বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

‘ঢাকা চাকা’ ও ‘গুলশান চাকা’: ভাড়া বেশি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২

২০১৬ সালে গুলশান ও বনানী এলাকার যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক সেবা দিতে চালু করা হয় ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস। তিন বছর পর ২০১৯ জুলাইয়ে ঢাকা চাকার সঙ্গে যোগ হয় ‘গুলশান চাকা’ নামে আরেকটি কোম্পানির বাস। জানা গেছে, এই দুটি কোম্পানি যাত্রীসেবা দিয়ে যেমন লাভের মুখ দেখেছে, তেমনি তাদের বাসের সংখ্যাও বেড়েছে তিনগুণ। সেই সঙ্গে গুলশানের বাইরেও বাড়ানো হয়েছে তাদের বাস চলাচলের রুট। তবে যাত্রীদের দাবি, সুশৃঙ্খল সেবা দেওয়া হলেও গত পাঁচ বছরে বাস ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ।
জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের হাত ধরে ২০১৬ সালে ৩৫ আসনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১০টি বাস নিয়ে ‘ঢাকা চাকা’ নামে সার্ভিস চালু করে নিটোল টাটা কোম্পানি। পরে আরও ২০টি গাড়ি বাড়ানো হয়। প্রথমদিকে নতুন বাজার থেকে কাকলী এবং গুলশান-২-এর মধ্যে চলাচল করে ঢাকা চাকা। এরপর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে হিমাচল পরিবহন চালু করে ‘গুলশান চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আরেকটি বাস সার্ভিস। কোম্পানি দুটো টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম একসঙ্গে করে।
বেড়েছে বাস ও রুট: শুরুর দিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই বাসগুলোর চলাচল ছিল মাত্র দুটি রুটে। নতুন বাজার থেকে কাকলী, আর গুলশান-২ থেকে শুটিং ক্লাব পর্যন্ত। বর্তমানে গুলশানের বাইরেও সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে গুলশান-২ থেকে শুটিং ক্লাব হয়ে তেজগাঁও জিএমজি মোড় এবং নতুন বাজার থেকে বেরাইদ রুটে ঢাকা চাকা ও গুলশান চাকার বাস চলাচল করছে। দুটি কোম্পানির আওতায় এখন ১০০টি বাস রয়েছে। এরমধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৮০টি বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছেন মালিক ও শ্রমিকরা।
ঢাকা চাকা ও গুলশান চাকায় নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীরা বলছেন, পরিবহন দুটির সেবা ভালো-সুশৃঙ্খল, কিন্তু তাদের ভাড়া অত্যন্ত বেশি। ২০১৬ সালে চালুর সময় যেখানে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, সেই ভাড়া এখন নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা।
জানা গেছে, নতুন বাজার থেকে কাকলী পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তায় ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। অপরদিকে নতুন বাজার থেকে বেরাইদ, গুলশান-২ থেকে শুটিং ক্লাব এবং তেজগাঁওয়ের ভাড়াও ৩০ টাকা। কাকলী কাউন্টারে টিকিটের দাম প্রসঙ্গে কথা হয় সরকারি কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ পরিবহনের সেবা ভালো হলেও টিকিটের দাম অনেক বেশি। মাত্র দুই কিলোমিটার পথে আমার আসতে-যেতে ৬০ টাকা খরচ হয়। এটা জুলুম পর্যায়ে চলে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের উচিত এখানে টিকিটের দাম নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করা। শুরুর দিকে টিকিট কিনতাম ১৫ টাকায়, এখন তা ৩০ টাকা। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।’ নতুন বাজারে টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। এই প্রতিবেদককে তারা জানান, নতুন বাজার থেকে বনানী পর্যন্ত তাদের জনপ্রতি ২৫ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থী ভাড়া অর্ধেক করার দাবি জানিয়ে আসছে।
এসি বাসে লাভ কেমন হয়:বাস মালিকরা জানিয়েছেন, ঢাকা চাকা ও গুলশান চাকা বর্তমানে এক কোম্পানির অধীনে চলছে। ব্যবসায় তারা লাভও করছেন। ঢাকা চাকার চেয়ারম্যান মন্টু মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৮০টি বাস চলে। প্রতিটি বাস গড়ে ১০টি করে ট্রিপ দেয়।’ লাভ কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুপারভাইজার, চালক, সহকারী ও লাইনম্যানসহ ২০০-এর বেশি কর্মচারী আছে। তাদের বেতন ও মজুরি দেওয়ার পরও ভালোই লাভ হয়। লাভ হাওয়ার কারণ হচ্ছে— এসব বাসে কোনও দুর্ঘটনা নেই। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুলশানের রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। এতে জ্বালানি খরচ বেশি হয়। যানজট না থাকলে লাভ আরও বেশি হতো।’
আইনের ফাঁকফোকরে ভাড়া বৃদ্ধি: গত পাঁচ বছরে ঢাকা ও গুলশান চাকা ভাড়া বাড়িয়েছে দ্বিগুণ, যা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত প্রতি কিলোমিটার ২.৩৫ টাকা হিসাবের ছয়গুণ বেশি। এ বিষয়ে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইনের ৩৪ নম্বর ধারায় বলা আছে— কর্তৃপক্ষ গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করবে। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল কিংবা বিশেষ সুবিধা সংবলিত গণপরিবহনের ভাড়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। এটা (চক্রাকার বাস) সেই পরিবহন কিনা আমার জানা নেই। রাজউককে সরকার সেই ক্ষমতা দিয়েছে কিনা সেটাও জানা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে অযৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে থাকলে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিআরটিএ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে আইনে উল্লেখ আছে।’ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘আইনে আমাদের ভাড়া নির্ধারণের নিয়ম নেই। ভাড়া নির্ধারণ করবেন বাস মালিকরা। তবে, যাত্রীরা অভিযোগ করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে।’ নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, তাদের কাছে কেউ এ ধরনের অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেবেন। যদিও এখন পর্যন্ত এরকম কোনও অভিযোগ তারা পাননি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com