বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়েছিল।
দেশে আবার এ ধরনের সফটওয়্যারের সন্ধান পেয়ে কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়কে অভিহিত করা হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন লেনদেনে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবগুলোতে লেনদেনের ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে। এ বিষয়ে শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত- এ ৫ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে একাধিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বিশেষ নজরদারি করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও অনলাইন লেনদেনে অধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
সূত্র জানায়, শুক্রবার বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নেতৃত্বে গঠিত একটি জাতীয় টাস্কফোর্স দেশের আর্থিক খাতে ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারের সন্ধান পেয়েছে। ম্যালওয়্যার হচ্ছে এমন একটি গোপন সফটওয়্যার যা কোনো মেইল বা বার্তার মাধ্যমে যে কোনো একটি অনলাইন সিস্টেমে প্রবেশ করে এর সব ধরনের অতি গোপনীয় তথ্য কপি করে উৎস স্থলে বা প্রেরকের কাছে পাঠাতে পারে। এর মধ্যে আছে সিস্টেমস পরিচালনার ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড, সিস্টেমস পরিচালন পদ্ধতি ইত্যাদি তথ্য। এগুলো ব্যবহার করে ম্যালওয়্যারের প্রেরক সিস্টেমস হ্যাক করতে পারে। অর্থসহ অন্যান্য তথ্য চুরি করতে পারে।
ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার দিয়েই ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ডলার চুরি হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দেশের আর্থিক খাতে ম্যালওয়্যারের মতো সফটওয়্যারের সন্ধান পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে উঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুক্রবারই ব্যাংকগুলোতে নির্দেশ পাঠানো হয় অনলাইনে সতর্ক থাকার জন্য। একই সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেনেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। গত ৫ দিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ বিষয়টি মনিটরিং করছে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে অনলাইনে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি টেলিফোনেও যোগাযোগ করছে। বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন পরিস্থিতিতেও বিশেষ নজর রাখছে। এর অংশ হিসেবে রোববার ছুটির দিনেও অনেক ব্যাংকের অনলাইন শাখা ও কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা অফিস করেছেন। এটিএম বুথগুলোতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক তাদের নিজস্ব কার্ড ছাড়া অন্য ব্যাংকের কার্ড বা আন্তর্জাতিক কার্ডের লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
ব্যাংকগুলোতে অনলাইন লেনদেন দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সব ব্যাংক যুক্ত আছে। ফলে এর মাধ্যমে যে কোনো ব্যাংকের গ্রাহক অন্য যে কোনো ব্যাংকের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে লেনদেন করতে পারেন। ম্যালওয়্যার এ পদ্ধতিতে প্রবেশ করে খুব সহজেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা করা হচ্ছে।
এ কারণেই অতি মাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এদিকে ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারটিকে অকেজো করতে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। একই সঙ্গে তারা এর গতিবিধির ওপর বিশেষ নজর রাখছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নতুন পাওয়া ম্যালওয়্যারটি বড় ধরনের বিপদ ঘটাতে পারত। কিন্তু তার আগেই এটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এখন সবাই সতর্ক। নতুন করে আর কিছু করতে পারবে না। আগে কিছু হয়ে থাকলে সেগুলোকে এখন শনাক্ত করার কাজ চলছে।