বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাংলা কারস লিমিটেডের একটি নির্দিষ্ট মডেলের গাড়ির দাম কমালো ৮ লাখ টাকা। নতুন মডেলের ৩৮ লাখ টাকার গাড়ি আগামী মাসে ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করবে হোসেন গ্রুপের সহযোগী এই প্রতিষ্ঠানটি। হোসেন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকির হোসেন এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলা কার দেশের বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিমাসে গড়ে ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি বিক্রির অর্ডার আসছে।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ডিজাইনে গাড়ি ম্যানুফ্যাচার করলেও জাপানিজ ইসুজু ইঞ্জিন, চায়না বডি ও ইন্দোনেশিয়ার চেসিস দিয়ে গাড়িগুলো তৈরি। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০টির মতো বিভিন্ন মডেলের গাড়ি হস্তান্তর হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের প বটিতে নিজস্ব কারখানায় নিজস্ব নকশায় মাসে অন্তত ৩০টি গাড়ি তৈরি করছে বাংলা কারস লিমিটেড। যে গাড়িগুলোর ইঞ্জিনে লেখা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। অচিরেই রফতানি হবে বিশ্বের বড় বড় শহরে। এর আগে জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন দেশের বাজারে চলতি বছরে আট লাখ টাকা দামের বাংলা কার বিক্রি শুরু হবে। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ১২ লাখ টাকার নিচে কোনও গাড়ি নামানো সম্ভব হবে না। তবে ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসলে আবার আট লাখ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। জাকির হোসেন বলেন, যে কোনও করপোরেট প্রতিষ্ঠান ১০০ গাড়ির অর্ডার দিলে আমরা তাদের তিন মাসের মধ্যে ডেলিভারি দিতে পারি। অর্থাৎ মাসে একই মডেলের ৩০টি গাড়ি বানানো সম্ভব।
তিনি জানান, আগামী অক্টোবর মাস থেকে বিভিন্ন মডেলের গাড়ি ছাড়াও লরি, ট্রাক ও পিকআপ তৈরির কাজ শুরু হবে। আট লাখ টাকা দাম কমানোর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, এখন যে গাড়ি আমরা ৩৫ লাখ টাকা বিক্রি করছি, সেই একই মডেলের গাড়ি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ও কাঁচামাল আমদানির বিপরীতে এই গাড়ির খরচ এখন প্রায় ৩৮ লাখ টাকার মতো পড়ছে। কিন্তু করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদার কথা বিবেচনা করে আট লাখ টাকা কমে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগে ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি বিক্রি হলেও এখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কাছ থেকে বেশি গাড়ি কিনছেন। যে কারও জন্য ব্যাংক ঋণে বাংলা কার নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাত্র সাত শতাংশ সুদে ঢাকা ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঝামেলা ছাড়াই এই গাড়ি কেনা যাবে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। ট্রাক, বাস, লরি ও পিকআপ গাড়িও ব্যাংক ঋণে কেনা যাবে বলে জানান তিনি। ১২ লাখ টাকা এমনকি ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক থেকে নেওয়ার সুযোগ আছে। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে যে কোনও নতুন মডেলের গাড়ি কিনতে চাইলে এক মাসের মধ্যে গাড়ি কেনা যাবে। গাড়ির বেচা বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন প্রাইভেট সেল বা ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি আগের চেয়ে কমে গেছে। তবে করপোরেট সেল আগের চেয়ে বেড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, শুরুর দিকে ৬০ শতাংশ গ্রাহক ছিল ব্যক্তিগত গাড়ির ক্রেতা। যাদের বেশিরভাগই প্রথমবারের মতো গাড়ি নিতেন। আর ৪০ শতাংশ ছিল করপোরেট প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু বৈশ্বিক সমস্যার কারণে যখন গাড়ির দাম বেড়ে যাচ্ছিলো তখন অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ৭০ শতাংশই করপোরেট প্রতিষ্ঠানের গাড়ির ওয়ার্ক অর্ডার পাচ্ছি। আর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অর্ডার আসছে ব্যক্তিগত।
গত কয়েক মাসে ১৬০টি গাড়ি বিক্রির একটি পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, যেখানে ১০০টি গাড়ি নিয়েছেন ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য। বাকি ৬০টি গাড়ি বিক্রি করেছেন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। দেখা যাচ্ছে ১৫০টি গাড়ির মধ্যে ১০০টির ওয়ার্ক অর্ডার এসেছে করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে। আর ৫০টি গাড়ির অর্ডার এসেছে ব্যক্তিগত।
জাকির হোসেন বলেন, চার কোটি টাকা খরচ করে যে গাড়ি বাইরে থেকে আনা যায়, সেই গাড়ির সব সুযোগ-সুবিধাও মিলবে ‘বাংলা কার-এ। মার্সিডিজ-বিএমডব্লিউ গাড়ির গ্রাহকরা যে সুবিধা পান বাংলা কার-এ তা মিলবে মাত্র ৩০ লাখ টাকায়।
কোটি টাকা দামের নতুন গাড়ি আমরা দিচ্ছি ৩০ লাখ টাকায়। ক্রেতাদের পাঁচ বছরের জন্য কোনও চিন্তা করতে হবে না। ব্র্যান্ড নিউ বাংলা কারে পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি থাকছে। গাড়িগুলো ডিএফএসকে গ্লোরি মডেলভিত্তিক, যা ইতোমধ্যে বাজারে রয়েছে। একশ’টিরও বেশি ভয়েস কমান্ডসহ একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ভার্চুয়াল সহকারী রয়েছে। মাল্টিমিডিয়া কনসোল কন্ট্রোলার দ্বারা চালিত একটি ৯ ইি ইন্টারফেসের ইনফোটেইনমেন্ট ডিসপ্লে আছে। সহজ সংযোগের জন্য একটি নেভিগেশন সিস্টেম ও ইউএসবি পোর্ট আছে। সাত আসনের গাড়িতে প্রথম ও দ্বিতীয় সারিতে পা রাখার যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। তৃতীয় সারিটি শিশুদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহারযোগ্য। এসইউভিতে আছে একটি সমৃদ্ধ অডিও সিস্টেম।
এছাড়া ৩৬০ ডিগ্রি পার্কিং ক্যামেরাসহ টায়ার প্রেসার মনিটরিং সিস্টেম এবং পার্কিং সেন্সর রয়েছে। দুই স্তরবিশিষ্ট প্যানোরামিক সানরুফও আছে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মে মাস থেকে অর্ডার নেওয়া শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ১৯৮টি গাড়ি হস্তান্তর হয়েছে।