দেশের ৫টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে একটি মাত্র আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি চারটি আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং জোটের মধ্যে জটিলতা থাকায় চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। শেষমেষ গত রোববার গণভবনে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা চুলচেরা বিশ্লেষণ ও নানা হিসেব-নিকেশের পর বোর্ডের সদস্যরা দলীয় প্রধানের ওপর প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দলের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ৫টি আসনেই প্রাথমিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে কেবল পাবনা-৪ আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান মো: নূরুজ্জামান বিশ্বাসকে চূড়ান্ত করে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আর ঢাকা-১৮ আসনে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবীব হাসান, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মরহুম মোহাম্মদ নাসিম এমপির ছেলে তানভীর শাকিল জয়, নওগাঁ-৬ আসনে রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল ও মরহুম এমপি ইসরাফিল আলমের স্ত্রী সুলতানা পারভীন এবং ঢাকা-৫ আসনে কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, হারুনর রশীদ মুন্না ও কামরুল হাসান রিপনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে। একাধিক প্রার্থী হওয়ায় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় জোটের শরিকদের সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে হিসেব-নিকেশ রয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে জোট-মহাজোটের সাথে প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়ে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। ফলে বাকি চারটি আসনে কৌশলগত কারণে ঘোষণা না করে দলীয় প্রধানের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-৫ আসনে জোটের শরিক জাসদের সহ সভাপতি মো: শহীদুল ইসলাম শক্ত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। তিনি গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। জোটের মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি আর নির্বাচন করেননি। মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে জাসদও তাদের প্রার্থীর বিষয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধানকে চিঠি দেয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং জোটের প্রধান শেখ হাসিনা জোটের মুখপাত্র ও মনোনয়ন বোর্ডের অন্যতম সদস্য আমির হোসেন আমুকে শরিকদের সাথে সমন্বয় করার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন। তা ছাড়া ওই আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও বেশ দৃশ্যমান। জাসদের সহ সভাপতি ও ঢাকা-৫ আসনের উপ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সাথে নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা করেনি। আমি দীর্ঘ দিন এখানে কাজ করছি। নির্বাচন করার প্রস্তুতি আমার রয়েছে। জোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নেব। এ ছাড়াও পাবনা-৪ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দিলেও ওই আসনে জাতীয় পার্টির একজন শক্ত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছে।
সম্প্রতি ইসরাফিল আলম এমপির মৃত্যুতে নওগাঁ-৬, মোহাম্মদ নাসিম এমপির মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ-১, শামসুর রহমান শরিফ ডিলু এমপির মৃত্যুতে পাবনা-৪, হাবিবুর রহমান মোল্লা এমপির মৃত্যুতে ঢাকা-৫ এবং অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপির মৃত্যুতে ঢাকা-১৮ আসন শূন্য হয়ে যায়। ইসির তফসিল অনুযায়ী নওগাঁ-৬ ও ঢাকা-৫ আসনে আগামী ১৭ অক্টোবর ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই দু’টি আসনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন এ মাসের ১৭ তারিখে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে জটিলতা নিরসন করে এ দু’টি আসনে আগেভাগেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, সংসদীয় ৫টি আসনের উপ নির্বাচনে একটি আসন পাবনা-৪ দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি চারটি আসনে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা নেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। তিনি বলেন, ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনে নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেছে। ওই দু’টি আসনে আগেভাগেই প্রার্থী ঘোষণা হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাবনা-৪ আসনে আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আর বাকি চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা দলের সভাপতির ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। উল্লেখ্য, ঢাকা-১৮ আসনে সর্বোচ্চ ৫৬ জন আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এ ছাড়াও ঢাকা-৫ আসনে ২০ জন, নওগাঁ-৬ আসনে ৩৪ জন, পাবনা-৪ আসনে ২৮ জন ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে তিনজন দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন।