না ফেরার দেশে চলে গেলেন উপমহাদেশের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কান্ডারী, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোক্তা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, বর্তমান ফরিদপুর-২ আসন নগরকান্দা ও সালথা উপজেলার সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের বার বার মনোনীত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। গত রোববার দিবাগত রাত এগারোটা ৪০ মিনিটে সিএম এইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না-লিল্লাহ — রাজিউন) মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। তিনি বার্ধক্য জনিত কারনে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি তিন ছেলে, এক কন্যা, নাতি নাতনি, রাজনৈতিক সহকর্মীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী শোক বানী ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এছাড়া ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, জেলা, উপজেলার নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নগরকান্দা প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন গুনীজনরা শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। বেলা ১১ টায় নগরকান্দা সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমি মাঠে প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার লোক জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। তাকে এক নজর দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। জানাযায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আযম সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফ, জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মোঃ শাজাহান বিপিএম, জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তাগণ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ জানাযায় শরীক হোন। পরে তার লাশ ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে সর্বস্তরের লোকদের শ্রদ্ধানিবেদনের জন্য। শেষে বায়তুল মোকাররমের সামনে দ্বিতীয় নামজে জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বনানী কবর স্থানে চির নিদ্রায় শায়ীত করা হয়। এক নজরে তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরা হলোঃ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (৮৮) জন্ম ৮ মে, ১৯৩৫ সাল এবং মৃত্যু ১১সেপ্টেম্বর রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে ২০২২ইং। ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের বর্তমান উপনেতা। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপপ্রাপ্ত হন এবং একই সময়ে তিনি বাংলাদেশ গার্ল-গাইড এসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক ওমেন অব দি ইয়ার নির্বাচিত হন।২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মাতা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্বামী রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী গোলাম আকবর চৌধুরী। ১৯৫৬ সাল থেকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৬৯-১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়কের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতার দায়িত্ব পান।
চিরবিদায় সাজেদা চৌধুরী এমপি: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার মহেন্দ্র নারায়ণ অ্যাকাডেমি মাঠে জানাজা সম্পন্ন হয়। নামাজ শেষে সাজেদা চৌধুরীর লাশ আবার ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। জানাজা পড়ান নগরকান্দা মদিনাতুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক ইসমাতুল্লাহ কাসেমী।
জানাজায় কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আজম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মোঃ ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহানসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এরপর সাজেদা চৌধুরীর লাশ বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার জন্য রাখা হয়। বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লাশবাহী একটি ভ্যানে করে বেলা ১১টার দিকে তার লাশ নগরকান্দায় আনা হয়। গত রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সাজেদা চৌধুরীর মারা যান। ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তার বাবার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মায়ের নাম সৈয়দা আছিয়া খাতুন।