বরিশালে প্লাস্টিকের রঙ-বেরঙের পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন দন্ত চিকিৎসক পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ। বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত রামানন্দেরআঁক গ্রামে বাড়িটির নির্মাণকাজ চলছে। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি থাকলেও এরই মধ্যে এলাকার ভিতর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বাড়িটি। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলে বালু ভরে এরপর তা ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়ির দেয়াল তৈরি কাজে। ইটের বদলে সারি সারি প্লাস্টিকের বোতলে সিমেন্টের গাঁথুনি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এসব দেয়াল। শখ করে বাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে বোতল বাড়ি। প্রথম দিকে বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের এমন পদ্ধতি দেখে হাসি-তামাসা করা হলেও এখন সেই বাড়িটি নিয়ে গর্ব করে এলাকাবাসী। এলাকাবাসী জানায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা এসব বোতল বস্তায় ভরে ট্রাকে করে এনে মজুত করেন পলাশ। তখন তারা বোতল মজুদ করার কথা জানতে চাইলে বলেন, বাড়ি বানাব। প্রথমে এসব নিয়ে অনেক হাসি-তামাসা হলেও এখন সত্যিই বাড়ি বানানো হয়েছে। এমন বাড়ি বরিশাল বিভাগে মাত্র একটি। বাড়িটি দেখতে অনেকে আসে। পলাশের এমন কাজ এলাকার জন্য গর্বের বলে মনে করেন তারা। বাড়ি নির্মাণে পরিত্যক্ত বোতল ব্যবহারের বিরোধিতা করেছিলেন পলাশের পরিবার ও বন্ধুরা। এখন নির্মিত বাড়ি দেখে তারা সকলেই খুশি। পলাশের বাবা জ্যোতিষ চন্ত্র বাড়ৈ বলেন, ‘প্রথমে আমার কাছে যখন পলাশ বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর বিষয়ে অনুমতি নিতে আসলে আমি না করে দিয়েছিলাম। পরে তার জোরাজুরিতে রাজি হই। এখন তো দেখি ভালোই হয়েছে।’ পলাশের মা কমলীনি বাড়ৈ বলেন, ‘সবাই আমার ছেলের এমন কর্মকান্ডে বিভিন্ন কথা বলাবলি করত। এতে আমার মন খারাপ হতো। এখন সবাই পলাশের প্রশংসা করে। মা হিসেবে তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’ পলাশের স্ত্রী জুই রানী দাশ বলেন, ‘প্রথমে শ্বশুর-শাশুড়ি ও আমিসহ পরিবারের সবাই পলাশকে এ বিষয়ে বারণ করি। কিন্তু পলাশ কথা শোনেনি। এখন বাড়িটি নিয়ে সবাই প্রংশসা করে। আমারও এখন ভালোই লাগে।’অপরদিকে অভিনব পদ্ধতিতে বাড়ি নির্মাণের কাজ করতে পেরে খুশি রাজমিস্ত্রী ও শ্রমিকরা। রাজমিস্ত্রী মতি সিকদার জানান, ১০ বছর ধরে রাজ মিস্ত্রির কাজ করি। বোতল দিয়ে বাড়ি বানানো এটাই প্রথম। পলাশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাড়ি নির্মাণ শুরু করি। বাড়ির নির্মাণ কাজ খুবই মজবুত। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ির কোনো ক্ষতি হবে না। দন্ত চিকিৎসক পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ জানান, জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার কারা হয়েছে। বিভিন্ন ভাঙারির দোকান থেকে বোতল কিনে সেগুলোর ভেতরে বালু ভর্তি করে সিমেন্টের গাঁথুনি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দেয়াল। বালুভর্তি এসব বোতল দিয়ে মাটির নিচ থেকে আড়াই ফুটের বেশি ভিত তৈরি করে এর ওপর দেয়ালের গাঁথুনি দেয়া হয়েছে। বাড়িটির দেয়াল গ্রীষ্ম কালে ঠান্ডা আর শীতে গরম থাকবে। এছাড়া বাড়িটির দেয়াল বুলেট প্রুফ। বাড়িটি দ্বিতল করার ইচ্ছা তার। ১৫২৫ স্কোয়ারফুট জায়গায় পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটি নির্মাণে মোট ব্যায় হবে ৮ লাখ টাকা। ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাকা বাড়ির চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ কম খরচে এ বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব বলে দাবি পলাশের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বলেন, ‘এমন বাড়িতে খরচ কিছুটা কম। তবে এ ধরনের বাড়ি কতটা টেকসই ও পরিবেশ বান্ধন তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার।’ বাড়িটি সরেজমিনে দেখতে যাবেন বলেও জানান তিনি।