(শেষাংশ, ১ম পর্ব গত শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে)
মূলনীতি-২
‘ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের ও অন্যের ক্ষতি করা বৈধ নয়’। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না’ (সূরা বাকারাহ-১৯৫)। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কোনো কাজে লিপ্ত হয়ো না যা তোমাদের ধ্বংস ও ক্ষতির কারণ হয়। ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘অন্যের ক্ষতি করা যাবে না এবং নিজেও ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া যাবে না’ (ইবনে মাজাহ-২৩৪১)। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে (পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে) কষ্ট না দেয়’ (মুসলিম-১৮৩)।
ধূমপান যেকোনো ধরনের কল্যাণ বয়ে আনে না। বরং এটি যে, ধূমপায়ী ও তার আশপাশের মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেকোনো সচেতন মানুষ মাত্রই এ ব্যাপারে অবগত।
মূলনীতি-৩ ‘অপচয় ও অপব্যয় করা নিষেধ’। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের ব্যাপারে কুফুরি করেছে’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৭)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (তোমাদের জিম্মায় থাকা/পোষ্য) নির্বোধদের (বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী) হাতে সম্পত্তি অর্পণ করো না’ (সূরা নিসা-৫)। অর্থাৎ যাতে করে তাদের নির্বুদ্ধিতার কারণে আল্লাহর দেয়া এই সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার না হয়। ধূমপানের বিষয়টি আগাগোড়াই অপচয়। এর মাধ্যমে সময়, শারীরিক সক্ষমতা ও টাকা পয়সার অপচয় অপব্যবহার ছাড়া আর কোনো ধরনের কল্যাণ নেই।
আল্লাহর দেয়া অন্যান্য নেয়ামতের পাশাপাশি শারীরিক সক্ষমতা, টাকা পয়সার অপচয় ও অপব্যবহার কুরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াতের আলোকেই নিষিদ্ধ।
আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও সম্পদকে শুধু তাঁর সন্তুষ্টির জন্য শরিয়ত অনুমোদিত ক্ষেত্রগুলোতে ইসলামসম্মত পন্থায় ব্যয় করতে হবে। এর অপব্যবহার করলে আল্লাহ পাকের সামনে কিয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে এবং তিনি ক্ষমা না করলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এ সংক্রান্ত আয়াতগুলো একত্র করে বিশ্লেষণ করলে একটি নাতিদীর্ঘ পুস্তিকা রচনা করা যায়।
মূলনীতি-৪ ‘মুমিনদের জন্য দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু পরিহার করা বাঞ্ছনীয়’। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন, কুররাছ (পেঁয়াজ জাতীয় এক প্রকার ফল) আহার করেছে সে যেন আমাদের মসজিদে (মসজিদে নববীতে) প্রবেশ না করে। কারণ যা দ্বারা মানুষের কষ্ট হয় (দুর্গন্ধের কারণে) ফেরেশতাদেরও তা দ্বারা কষ্ট হয়’ (ইবনে হিব্বান-১৬৪৪)।
বেশির ভাগ ধূমপায়ীর জামা-কাপড়সহ শরীর থেকে যে গন্ধ আসে তা তাদের নিকটস্থ সুস্থ সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য পীড়াদায়ক। যে কার্যকারণের ভিত্তিতে কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন খেতে নিষেধ করা হয়েছে তা ধূমপানের ক্ষেত্রেও পূর্ণমাত্রায় উপস্থিত। তাই ইসলামী আইনশাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী ওই একই বিধান অর্থাৎ হারাম হওয়ার বিষয়টি এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এ ছাড়া উইকিপিডিয়ায় বিড়ি, সিগারেট, গাঁজা ও জর্দা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা হলো-
সিগারেট : ‘সিগারেটে ৫৭টি মারাত্মক রাসায়নিক উপাদানের সন্ধান পাওয়া গেছে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তন্মধ্যে একটি হলো নিকোটিন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দু’টি সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন আছে তা যদি একটি সুস্থ মানুষের দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করা হয় তাহলে সে মানুষটি তখনই মারা যাবে।’
বিড়ি : ‘বিড়ি হাতে তৈরি এক ধরনের সস্তা সিগারেট। দাম কম এবং হাতে বানানো যায় বলে গ্রামের কৃষক শ্রমিকের কাছে খুবই জনপ্রিয় ধূমপান সামগ্রী। শুকনো তামাক পাতা সরাসরি কাগজে বা সুপারির পাতার ভেতরে পাতলা অংশে মুড়ে পান করা হয়। সরাসরি তামাক পাতা থাকায় ও ফিল্টার না থাকার কারণে এর ক্ষতিকর প্রভাব বেশি।’
গাঁজা : ‘আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাহবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখেছেন, ভাঙ ও গঞ্জিকা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি তামাক পাতায় প্রস্তুত সিগারেট পানের চেয়ে কম।’
জর্দা এক ধরনের তামাকজাত পণ্য। এটি সাধারণত পানের সাথে মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। জর্দার অ্যালকালয়েড ও নিকোটিন অধিক মাত্রায় বিষাক্ত। জর্দা মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্যান্সার গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসির মতে, যারা পানের সাথে তামাকজাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণ করেন তাদের মুখে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন- এখন ধূমপান করবেন, নাকি ছাড়বেন? লেখক : শিক্ষক, মাস্টার তালেব উল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বড়ঘোপ, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার