নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের বিষয়ে আদেশের জন্য আজ বুধবার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিস্ফোরণে হতাহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে এ রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খন্দকার এ রিট দায়ের করেন। এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হন অন্তত ৫০ জন মুসল্লি। ওই দিন রাতেই এদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে এ পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চিকিৎসাধীন দগ্ধ ৯ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি নিহত ও আহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বপ্রণোদিত নির্দেশনা জারির জন্য আবেদন জানান। রিট আবেদনে বলা হয়, মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দারা গ্যাসলাইন লিকেজের বিষয়টি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। কিন্তু তিতাস গ্যাসের স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন লাইন মেরামতের জন্য। সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও ৯ জন: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় মৃত্যুর লড়াইয়ে হেরে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ২৭ জন। এখন জীবিত ১০ জনের মধ্যে নয়জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হন। এর মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করছে, শর্ট সার্কিট ও গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মোট নয়জন ভর্তি আছেন। একজন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ সংকর পাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৩৭ জন হাসপাতালে এসেছিলেন। বর্তমানে নয়জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে আটজনই নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। নয়জনের কেউই আশঙ্কামুক্ত নন।’ বর্তমানে চিকিৎসাধীন নয়জন হচ্ছেন- ফরিদ (শ্বাসনালীসহ ৫০% পোড়া), শেখ ফরিদ (শ্বাসনালীসহ ৯৩% পোড়া), মো. কেনান (শ্বাসনালীসহ ৩০% পোড়া), নজরুল ইসলাম (শ্বাসনালীসহ ৯৪% পোড়া), সিফাত (শ্বাসনালীসহ ২২% পোড়া), আবদুল আজিজ (শ্বাসনালীসহ ৪৭% পোড়া), হান্নান (শ্বাসনালীসহ ৮৫% পোড়া এবং ডায়াবেটিসের রোগী), আবদুল সাত্তার (শ্বাসনালীসহ ৭০% পোড়া) এবং আমজাদ (শ্বাসনালীসহ ২৫% পোড়া)। এদিকে এ ঘটনায় দগ্ধ মামুন প্রথম ব্যক্তি হিসেবে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। বিস্ফোরণের সময় মামুন মসজিদের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন।
মামুন জানান, সামনের রাস্তা পানিতে তলিয়ে থাকায় চলাচলের জন্য ওই মসজিদের দেয়াল ও গেট ঘেঁষে ইটের খোয়া ফেলা রয়েছে। ওই পাশ দিয়ে লোকজন চলাচল করে। বিস্ফোরণের সময় ওই পথে কেনাকাটা করতে দোকানে যাচ্ছিলেন তিনি। এদিকে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ফতুল্লা অফিসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন-তিতাসের ফতুল্লা অফিসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এস এম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মো. মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, সাহায্যকারী মো. হানিফ মিয়া এবং প্রো-কর্মী মো. ইসমাইল প্রধান। এ ঘটনায় নিহতরা হচ্ছেন- মনির ফরাজি (৩০), সাংবাদিক নাদিম (৪৫), মসজিদের ইমাম আব্দুল মালেক (৬০), ইব্রাহিম (৪২), দেলোয়ার হোসেন (৪২), মোস্তফা কামাল (৩৫), সাব্বির (২১), জুয়েল (৭) জুবায়ের (১৮), হুমায়ূন কবির (৭০), জুনায়েদ (১৭), রিফাত (১৮), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭০), জামাল (৪০), রাশেদ (৩০), মাইনুদ্দিন (১২), জয়নাল (৪০), নয়ন (২৭), কাঞ্চন (৫০), রাসেল (৩৪), বাহাউদ্দিন (৫৫), মিজান (৩৪), শামীম হাসান (৪৫) , জুলহাস (৩৫), আবুল বাসার মোল্লা (৫১) ও মোহাম্মদ আলী (৫৫) এবং ইমরান (৩০)।