বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ অপরাহ্ন

পরকীয়া একটি বিষফল

উম্মেহানি বিনতে আবদুর রহমান:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ইসলাম শৃঙ্খলার মানদণ্ড। এ মানদণ্ড আমাদের প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজে না জড়ানোর শিক্ষা দেয়। জৈবিক চাহিদা পূরণে শরিয়াহ বৈধভাবে বিয়ের দরজা সহজ করে দিয়েছে। এ সহজ ও সুন্দরতম পন্থার পরও দেখা যায় বিবাহিত নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত। চাই তা কথার মাধ্যমে, দেখার মাধ্যমে, মেসেজিংয়ের মাধ্যমে হোক অথবা অন্য সম্পর্ক। পরকীয়ার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুখের পরিবারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। আর শয়তানের মহাসফলতা তো এখানেই। পরকীয়া এমন একটি মাধ্যম, যা সমাজে ব্যভিচারের অসংখ্য রাস্তা খুলে দিচ্ছে। এর কোনো বোধগম্য ব্যাখ্যা নেই। পশ্চিমের আইনে নর-নারী রাজি থাকলে পরকীয়া অপরাধ নয়, এর ফলে পশ্চিমে পারিবারিক বন্ধন বিলুপ্ত।
আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে ১০০ ঘা করে বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর বিধান কার্যকর করবে। এদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো। ঈমানদারদের একটি দল যেন এদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সূরা আন নূর-২)
মূলত পরকীয়া একটি অমানবিক ক্রিয়া, সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। সমাজে এমনও বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু মানুষ রয়েছে যারা কিনা স্বীয় স্ত্রীকে প্রেগনেন্সির একটি বিশাল অবস্থার মধ্যে রেখেই পরকীয়ার অন্ধকারে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি এ কারণে বিকৃত- কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনোই নিজের ঔরসজাত অনাগত সন্তান এবং প্রেমময়ী স্ত্রীর প্রতি উদাস থেকে এ ঘৃণ্য কাজে জড়াতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ করো। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। মন্দ পরিণতি এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখিরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে- তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সঙ্কীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্র্য চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখিরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে- সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি-৫৬৪) পরকীয়া বা ব্যভিচার নিকৃষ্টতর অপরাধ, দুনিয়া ও আখিরাতে এর বৃহৎ শাস্তি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর যে শাস্তির বিচারক স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা সে শাস্তির ভার যে কত তা বোধোদয় কি সম্ভব?
পরকীয়ার শাস্তি বিবাহিত ও অবিবাহিতের জন্য দুই ভাবে ইসলাম নির্ধারণ করেছে- ১. একজন বিবাহিত অপরজন অবিবাহিত; ২. দু’জনই বিবাহিত। অবিবাহিতের শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত ও বিবাহিতের পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা। আর যদি দু’জনই বিবাহিত হয় তবে পাথর নিক্ষেপে হত্যা। নি¤েœ বর্ণিত হাদিসটির মাধ্যমে এ বিধান সুস্পষ্ট বোঝা যাবে।

হজরত আবু হুরায়রা রা: ও যায়দ ইবনে খালিদ রা: থেকে বর্ণিত- দুই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে অভিযোগ উত্থাপন করল। একজন বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করে দিন। অপরজন ছিল অধিক বুদ্ধিমান। সেও বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করে দিন। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘আচ্ছা বলো- লোকটি বলল, আমার ছেলে এই ব্যক্তির কাজ করত, সে তার স্ত্রীর সাথে জিনা করল। তখন তারা আমাকে বলল যে, আমার ছেলেকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে। তখন আমি আমার ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে ১০০ বকরি ও আমার একটি বাঁদি দিয়ে দিলাম, তার পর আমি আলেমদের জিজ্ঞাসা করলাম। তারা বলল, আমার ছেলেকে ১০০ বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে, আর তার স্ত্রীকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে।
তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘শোনো, আমার জান যার হাতে তার শপথ করে বলছি! আমি অবশ্যই তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করব। তোমার বকরি এবং বাঁদি তোমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তোমার ছেলেকে ১০০ বেত্রাঘাত করে হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করা হবে। তার পর উনায়স আসলামি রা:-কে বললেন, হে উনায়স! এই লোকের স্ত্রীর কাছে যাও। যদি সে স্বীকার করে, তবে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করো। তার পর মহিলাটি জিনার কথা স্বীকার করলে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হলো।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, মুয়াত্তা মালিক, দারিমি) পরকীয়া একটি বিষফল, যে বিষক্রিয়ায় নিষ্পাপ শিশুসন্তানকে হারাতে হচ্ছে মায়ের আদর। পরকীয়ার পথে সন্তান বাধা হওয়ায় সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করছে বিকৃত মস্তিষ্কের পিতামাতা নামক পরকীয়া অপরাধী। স্নেহময়ী মাকে রাক্ষুসীতে পরিণত করছে পরকীয়া, বাবাকে পশুতে পরিণত করছে। একবার ভাবুন, সন্তানকে হত্যা করাও কি স্বাভাবিক? হ্যাঁ আজকাল কিছু লম্পট চরিত্রহীন মানুষ পরকীয়ার জন্য এমন নৃশংস কাজ করছে। এমনকি পত্রিকায় দেখা যায় পরকীয়ার পথে বাধা হওয়ায় স্ত্রীকে টুকরো টুকরো করে লাশ গুম করা হচ্ছে।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: বলেছেন, ‘ব্যভিচারী ব্যভিচার করা অবস্থায় মুমিন থাকে না। চোর চুরি করা অবস্থায় মুমিন থাকে না। মদ্যপায়ী মদ্যপানকালে মুমিন থাকে না। তবে তার পরও তওবা অবারিত।’ (সহিহ বুখারি)
পরকীয়ার ফলে বাড়ছে সামাজিক অশান্তি, ভেঙে যাচ্ছে সংসার। ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে পরকীয়া, সহজলভ্য মুঠোফোন, অনৈতিক ভিডিও, অনলাইন চেটিং, পার্ক বা উদ্যানগুলোর নিরাপত্তা, তাকওয়াহীনতা পরকীয়াকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। গোটা সমাজের অশান্তির কারণ হওয়ায় বিবাহিত পুরুষ কিংবা নারী যদি ব্যভিচার তথা পরকীয়ায় লিপ্ত হয়, তাহলে ইসলাম মৃত্যুদ- ঘোষণা করে কঠোর হস্তে তা মোকাবেলা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেহেতু এর ক্ষতি ভয়ঙ্কর, মারাত্মক ও তীব্র, তাই ইসলামের কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটি অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩২)। লেখক : শিক্ষার্থী, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com