রাখাইনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে সজাগ নজর রাখছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাখাইনের আরাকান আর্মির সংঘর্ষের প্রভাবে সীমান্তে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এজন্য সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ওই অঞ্চলে ঘনীভূত সংকটের কারণে দ্বিমুখী সমস্যায় রয়েছে বাংলাদেশ। একদিকে রাখাইনে সংঘর্ষের কারণে সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। অপরদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণভাবে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছে। এছাড়া আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্বনেতৃত্বের সঙ্গে রোহিঙ্গা বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোতে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে বাংলাদেশের। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। কিন্তু সংঘর্ষের কারণে রাখাইনে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ছে, যা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। এজন্য এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও বেশি সম্পৃক্ততা চায় সরকার।’ তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে আমরা সীমান্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিভিন্ন বাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রেখেছি। যেকোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে।’
আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা: এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা রাখা দরকার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারে জাতিসংঘ সহায়তাকারীদের নির্বিঘেœ প্রবেশ নিশ্চিত করার বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চীন, ভারত ও আসিয়ান জোটের রাষ্ট্রগুলো এক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকাও জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো, ভারত, চীনসহ অন্য সব দেশকে সীমান্ত পরিস্থিতি অবহিত করেছে এবং এ সংকট নিরসনে তাদের পরামর্শ চেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আমাদের জানিয়েছেনÍতারা তাদের দেশকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জানাবে।’ এছাড়া, আমরাও আমাদের দূতাবাসগুলোকে একটি সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছি, যাতে আমাদের কূটনীতিকরা নিজ নিজ কর্মদেশের কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে পারেন বলে তিনি জানান।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়েছে এবং সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যাতে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করা হয়। এছাড়া, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞা (টার্গেটেড স্যাংশন) কাজ করছে না। এক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ানোর জন্যও আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ বলে তিনি জানান।
অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি: ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার আবারও রাখাইনে সংঘর্ষ শুরু হলে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে রোহিঙ্গারা আর প্রবেশ করতে না পারে। সীমান্ত পরিস্থিতি নজরদারির জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও এজেন্সিগুলো নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। সামনে আরও একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে সীমান্তে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে সংঘর্ষের মাত্রা কিছুটা কম হলেও নজরদারি কমানো হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নতুন করে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এছাড়া ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেনাবাহিনী সক্রিয় হবে।’ এ অঞ্চলের সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে মিয়ানমার সরকার এবং এজন্য বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আছে। কিন্তু তারা কারও কথা মানছে না। শুধু জাতিসংঘ কেন, আসিয়ান দেশগুলোও কম চেষ্টা করেনি।’ রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।-বাংলাট্রিবিউন