বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন

আজ রংপুরে বিএনপি’র সমাবেশ: একদিন আগেই সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের ঢল

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২

বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সমাবেশ আজ শনিবার। এদিন দুপুর ২টায় শহরের কালেক্টরেট ঈদগাঁ মাঠে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর। এতে যোগ দিতে একদিন আগেই সমাবেশস্থলে যোগ দিতে দলবেধে আসছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। বিএনপির রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে আজ শুক্রবার ভোর থেকে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে জেলা মোটর মালিক সমিতি। এতে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আগে ভাগেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করছেন বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। বাস বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে রংপুরে আসছেন তারা। কেউ মাইলের পর মাইল হেঁটে, কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে করে সমাবেশস্থলে আসছেন। আজ জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে এসব নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। কারো হাতে কাথা-বালিশ, কারো হাতে শুকনো খাবার, আবার কারো হাতে প্লাকার্ড। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে নানা অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের।
কেউ কেউ সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করেই সরকার গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে। গণপরিবহন বন্ধ রেখে শহরের প্রবেশ পথে বিভিন্ন পয়েন্ট বাধা দিচ্ছেন সরকার দলের নেতাকর্মীরা। তবে কোন বাধাই এই সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে পারবে না।
আগে আসা নেতাকর্মীরা শহরের বানিয়াপাড়া এলাকায় খোলা মাঠে চুলা জ্বালিয়ে সবজি-খিচুড়ি রান্না করে ভাগাভাগি করে খেতে দেখা যায়। তাদের কয়েকজন বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা ঠাকুরগাঁও থেকে রওয়ানা হয়ে বানিয়াপাড়া আসেন। সমাবেশস্থল কাছে হওয়ায় তারা সেখানেই কাথা বালিশ নিয়ে রাত্রি যাপন করেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনা সমাবেশের পর ভিন্নমাত্রা যোগ হচ্ছে রংপুরের সমাবেশে। এই সমাবেশ বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হবেন। সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে আমাদের নেতাকর্মীদের পথরোধ করতে পারবে না। বাধা দিলে আরো বেশি মানুষ আসবে। বিএনপির সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য মানুষ মাইলে পর মাইল পায়ে হেঁটে রওয়ানা করেছেন। তারা রাতের মধ্যে সমাবেশস্থলে জড়ো হবেন। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা চিড়া, মুড়িসহ বিছানা নিয়ে আসছেন। শত কষ্টের মধ্যেও তারা সমাবেশে যোগ দেবেন।
সমাবেশ উপলক্ষ্যে ক্রমেই রংপুর শহরে বাড়ছে মানুষ। সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু মানবজমিনকে বলেন, সরকার আমাদের সমাবেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পরিবহন ধর্মঘটের নামে দেশের মানুকে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে কোন বাধা আমাদের সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না। মানুষ যে যেভাবে পারছেন সমাবেশে আসছেন। রাতের মধ্যেই পুরো মাঠ ভরে যাবে। মে র কাজ দ্রুতই শেষ হচ্ছে। দেশের মানুষ তাদের দাবি আদায়ের জন্য এই সমাবেশে যোগ দেবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা ২৯শে অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছি। তবে সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় এখন আমাদের সমাবেশ দুই দিন হচ্ছে। আজ থেকেই সমাবেশ শুরু হয়ে গেছে। মানুষ দল বেধে আসছে। আরো আসবে। রংপুরের দিকে আসতে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদের কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক ও দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কসহ বিভিন্ন আ লিক সড়কে বাধা দেয়া হচ্ছে। তবে এসব সরকারের কোন লাভ হয়নি। উল্টো নেতাকর্মীরা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে মাঠে উপস্থিত হয়েছে। রাতের মধ্যে সবাই চলে আসবে।
অধিকাংশ নেতা-কর্মী রংপুরের পথে: রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে গাইবান্ধা বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই রংপুরে পৌঁছে গেছেন। আবার অনেকে গতকাল শুক্রবার সকালে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এ অবস্থায় গাইবান্ধা জেলা বিএনপি কার্যালয় ফাঁকা পড়ে আছে। গাইবান্ধা শহরের সার্কুলার রোডে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। কার্যালয়ের সামনেও কোনো নেতা-কর্মীকে পাওয়া গেল না। অথচ অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে এ সময় বিএনপি কার্যালয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে সরব থাকে। তবে গতকাল শুক্রবার ছিল বিপরীত চিত্র। পাশের এক চা-দোকানি বললেন, ‘অফিসে কেউ নাই। সবাই রংপুরে যাচ্ছেন।’
আজ শনিবার রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিকে আজ সকাল থেকে গাইবান্ধা থেকে রংপুরসহ সব রুটে বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। তবে বিএনপির নেতা–কর্মীদের যাত্রা থেমে নেই। গতকাল থেকেই তাঁরা রংপুরে যাওয়া শুরু করেছেন। বিএনপির নেতা–কর্মীরা বলেন, গতকালই অন্তত পাঁচ হাজার নেতা-কর্মী বাসযোগে রংপুরে গেছেন। আজ সকাল থেকেও তাঁরা বিকল্প উপায়ে রংপুর যাচ্ছেন। জেলার অন্তত ১০ নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস না পেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গাইবান্ধা থেকে সুন্দরগঞ্জ হয়ে রংপুরে ঢুকছেন। সদর উপজেলা ও সুন্দরগঞ্জ অন্য উপজেলার নেতা–কর্মীরা বিশ্বরোড দিয়ে রংপুর যাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘বাসে গাইবান্ধা থেকে রংপুরে যেতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আজ শনিবার সকালে ইজিবাইকে গেলে হয়তো ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারব না। তাই সকাল নয়টায় রওনা দিই। তিন ঘণ্টায় রংপুর পৌঁছে গেছি। তবে এখানে হোটেলে ফাঁকা পাইনি। তাই আজকের রাতটা ছোট ভাইয়ের সঙ্গে একটি ছাত্রাবাসে থাকব।’
সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের বিএনপি নেতা জামিরুল মিয়া বলেন, ‘কাল শনিবার ভোরে অটোরিকশায় যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অনেক চালক রংপুরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে বিকল্প পথে রংপুরে যাব।’ জেলা বিএনপির সভাপতি মইনুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাইবান্ধার সাতটি উপজেলা থেকে অন্তত ২৫ হাজার নেতা-কর্মী আজ গণসমাবেশে যোগ দেবেন। নেতা-কর্মীর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বিএনপির সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। খুলনা ও ময়মনসিংহের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ধর্মঘটের বিষয়টি আঁচ করেছি। তাই নেতাকর্মীরা আগে থেকেই রংপুরে গেছেন। সেখানে তাঁরা পরিচিত নেতা–কর্মী, আত্মীয়স্বজন ও হোটেলে থাকছেন।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ও জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইলিয়াছ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুশাসন দেখে দেশে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির গণসমাবেশগুলো তা প্রমাণ করে। পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে, মামলা হামলা করে বিএনপির আন্দোলনকে থামানো যাবে না। কাল কোনো নেতা-কর্মী গাইবান্ধায় থাকবেন না। কালকে সবার অবস্থান হবে রংপুরে। এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে গাইবান্ধা থেকে সব রুটে বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। আজ সকালে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। সাধারণ যাত্রীদের অনেকেই ধর্মঘটের বিষয়টি না জানায় বাস টার্মিনাল এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে অটোরিকশাসহ অন্যান্য ছোট যানে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোলালি গ্রামের ব্যবসায়ী ফিরোজ কবির বলেন, তিনি প্রতি শুক্রবার দোকানের মালামাল কিনতে বগুড়া যান। সেখানে সারাদিন মালামাল কিনে পরদিন আবার গাইবান্দায় ফিরে আসেন। সকালে বাস টার্মিনালে এসে জানতে পারেন বাস বন্ধ। এখন বাধ্য হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তিনি ভেঙে ভেঙে বগুড়া যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন বলেন, মহাসড়কে নসিমন, অটোরিকশাসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে রংপুর বিভাগীয় কমিটি ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভাগীয় কমিটি থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানালে গাইবান্ধা জেলাতেও ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com