চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জলাশয়ে ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য কৃষক এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সবজি উৎপাদনে সফলতা আশা করছেন। তাদের এই কাজের প্রশিক্ষণ, কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা করছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস। তাদের এই পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্য কৃষকরা বেড করে সবজি উৎপাদনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কৃষকরা জানান, কচুরিপানা ও বাঁশের সাহয্যে জলাশয় বা পুকুরে ভাসমান বেড তৈরী করে সবজি উৎপাদন করা হয়। বর্ষা মৌসুমে যখন ফসলি জমিতে পানি উঠে যায়, তখন অনেক জমি পতিত হয়ে পড়ে। কোন ধরণের আবাদ হয় না। তখন ইচ্ছে করলে এসব জমিতে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরী করা যায়। পানি বাড়লেও সবজির ক্ষতি হওয়ার কোন আশঙ্কা থাকে না। তবে অধিক বৃষ্টিপাত হলে সবজির ক্ষতি হয়। উপজেলার সোভান গ্রামের কৃষক মিজান তালুকদার বলেন, বেড করে সবজি উৎপাদন তার আগেরও কিছু অভিজ্ঞতা আছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকেও কিছু কারিগরি পদ্ধতি শিখেছেন। ইতোমধ্যে উৎপাদিত লাউ, টমেটো, বেগুন সহ আরো কয়েক পদের চারা বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতি ১শ’ চারা বিক্রি করেনে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। চাঁদপুর জেলায় এসব চারা বিক্রি হয়। এছাড়াও এসব চারা ক্রয় করতে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকার আসে। প্রতিদিন ভোরে ব্যবসায়ীরা এসে চারাগুলো ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। ৩নং সুবিদপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও এলাকার আরেক কৃষক মোঃ আঃ কাদির বলেন, কৃষি অফিসের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বর্ষার শুরুতে আমরা বাড়ীর পাশে ডাকাতিয়া নদীতে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরী করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে এসব বেডে নিজেদের জমি ও পুকরে নিয়ে আসব। আমার ১৫টি বেড আছে। আমরা পরিবারের ৩জন কাজ করি। এখন লাউ, টমেটো, বেগুন সহ বিভিন্ন চারা উৎপাদন হচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে লাল শাক, কুমড়ার শাক, পুঁই শাক, পালং শাক, ধনিয়া উৎপাদন হবে। এভাবে শুকনো মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। আশা করি আমরা লাভবান হব। তিনি আরো বলেন একসময় তিনি সৌদি আরব ছিলেন।সেখানথেকে এখানে তার অনেক বেশি ইনকাম হয়। কৃষক মারুফা, পাহাদ, এমরান বলেন, বর্ষার সময় এখানে কোন কাজ থাকেনা। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের পর আমরা কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরী করে চারা ও সবজি উৎপাদন শুরু করেছি। ভাসমান বেড প্রক্রিয়ায় সবজি উৎপাদন করতে সার ও কীটনাশকের তেমন ব্যবহার করতে হয় না। ফলে কম খরচে সবজি উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া জৈব পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদিত হয় বিধায় ভালো দামে সবজি বিক্রি করা যায় এবং চাহিদাও বেশী। তারা আরো বলেন, আমাদের ৩নং সুবিদপুরের বাগপুর গ্রামে প্রথমে কয়েকজন কৃষক এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন শুরু করলেও এখন অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়, সে কারণে দিন দিন চাষীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ বলেন, আমাদের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া, সুবিদপুর ও শোভান গ্রামে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ভাসমান বেডের উপর চারা ও সবজি উৎপাদন শুরু করছে। আমাদের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কৃষিবিদদের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং ভাসমান বেড তৈরী ও সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষকগণ যাতে সহজে সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চাচ্ছি এই পদ্ধতিতে কৃষক সারা বছর একাধিক সবজি উৎপাদন করবে। এতে তাদের আয় কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে।