বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন

নেত্রকোণা পাসপোর্ট অফিস দালাল মুক্ত করতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ

মোনায়েম খান নেত্রকোণা :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২

নেত্রকোণা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের হয়রানী ও প্রতারণার অভিযোগ এনে পাসপোর্ট অফিস দালাল মুক্ত করতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন জেলার সদর উপজেলার শিবপ্রসাদপুর গ্রামের মৃত গোলাম হোসেনের পুত্র মোঃ সাহাব উদ্দিন(৭৫)। জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগকারী সাহাব উদ্দিন পবিত্র ওমরা হজ¦ পালন করার উদ্দেশ্যে নেত্রকোণা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে চলতি বছরের মার্চ মাসের ২০ তারিখে ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে পাসপোর্ট সরবরাহ দেওয়ার নির্ধারিত তারিখ থাকলেও পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত দালাল ছাড়া পাসপোর্টের জন্য আবেদন করায় নানা অজুহাতে তাকে পাসপোর্টটি সরবরাহ করা হয়নি। পাসপোর্টটি না পেয়ে গত ১৬ নভেম্বর তিনি আবারো ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে পাসপোর্টের জন্য নতুন করে আবেদন করেছেন। অভিযোগকারী বৃদ্ধ সাহাব উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একসাথে ওমরা হজ¦ করতে যাওয়ার জন্য যারা পাসপোর্টের আবেদন করেছিলাম তারা সবাই দালালদের মাধ্যমে অফিসের বাড়তি টাকার চাহিদা পূরন করে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট নিয়ে ওমরা হজ¦ করে এসেছেন। আর দালালদের মাধ্যমে অফিসের বাড়তি টাকার চাহিদা পূরণ করতে না পারায় আমাকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। অফিসে পাসপোর্টের জন্য যোগাযোগ করলে তারা বলেন, আমার ফাইল হারিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আবারো পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছি। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন শত শত লোক পাসপোর্ট করতে এসে পাসপোর্ট অফিসে হয়রানী ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নেত্রকোণার সহকারী পরিচালক উম্মে কুলসুম বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৩০/৪০ টি পাসপোর্ট হয়। পাসপোর্টের জন্য কম্পিউটারের দোকান অথবা আপনি নিজেও অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন বলে তিনি জানান। সরাসরি নিজে অনলাইনে আবেদন করলে পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিড়ম্বনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো বিড়ম্বনা নাই, আপনি রবিবারে আসেন আমি আপনার সাথে কথা বলবো। নেত্রকোণার শতকরা ৮০ জন লোকই আমার পরিচিত। আমার সম্পর্কে খবর নিয়ে আপনি জানতে পারেন। আমার সাথে কথা বলতে চাইলে আপনি অফিসে আসেন। ভুক্তভোগী সাহাব উদ্দিন পাসপোর্টের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসের ২০ তারিখে ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন, পাসপোর্টটি না পেয়ে গত ১৬ নভেম্বর তিনি আবারো ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে পাসপোর্টের জন্য নতুন করে আবেদন করেছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এধরনের ঘটনা ঘটার কোনোই সম্ভাবনা নাই। উনার আবেদনের স্লিপটি আমার হোয়াটস অ্যাপে দিয়ে রাখেন, আমি দেখবোনি। প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য দালালদের মাধ্যমে ১ হাজার করে বাড়তি টাকা নেয়া হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ভূয়া। আমি কোনো দালারের ধার ধারিনা, আপনি আমার সম্পর্কে, আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে খবর নেন। আমি নেত্রকোণার লোক। দালালী করার জন্য নিজ জেলায় আসিনাই। আমার যতেষ্ট সুনাম আছে, ডিপাটমেন্ট প্লাস গোয়েন্দা সংস্থার সব জায়গায়। এসব কথা আমাকে বলে কোনো লাভ নাই। যদি প্রমাণ পান লোকসহ নিয়ে আসবেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রায় ১৫টি কম্পিউটার দোকানের ব্যবসা। প্রতিটি দোকানেই দেখা যায় পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনের উপচেপড়া ভিড়। আবেদনে প্রত্যেক দোকানের আলাদা সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে ১০৫ নাম্বার কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করছে পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীগণ। সকাল সাড়ে ১০ টায় অফিস সহকারী রিয়াজ শুরু করলেন আবেদনপত্র যাচাই-বাচাই। আবেদনে সাংকেতিক চিহ্ন চোখে পড়লেই আবেদন সঠিক। সাংকেতিক চিহ্ন না থাকলে কোনো না কোনো ত্রুটি আবেদনে থাকবেই। ত্রুটি সংশোধনের জন্য আবেদন বাতিল করে আবারো নতুন আবেদনের পরামর্শ। অবশেষে দালালদের মাধ্যমে অফিসের বাড়তি চাহিদা পূরণ করে আবেদনে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করেই রোজিনা নামের বৃদ্ধার আবেদনটি রিয়াজ সাহেবের কাছে সঠিক হলো। রোজিনা আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী গ্রামের মন্নাফ তালুকদারের স্ত্রী। তিনি পবিত্র ওমরা হজ¦ পালনের উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট করার জন্য এসেছিলেন নেত্রকোণা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। রোজিনা বলেন, তাদের পরিবারের আরোও ৪ জন ওমরা হজ¦ করার জন্য পাসপোর্ট করেছেন। তারা প্রত্যেকেই পাসপোর্ট করার জন্য ব্যাংকের নির্ধারিত ফি ছাড়াও বাড়তি টাকা পরিশোধ করে আবেদনে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করেছিল। নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভূক্তভোগী একই ধরনের অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সির পক্ষ থেকে জানান, নেত্রকোণা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২’শতাধিক পাসপোর্ট হয়। আবেদন করার সময় ব্যাংকের নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ১ হাজার ৫ ’শ টাকা অফিস খরচ বাবদ দিতে হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com