শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

৩ দিনে মারা গেছে ১৪ কোটি টাকার মাছ, পথে বসেছেন চাষিরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সারাবিশ্বে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ। আর এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই দশকে রাজশাহীতে মাছ চাষে ঘটেছে বিপ্লব। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় তাজা মাছ সরবরাহে রাজশাহীর অবস্থান প্রথম। কিন্তু গত তিনদিনের প্রতিকূল আবহাওয়ায় অক্সিজেন স্বল্পতায় মরে গেছে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার মাছ। এতে করে রাজশাহীর মাছচাষিরা পথে বসেছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান, রাজশাহীতে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রায় ৬১৬ মেট্রিক টন মাছ মরে গেছে। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পুকুরে এসব মাছ মরে পানিতে ভেসে ওঠে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার ৪ হাজার ৯৩০ জন মাছচাষির প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, গত তিনদিন রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ ছিল মেঘলা। এ কারণে পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। এতে পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে। রাজশাহীর আশপাশের জেলাগুলোতেও একইভাবে পুকুরের মাছ মরে গেছে। এতে চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার মাছ চাষিরা। এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মাছচাষ হয়। এছাড়া জেলার দুর্গাপুর, মোহনপুর, বাগমারা ও গোদাগাড়ীসহ সব উপজেলাতেই মাছের ক্ষতি হয়েছে। যেসব পুকুরে বড় আকারের মাছ ছিল সে পুকুরেই বেশি মাছ মরে গেছে। বড় বড় মাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রির চেষ্টা করেছেন চাষিরা। জেলার মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটে বৃহস্পতিবার ভোরে অন্যান্য দিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মাছ নিয়ে চাষিরা আড়তে যান। অতিরিক্ত মাছ আমদানির কারণে আড়তদাররা মাছ বেচাকেনা বন্ধ করে দেন। এদিন কেশরহাট বাজারে ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের মাছ ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি সিলভার কার্পের দাম ছিলো আরও কম। অনেক মাছ পচে নষ্ট হওয়ার কারণে অনেকেই মাছ ফেলে দেন। অতিরিক্ত মাছ আমদানির কারণে রাজশাহী-নওগাঁ মহসড়কের কেশরহাটের বড়ব্রিজ এলাকায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যানজট তৈরি হয়। দুর্গাপুর উপজেলার মাছচাষি আফসার খান জানান, বুধবার বৃষ্টির পরই তিনি পুকুরে গিয়ে মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখেন। তার চোখের সামনেই লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। এক দিনেই তার বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
বাগমারা উপজেলার মাদারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, হাটগাঙ্গোপাড়াসহ বিভিন্ন মাছের আড়তগুলোতেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। এসব আড়তে ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের রুই, কাতলা ও সিলভার মাছ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা গ্রামের মাছচাষি কাদের আলী জানান, বুধবার সকালে জানতে পারেন তার পুকুরের মরা মাছ ভাসছে। বিষয়টি জেনে পুকুরে গেলে ততক্ষণে অনেক মাছ মরে ভেসে উঠে। পরে মাছগুলোর কিছু তুলে বাজারে নেন। বাকি মাছ পুকুরে পচে গেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান, তিনদিন আবহাওয়া খারাপ ছিল। রাজশাহীর অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা পুকুরে অতিরিক্ত খাবার দিয়ে মাছচাষ করেন। যার কারণে পুকুরগুলোতে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। আর এতেই মাছ মারা গেছে। এছাড়া অনেকেই পুকুরে অতিরিক্ত মাছচাষ করেন। বর্ষার আগেই পুকুরের মাছ কমিয়ে ফেলা উচিত।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার তারা ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন। এতে বলা হয়েছে, দুই দিনে রাজশাহীর প্রায় ৬১৬ মেট্রিক টন মাছ মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা ৪ হাজার ৯৩০ জন। তাদের ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটা কম-বেশি হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতির এই হিসাব মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিশারিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম মনজুরুল আলম জানান, সূর্য্য না ওঠার কারণে পুকুরের উদ্ভিদকণা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারেনি। উদ্ভিদকণা কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ছাড়তে পারেনি। এ কারণে পুকুরে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। আর করোনাকালে চাষিরা মাছ বিক্রি করতে পারেননি। পুকুরে অতিরিক্ত মাছ ছিল। তাই অক্সিজেন স্বল্পতায় মাছ মরতে শুরু করে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী জেলায় প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পুকুর রয়েছে। বছরে মাছের উৎপাদন হয় প্রায় ৮৪ হাজার মেট্রিক টন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com