বাংলাদেশের আরও দুইটি তৈরি পোশাক কারখানাকে সবুজ কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। এর মধ্যে দিয়ে দেশের পোশাক খাতে মোট পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৮-এ। গতকাল শনিবার (২০ নভেম্বর) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল। তিনি বলেন, এ বছরে শুধু প্লাটিনাম রেটিং পেয়েছে বাংলাদেশের ১৩টি পোশাক কারখানা; যা বাংলাদেশের জন্য একটি রেকর্ড। তিনি উল্লেখ করেন, সবুজ পোশাক কারখানা ভবনের বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয়। বাংলাদেশের ৫৮টি পোশাক কারখানা প্লাটিনাম রেটিং, ১০৬টি গোল্ড রেটিং ও ১০টি সিলভার রেটিং পেয়েছে। এছাড়া চারটি কারখানা কোনও রেটিং পায়নি, তবে সনদ পেয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ইউএসজিবিসি এই কারখানাগুলোকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। সবুজ কারখানার তালিকায় বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া। মহিউদ্দিন রুবেল জানান, নতুন করে সবুজ কারখানার সনদ পাওয়া দুই কারখানার মধ্যে একটি পোশাক কারখানাকে দেওয়া হয়েছে প্লাটিনাম রেটিং। আরেকটি পেয়েছে গোল্ড রেটিং।
তিনি বলেন, গাজীপুরের বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডকে গত ১৭ নভেম্বর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউএসজিবিসি। প্লাটিনাম রেটিং পাওয়া প্রতিষ্ঠানটিকে ৮৫ পয়েন্ট দিয়েছে সংস্থাটি। আর নারায়ণগঞ্জের বর্ণালী কালেকশন লিমিটেডকে গত ২৮ অক্টোবর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। গোল্ড রেটিং পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে ৬৪ পয়েন্ট। বিজিএমইএর পরিচালক ও মুখপাত্র মহিউদ্দিন রুবেল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গ্রিন ফ্যাক্টরিতে বাংলাদেশ এখন সবার শীর্ষে। এটি দেশের পোশাক খাতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। এই সবুজ কারখানার কারণে বিশ্বমন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের পোশাক কারখানা দিকে ক্রেতাদের মনোযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, আরও প্রায় ডজনখানেক কারখানা পরিবেশসম্মত সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বর্তমানে রেমি হোল্ডিংস ও ফতুল্লা অ্যাপারেলস ১১০-এর মধ্যে ৯৭ পয়েন্ট নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সংস্কার, পারফর্ম্যান্স, জ্বালানি, পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ কয়েকটি মানদ-ের ভিত্তিতে কারখানাগুলোকে সবুজ কারখানা স্বীকৃতি দেয় ইউএসজিবিসি। এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবুজ পোশাক কারখানার দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ইফেকটিভ ম্যানেজমেন্ট অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ক্যাটাগরিতে সেরা হিসেবে পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ-কে মনোনীত করা হয়েছে। মূলত, বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল-ইউএসজিবিসি। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিড হলো- লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন।
সাধারণ স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। এছাড়া ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে অন্তত ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। এই সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরনো ভবন সংস্কার করেও লিড সনদের জন্য আবেদন করা যায়। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। এর আগে গত বছর (২০২১ সালে) সবুজায়নে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) পক্ষ থেকে লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড তথা বিশ্বে প্রথম ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল অ্যাওয়ার্ড পায় বিজিএমইএ।
বৈশ্বিক পোশাক শিল্প জগতে বিজিএমইএ ই হচ্ছে একমাত্র সংগঠন যারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই পদক অর্জন করে। এছাড়াও, বিশ্বের শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার মধ্যে নয়টির মালিক বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের মে মাসে বাংলাদেশের ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও বিশ্বের প্রথম এলইইডি প্লাটিনাম সার্টিফায়েড কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ওই বছর পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠছে। উজ্জ্বল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। এর পরের বছর, ২০১৩ সালে রাজধানীতে রানা প্লাজা ভবন ধসে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ হারান ১ হাজার ১৩৪ জন। সেই ঘটনার পর সবুজ উদ্যোগে প্রচুর বিনিয়োগ শুরু করেন পোশাক উদ্যোক্তারা। ২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় আরও তিনটি। ২০১৫ সালে হয় ১১টি। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৬, ১৮ ও ২৪টি। ২০১৯ সালে আরও ২৮টি সবুজ কারখানা গড়ে তোলেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৪টি করে আরও ৪৮টি কারখানা গড়ে তোলেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ১৭৮টিতে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকশ’ পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা হতে ইউএসজিবিসির অধীনে কাজ করছে।