চীনের রাজধানী বেইজিংসহ বড় বড় শহরে শত শত লোক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। তারা দেশটির জিরো কোভিড নীতির প্রতিবাদে রোববার ব্যতিক্রমী এ বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পদত্যাগ দাবি করে শ্লোগান দেয়। করোনা সংক্রমণ কমাতে চীনা কর্তৃপক্ষের নেয়া কঠোর নীতি জনগণের মনে হতাশা তৈরি করেছে। তারা লকডাউন, কোয়ারেন্টিন ও গণহারে করোনা পরীক্ষা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
চীনের উত্তরপূর্বা লীয় জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমকিতে বৃহস্পতিবার ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ১০ জন নিহত হন। কঠোর লকডাউনের কারণে সেখানে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে বলে জনগণ অভিযোগ করে। তবে কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা বিক্ষোভ শুরু করে।
এদিকে রোবরার রাতে কমপক্ষে চার শ’ লোক রাজধানী বেইজিংয়ের একটি নদীর তীরে কয়েক ঘণ্টার জন্যে জড়ো হয়। তারা জাতীয় সংগীত গায়, শ্লোগান দেয় এবং বক্তাদের কথা শোনে। এ সময়ে নদীর অন্যপাশে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের দাবি শোনার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর বিক্ষোভকারীরা স্থান ত্যাগ করে।
অন্যদিকে চীনের বৃহত্তম নগরী সাংহাইয়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উলুমুকি সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টাকালে উভয়পক্ষে এ সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
বিক্ষোভকারীরা রাতে জড়ো হয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। এমনকি তারা তার পদত্যাগ দাবি করে। রোববার সকালে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। কিন্তু বিকেলে তারা আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে। এ সময়ে পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে এবং কিছু লোককে আটক করে নিয়ে যায়। এদিকে চীনে প্রথম যে শহরে করোনা দেখা দিয়েছে সেই উহান শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া গুয়াংঝু ও চেংদুতেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এমনকি বেইজিংয়ের অভিজাত সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ’ ছাত্রও লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে। চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার রাতভর বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্রাউডসোর্স করা তালিকায় দেখা গেছে, ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।
উল্লেখ্য, চীনে প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কিংবা শ্লোগান দেয়ার ঘটনা বলতে গেলে বিরল। দেশটির আইন অনুযায়ী সরকার ও প্রেসিডেন্টকে নিয়ে সমালোচনাকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। করোনী নীতি নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সত্ত্বেও শি জিন পিং সম্প্রতি জিরো কোভিড নীতি থেকে সরে না আসার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এদিকে কঠোর লকডাউন দিয়েও চীনে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। রোববার দেশটিতে ৩৯ হাজার ৫০৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।