যে সব শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অথবা পরিবারের অবহেলায় পথে পথে ঘুরে বেড়ায় এবং পথকেই ঠিকানা করে নেয় তাদের পথশিশু হিসেবে পরিচিত। পথশিশু শব্দটি সেই সব শিশুকে নির্দেশ করে, যাদের কাছে রাস্তাই হলো একমাত্র বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহের উৎস। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে কয়েক লাখ পথশিশু বসবাস করছে রাস্তায় এবং এদের ৭৫ শতাংশই রাজধানী ঢাকায় বসবাস করে। মানব উন্নয়ন সূচকে ১৩৮তম স্থানে থাকা বাংলাদেশ, যেখানে জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, সেখানে এই শিশুরা সামাজিক স্তরগুলোর সর্বনি¤œ স্তরের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশের জনসংখ্যা এখন বেড়েছে, ফলে রাস্তার শিশুর সংখ্যাও বেড়েছে। বাংলাদেশের অনেক রাস্তার ছেলেমেয়ে কম বয়সে মারা যায়, তারা প্রয়োজনীয় যতœও পাচ্ছে না, বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও গবেষণামূলক তথ্য থেকে এ জানা গেছে । প্রতি বছর জলবাহিত রোগে লক্ষাধিক শিশুর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের রাস্তার শিশুরা স্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে অক্ষম, যা অনেক সময় তাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপযুক্ত নয় এমন খাবার খেতে বাধ্য করে। আবার দেখা যায়, বাংলাদেশের পথশিশুদের অনেকেই বিভিন্ন গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সংগঠিত অপরাধ ব্যাপক, যেখানে সংগঠিত অপরাধ গোষ্ঠীর নেতাদের ‘মাচাবাসী’ বলা হয়। এরা পথশিশুদের দ্বারা তাদের অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত করে। পথশিশুদের মাদকসেবনসহ নানা নেশাজাতীয় জিনিসে বা দ্রব্যে আকৃষ্ট হওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। শিক্ষার সুযোগ লাভ করা শিশুর অন্যতম মৌলিক অধিকার। অধিকাংশ দেশেই সামাজিক দায়দায়িত্বের অংশরূপে এবং অভিভাবকের দিকনির্দেশনায় কিংবা রাষ্ট্রের বাধ্যতামূলক শিক্ষানীতির আলোকে শিশুরা বিদ্যালয় গমন করে। এছাড়া ক্ষুদে শিশুরা কিন্ডারগার্টেনের প্লে-গ্রুপে আনন্দ ও খেলার ছলে শিক্ষাগ্রহণ করে শৈশবকালীন প্রাথমিক শিক্ষাকে আলোকিত ও আনন্দময় করে তোলে। সেখানে আমাদের দেশের পথশিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার নিশ্চিতকরণে উদাসীনতা কেন? আজকের পথশিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ হতে পারে। এর জন্য চাই, আন্তরিকতার সহিত পথশিশুদের পরিচর্যা ও তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করা।
তাই বাংলাদেশের পথশিশুদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য ও তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা মাফিক উদ্যোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি দেশের বিত্তবান, ধনী শ্রেণির লোকদের এই পথ শিশুদের ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত। আর যেসকল সংস্থা শিশুদের জন্য কাজ করে তাদেরও পথশিশুদের সুরক্ষা ও মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে আসা উচিত। সকলেই যার যার স্থান থেকে আন্তরিকতার সহিত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে একদিন আমাদের দেশে পথশিশু বলতে আর কিছুই থাকবে না। প্রত্যেক শিশুই তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে বেড়ে উঠবে। এবং একদিন দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখার মতো যোগ্য হয়ে উঠবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। আমরা আশা করি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টি গুরুত্বে সাথে বিবেচনা করবেন। তাদের জীবনমান উন্নয়নে নিরাপদ আবাস, খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তা হলে তারাও দিন দেশ ও জাতির সম্পদে পরিণত হবে। না হলে তারা হবে জাতির জন্য বোঝা এবং নানান অপরাধে জড়িয়ে নিজেরাও ধ্বংস হবে, জাতিকেও ধ্বংসের দিকে নিযে যাবে । যা আমাদের কারো কাম্য নয়।