শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা নয়, তারাও সুযোগ পেলে সমাজে অবদান রাখতে পারে। সামান্য সহযোগিতা যে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তির জীবনকে পাল্টে দিতে পারে, তার অসংখ্য উদাহরণ আছে দেশে। অসম্পূর্ণ ও অসংগতিসম্পন্ন মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস’ পালন করা হয়। একই দিনে বাংলাদেশে ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস’ পালিত হয়।
গত ৩ ডিসেম্বর ৩১তম ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস’ ও ২৪তম ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস’। প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে ডিসেম্বরের ৩ তারিখে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস’ পালন করা হয়। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৯২ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৮ জন। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (বিবিএস) পরিচালিত এক হাউজহোল্ড জরিপ মতে, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীতার হার ৯.০৭ শতাংশ। ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস’ ও ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস’ দিবস উদযাপনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনমুখী পদক্ষেপ; প্রবেশযোগ্য ও সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মাণে উদ্ভাবনের ভূমিকা’। অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতাজনিত, দৃষ্টি, বাকপ্রতিবন্ধীতা, বুদ্ধি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা সেরিব্রালপালসি, ডাউনসিনড্রোম’সহ অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিবন্ধীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তাদেরকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি। সমাজের অবিচ্ছেদ্য এ অংশকে সব নাগরিক সুযোগসুবিধা দিতে হবে।
যথাযথ প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে প্রতিবন্ধীরাও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষা করা খুবই জরুরি।
দেশে প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন- ২০১৩, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন- ২০১৩, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন- ২০১৮ ও প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯ প্রণয়ন করেছে।
এ সব আইন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মৌলিক চাহিদা পূরণ, ক্ষমতায়ন ও দেশের অন্যান্য জনগণের ন্যায় সমঅধিকার নিশ্চিতকরণে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে। সবারই মানতে হবে, প্রতিবন্ধীরা জাতির বোঝা নয়, সম্পদ। এরাও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে সরকার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, অটিজম রিসোর্স সেন্টার, অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল, প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও সুযোগসুবিধা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।
শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা নয়। সহমর্মিতা, কর্ম ও শিক্ষার সুযোগ পেলে তারাও জাতির সম্পদে রূপ নিতে পারে। প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি অবহেলা নয়। ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার তাদেরও আছে। তাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হচ্ছে।
লেখক: ডা. সেলিনা সুলতানা, কনসালটেন্ট, নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল। প্রাক্তন অটিজম বিশেষজ্ঞ, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল।