শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

মানবিক

জয় সেনগুপ্ত
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রবিবার সকালবেলাটা বাগানে বসেই কেটে যায় দিগন্তর। ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে বাগানে চলে আসেন তিনি। গাছের ছায়াঘেরা কাঠের বেঞ্চিটায় বসেন। সকালের চা-টা ওখানে বসেই খান। কাগজ বিক্রেতা কাগজ দিয়ে গেলে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে বেলা হয়ে যায়। তার পর বেশ কিছু ক্ষণ বাগানে কাটান, গাছদের পরিচর্যা করেন। এ সময় কেউ তাঁকে বিরক্ত করে না।
রবিবার দিনটা সম্পূর্ণ তাঁর নিজস্ব। এই নিজস্বতার বেশির ভাগটাই দখল করে নিয়েছে তাঁর বাগান। এই দিনটা তিনি প্রকৃতির কোলে কাটান। বিশাল বাগান দু’হাত উপুড় করে তাঁকে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য বিলোতে থাকে। তিনি গাছেদের ফিসফিসানি শুনতে পান। বিভোর হয়ে থাকেন, যেন এটা অন্য কোনও জগৎ।
অনেকটা জমিসমেত এই বাড়িটা দিগন্তর বাবা কিনেছিলেন আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগে। বাড়ির সামনের জমিটা ফাঁকাই পড়েছিল দীর্ঘদিন। দিগন্তই নিজের হাতে একটা একটা করে ফুলগাছ লাগিয়েছেন। দরদ দিয়ে প্রতিটি ফুলগাছ বড় করে তুলেছেন। গোলাপ, সূর্যমুখী, ডালিয়া, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, নীল পদ্ম, অপরাজিতা, নয়নতারা তো আছেই, আছে আফ্রিকান ডেজ?ি, এঞ্জেল আইজ?, টিউলিপ, কসমস ফুল, জ?িনিয়া, এস্থার, প্রিমরোজ ইত্যাদি। এ রকম অসাধারণ ফুলের বাগান এই গ্রামে আর কারও নেই। এর জন্য তিনি মনে মনে বেশ গর্ব অনুভব করেন। অনেকেই এই বাগান দেখতে এখানে আসেন। কেউ কেউ পুরো পরিবার নিয়ে। অনেক দূরের শহর থেকেও। অবশ্যই দিগন্তর কাছ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে, সময় ঠিক করে।
আজ, অন্যান্য রবিবারের মতোই, বাগানে নির্দিষ্ট জায়গাটিতে বসে তিনি খবরের কাগজ পড়ছিলেন। সকাল সাড়ে আটটা তখন। বাগান পেরিয়েই যে লোহার গেটটা, সেটা ঠেলে এক ভদ্রলোক ঢুকে এলেন ভেতরে। অচেনা মানুষটিকে দেখে ভ্রু কোঁচকাল দিগন্তর। সকালে উঠেই গেটের তালা খুলে দেন তিনি। ফলে যে-কেউ-ই চলে আসতে পারে ভেতরে।
এই গ্রামের সব মানুষকেই তিনি চেনেন। এই ভদ্রলোক একেবারেই অচেনা। তার মানে, ইনি এই গ্রামের কেউ নন।
তা হলে হয়তো এ ভদ্রলোকও বাড়ির সকলকে নিয়ে বাগান দেখতে আসবেন বলে তাঁর অনুমতি নিতে এসেছেন, সময় আর দিন ঠিক করে যাবেন। ভাবলেন দিগন্ত।
লম্বা ফর্সা হ্যান্ডসাম চেহারার ভদ্রলোকটির বয়স বছর পঁয়তাল্লিশ হবে বলে মনে হল। ফুলহাতা শার্ট, প্যান্ট। ডান হাত কবজি পর্যন্ত প্যান্টের পকেটে ঢোকানো। ভদ্রলোক সোজা এসে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। দিগন্ত উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভীর মুখে ভদ্রলোক একটা কৃত্রিম হাসি ফোটানোর চেষ্টা করলেন। তার পর বললেন, “আমি ইনস্পেক্টর অনন্ত সান্যাল। লালবাজার।”
তাঁর আই-কার্ড বার করে দেখালেন ইনস্পেক্টর।
চমকে গেলেন দিগন্ত। বুঝলেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। তাঁর বাড়িতে পুলিশ কেন!
উঠে দাঁড়ালেন তিনি। বললেন, “কী ব্যাপার ইনস্পেক্টর? কী হয়েছে?”
“দেখুন, এত সকালে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আসলে এক জন রাজনৈতিক অপরাধীকে আমরা অনেক দিন ধরে খুঁজছি। আমাদের কাছে খবর আছে, তিনি আপনার বাড়িতে ভাড়া আছেন। অবশ্য এতে আপনার বা আপনার পরিবারের কোনও দোষ নেই।”
“নিরঞ্জনবাবু? আপনি নিরঞ্জন তালুকদারের কথা বলছেন? উনি রাজনৈতিক অপরাধী?”
“হ্যাঁ। উনি একটা নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। ওঁর নামে বেশ কয়েকটা গুরুতর অভিযোগ আছে। শহর থেকে পালিয়ে এসেছেন। ভেবেছেন গ্রামে লুকিয়ে থাকলে আমরা ওঁর খোঁজ পাব না। তবে নিজের নামটা দেখছি পাল্টাননি। আমি ওয়ারেন্ট নিয়েই এসেছি। আমার টিম আপনার বাড়ির বাইরে আছে। সবাই মিলে এক সঙ্গে এখানে এলে অপরাধী সাবধান হয়ে যাবে। হয়তো সঙ্গে স্মল আর্মসও থাকতে পারে। আর, আমি কোনও রক্তপাত ছাড়াই লোকটিকে অ্যারেস্ট করতে চাই।”
ইনস্পেক্টরের কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন দিগন্ত। নিরঞ্জন তালুকদারÍ এ রকম এক জন পরিশীলিত শান্ত নিপাট ভদ্রলোকের কাছে স্মল আর্মস থাকতে পারে! এই দু’মাস যে ভদ্রলোক এ বাড়িতে রয়েছেনÍ কথাবার্তা, হাবভাব, চালচলনে এ রকম পারফেক্ট জেন্টলম্যান তিনি আগে কখনও দেখেননি!
“আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে ইনস্পেক্টর। যাঁর কথা আপনি বলছেন, উনি সম্মাননীয় এক জন মানুষ, অত্যন্ত শিক্ষিত… একটা হাই স্কুলে পড়াতেন। ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট নিয়েছেন। আমার এক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কলিগের কথাতেই আমি ভাড়া দিয়েছি ভদ্রলোককে,” দিগন্ত, ইনস্পেক্টর সান্যালের চোখে চোখ রেখে বললেন।
হাসলেন ইনস্পেক্টর অনন্ত সান্যাল, “নিষিদ্ধ এই আলট্রা-লেফট দলটিতে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা কম নয়। কলেজের প্রফেসর, স্কুলের শিক্ষক, ডাক্তারÍ অনেকেই রয়েছেন। সম্প্রতি পিএইচ ডি করেছেন এমন দু’জনকেও খুঁজছি আমরা। আপনি শোনেননি, নকশাল মুভমেন্টের সময় প্রেসিডেন্সি কলেজের মেধাবী অনেক ছাত্রছাত্রী সরাসরি অ্যাকশন ফিল্ডে ছিল? আপনার এই শিক্ষিত লোকটিও তেমনই এক জন। উনি এখানেই আছেন। একেবারে বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া খবর। এ খবরে কোনও ভুল নেই।”
“আপনার কথা একদম ঠিক। কিন্তু এ-ও তো হতে পারে আপনারা যাঁকে খুঁজছেন, এই ভদ্রলোক তিনি নন। নামটা মিলে গেছে হয়তো।”
আবারও হাসলেন ইনস্পেক্টর সান্যাল, “সমনামী বলছেন? না, সে সম্ভাবনা নেই। আমরা সব রকম খোঁজখবর নিয়েই এসেছি। ভদ্রলোক কলকাতার গৌরী মহাবিদ্যালয়ের অঙ্কের টিচার ছিলেন। অঙ্কের ব্রেন উনি কাজে লাগালেন ওই নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর কাজকর্মে। সশস্ত্র আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হয়ে উঠলেন। দলের যাবতীয় প্ল্যান-প্রোগ্রাম উনিই করেন।”
ইনস্পেক্টর চার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন। বাগানের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন কিছু ক্ষণ। তার পর বললেন, “উনি কত দিন ভাড়া এসেছেন আপনার বাড়িতে?”
“এই… দু’মাস…”
“বুঝেছি, আজ থেকে মাস দুয়েক আগেই আমরা একটা অপারেশন চালিয়েছিলাম। আমাদের কাছে খবর ছিল ঝাড়গ্রামের একটা জঙ্গলে ওই নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর কয়েক জন জড়ো হয়েছে। নিরঞ্জন তালুকদারও রয়েছেন তাদের মধ্যে। আমরা ওখানে ঠিক সময়ে পৌঁছে যাই। প্রায় আধঘণ্টার মতো গুলির লড়াই চলে। কিন্তু পুরো গ্যাংটা অক্ষত অবস্থায় পালিয়ে যায়। বোধ হয় ওদের গুলি ফুরিয়ে গিয়েছিল। এর পরই ওই নিরঞ্জন তালুকদার চলে এসেছেন এখানে।”
দিগন্ত বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার পর বললেন, কিন্তু খবরের কাগজেও তো কখনও এ রকম কারও নাম দেখিনি। মানে, কোনও সন্ত্রাসবাদী হোক বা উগ্রপন্থী, তাকে পুলিশ খুঁজছে, এ রকম খবর তো কাগজে প্রায়ই পড়ি আমরা।”
“আসলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচ- গোপনীয়তার মাধ্যমে এগোচ্ছিলাম আমরা, কাকপক্ষীতেও যাতে না-জানতে পারে ওঁকে আমরা খুঁজছি। বিশেষ করে মিডিয়া। সবচেয়ে ভয় ছিল মিডিয়াকে। ওরা যে কী করে সব জেনে ফেলে… যাই হোক, মিডিয়াকে কিচ্ছু জানতে দিইনি। পুলিশ ডিপার্টমেন্টেরও খুব বিশ্বস্ত কয়েক জন ছাড়া এই অপারেশনের বিষয়টা কেউ জানে না।”
“কিন্তু এই দু’মাস উনি তো বাড়ি থেকে বেরোননি তেমন। শুধু মাঝে মাঝে সকালে উঠে বাজার করতে যাওয়া, আর কখনও কখনও সন্ধের দিকে এই বাড়ির কাছেই দোকানে ওষুধ কিনতে যাওয়া ছাড়া। দলের অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যাপারটাও তো থাকে। ওঁর কাছে কোনও মোবাইল ফোনও নেই।”
“সেটা উনি অ্যাবস্কন্ডিং পিরিয়ড কাটাচ্ছেন তাই। লুকিয়ে আছেন আর কী। বোধ হয় জানতে পেরেছেন পুলিশ ওঁর পেছনে পড়েছে। দেখবেন, কিছু দিন পরই হয়তো এই জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় পালাবেন।”
এই ‘পালাবেন’ শব্দটা শুনতে ভাল লাগল না দিগন্তর। বললেন, “কিন্তু আমার এটা অবিশ্বাস্য লাগছে।”
“আপনার অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, কিন্তু এটাই বাস্তব।”
ইন্সপেক্টর কী একটু ভাবলেন। তার পর বললেন, “উনি এখন কোথায়? বাড়িতেই আছেন?”
“হ্যাঁ, সৌম্যকে পড়াচ্ছেন। ওকে আঁকাও শেখান। খুব ভাল আঁকেন উনি।”
“সৌম্য কে? আপনার ছেলে?”
“হ্যাঁ। সৌম্য ক্লাস ফাইভে পড়ে। ইদানীং নিরঞ্জনবাবুর কাছে পড়ছে ও। খুব ভাল পড়ান উনি।”
ইনস্পেক্টর আবার একটু ভাবলেন। তার পর বললেন, “প্রতি দিন পড়ে?”
“না। সপ্তাহে পাঁচ দিন। আর অবশ্যই এর সঙ্গে অর্থের কোনও সম্পর্ক নেই।”
“ঠিক আছে, একটা কাজ করা যাক, এক বার দেখি ওঁকে। আপনি কিছু জানাবেন না। আমি আড়াল থেকে দেখব। আপনি যখন বলছেন, নামটা হয়তো মিলে গেছে, কিন্তু উনি অন্য লোক… ওই নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর কেউ নন… যদিও আমি নিশ্চিত, উনিই সেই লোক। তাও…”
দিগন্ত চুপ করে রইলেন।
“সেটা সম্ভব তো?” ইনস্পেক্টর জিজ্ঞেস করলেন।
“কোনটা বলুন তো?”
“আপনার বাড়ির ভেতরটা তো আমি জানি না, যে-কোনও একটা জায়গা থেকে, মানে আড়াল থেকে আমি এক বার লোকটিকে দেখে নিতে চাই,” ইনস্পেক্টর বললেন।
“ঠিক আছে। চলুন, ভেতরে যাই। তবে আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিতে পারি ইনস্পেক্টর, আপনারা যাঁকে খুঁজছেন, ইনি সেই ব্যক্তি নন। কারণ, আমি তো গত দু’মাস ধরে দেখছি, এঁর মতো মানুষ কখনও খুনের রাজনীতি করতে পারেন না।”
“দিগন্তবাবু, বাস্তবটা অন্য রকম। বাস্তব যে কত ভয়ঙ্কর, তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। মানুষ যে কখন কিসে প্রভাবিত হয়, কখন এক জন ভাল মানুষ খারাপ মানুষে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তা কেউ বুঝতে পারে না।”
“আপনি ঠিকই বলেছেন ইনস্পেক্টর, যে এক জন ভাল মানুষ, খারাপ মানুষ হয়ে যায়… অনেক সময়েই… আবার এর উল্টোটাও তো হতে পারে।”
“অ্যাঁ!” ইনস্পেক্টর ভুরু কোঁচকালেন।
“বলছি, এর উল্টোটাও তো হতে পারে,” দিগন্ত আবার বললেন কথাটা।
দিগন্তর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালেন ইনস্পেক্টর। তার পর নিজের মনে বিড়বিড় করলেন, “উল্টোটাও হতে পারে?”
“যাক গে চলুন। বাড়ির ভিতরে যাই,” দিগন্ত পা বাড়ালেন।
দরজা খোলাই ছিল। দু’জনে ভেতরে ঢুকলেন। দিগন্ত তাঁর স্ত্রী সুমিতাকে ডাকলেন। তাঁকে নিচুস্বরে সব কথা বলে জিজ্ঞেস করলেন, সৌম্য এখনও পড়ছে কি না।
সব শুনে আঁতকে উঠলেন সুমিতা। কিছু ক্ষণ কোনও কথা বলতে পারলেন না। তার পর ভয়মিশ্রিত চোখে জানালেন যে সৌম্য পড়ছে নিরঞ্জনবাবুর কাছে।
“চলুন,” দিগন্ত তাঁকে নিয়ে লম্বা বারান্দা পেরিয়ে একটা ঘরের সামনে দাঁড়ালেন। ঘরের দরজা ভেজানো। ডান দিকে একটা খোলা জানলা। সেখানে নিয়ে গিয়ে ইন্সপেক্টর সান্যালকে বললেন, “এখান দিয়ে দেখুন, একদম পাশ থেকে। আপনাকে দেখতে পাবে না ওরা।”
জানলা দিয়ে ঘরের ভেতরে উঁকি দিলেন ইনস্পেক্টর। নিরঞ্জনবাবু মন দিয়ে একটা অঙ্ক বোঝাচ্ছেন সৌম্যকে। সৌম্য বাধ্য ছাত্রের মতো শুনছে, মাঝে মাঝে প্রশ্ন করছে। নিরঞ্জনবাবুর মুখটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলেন ইনস্পেক্টর। তবে, জায়গাটা এমনই যে, তাঁকে ঘর থেকে কেউ দেখতে পাচ্ছিলেন না।
প্রায় মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে জানলার আড়াল থেকে সন্তর্পণে একটানা দেখে গেলেন ইন্সপেক্টর সান্যাল। তার পর বললেন, “ঘরে চলুন মিস্টার রায়চৌধুরী।”
সৌম্যর বাবা ইনস্পেক্টরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন একদৃষ্টে। জিজ্ঞেস করলেন, “ইনিই কি সেই লোক, যাঁকে আপনারা খুঁজছেন?”
“হ্যাঁ,” ছোট্ট উত্তর দিলেন ইনস্পেক্টর।
বৈঠকখানায় গিয়ে বসলেন দু’জনে। দিগন্ত বললেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভেবেছিলাম ইনি নিশ্চয়ই সেই লোক হবেন না! যাই হোক, ওঁকে কি এখনই অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাবেন?”
“না। আপনার ছেলেকে পরম মমতায় পড়াচ্ছেন উনি। ওঁর চোখে আমি অপত্য স্নেহ দেখেছি। স্নেহ-মমতায় জড়িয়ে পড়েছেন। ছোট ছেলেমেয়ের ভালবাসা অনেক সময়ই মানুষকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনে। পাল্টে যায় এক জন মানুষের চরিত্র। আমার ধারণা, নিষিদ্ধ ওই রাজনৈতিক দলের সংস্রব হয়তো এ বার উনি ত্যাগ করবেন। আপাতত ধরে নেওয়া যাক না, আমি ওঁকে খুঁজে পাইনি! অথবা আমি যাঁকে খুঁজছি, তিনি এই ভদ্রলোক নন!”
কয়েক মিনিটের নিস্তব্ধতা। ইনস্পেক্টর বললেন, “আপনার একটা কথা আমার মনে থাকবে চিরদিন।”
“কোন কথা?”
“ওই যে, ‘এর উল্টোটাও তো হতে পারে।’”
হাসলেন দিগন্ত। বললেন, “আজকের দিনটা আমার জীবনে একটা স্মরণীয় দিন হয়ে রইল।”
“এ বার চলি,” দিগন্তর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলেন ইনস্পেক্টর।
চলে যাচ্ছেন ইনস্পেক্টর অনন্ত সান্যাল। দিগন্ত দাঁড়িয়ে আছেন। পাশে সুমিতা। ইনস্পেক্টরের লম্বা সুন্দর চেহারাটা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মেন গেটের দিকে। যত ক্ষণ না গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন, অপস্রিয়মাণ মানুষটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন দু’জনে। ( ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত দেশ ম্যাগাজিনের সৌজন্যে) অঙ্কন: প্রসেনজিৎ নাথ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com