুবিধা নেই। অসততা, অস্বচ্ছতা, পক্ষপাতিত্ব যদি চোখে পড়ে, প্লিজ লেট মি নো। আমাকে জানান, তার প্রতিকার, জবাব দিয়ে তৃপ্ত করে ছাড়বো। কাজ করতে গেলে ভুল হতে পারে। আপনি দেখবেন ইচ্ছাকৃত ভুল হলো কি না। একটা ইচ্ছাকৃত ভুল, আরেকটা হচ্ছে অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমাকে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, জনগণের আস্থা অবশ্যই আসবে। দলগুলোর যে অনাস্থা এটা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আসতে পারে। অতীত থেকে আমরা শিক্ষা নেবো। কিন্তু ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে, এটা গ্যারেন্টেড। আপনারাও বুঝতে পারবেন। সামনের সিটি, গাইবান্ধার উপ-নির্বাচনসহ যেখানে ইভিএম হবে সেখানেই ভোটাররা বলবে ইভিএমই ভালো। আমরা ইমানের সঙ্গে কাজ করে যাবো। সঠিক কাজ করে যাবো। ক্ষমা চাইবো না। ভুল করলে শুধরে নেবো।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেকেই আছেন যারা সংকট তৈরি করতে চান। ঘোলাভাবে শিকার করতে চান। সরকার ও বিরোধীদল থেকে অনেকেই ইভিএম চাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আমাকে ‘ইভিএম দিয়েন না, আমার এলাকার অশিক্ষিত মানুষ বেশি’ এমনও বলছে। বিদেশে থাকা সন্তানের সঙ্গে যদি মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বলতে পারে, দুটি বোতাম চাপতে পারবে না? কাজেই এটা অসৎ উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, আঙুলের ছাপ না মিললেও যখন নম্বরটা দেওয়া হয়, তখন কিন্তু ভোটারের পরিচয় মেলে। আঙুলের ছাপ না মিললে ওভাররাইট করলে সেটা কিন্তু সংরক্ষিত থাকছে। আমরা অনেক সময় সেটা নিয়ে ভিডিও কলে কথা বলি। নির্বাচনে প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের চলতে হবে। বিকাশ, রকেট, ইউপে, নগদ; জুম অ্যাপ বিশ্বব্যাপী চলছে। কারও যদি কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ থাকে- আমাদের কাছে আসেন, দেখেন। প্রতিটি পর্বে আমরা ইভিএম দেখার ব্যবস্থা করেছি, তাদের থাকতে বলেছি।
আহসান হাবিব বলেন, কারচুপির প্রমাণ করতে পারলে আমরা তখন সিদ্ধান্ত দেবো। হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান নয়, কাজেই কারও অসৎ উদ্দেশ্যে থাকতেও পারে। রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন করার বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো যুক্তিসঙ্গত কারণেই দলগুলো এ বিষয়টি উত্থাপন করেছে। এটা কেন, সেটা আমাদের আরও জানতে হবে। তিনি বলেন, ভালো-মন্দ তো সব জায়গায় আছে। যারা সততার সঙ্গে কাজ করবে তাদেরই আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নেবো। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাও থাকবেন। সততার সাথে, ইমানের সাথে কাজ করেন, এমন কর্মকর্তাদের যাচাই-বাছাই করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা যোগ্য চৌকস কর্মকর্তাদের নেবো। এ ব্যাপারে আমরা খুব চিন্তিত।