রান্নাঘরে থাকা বিভিন্ন মসলায় থাকে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। যা ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ ভালো রাখে এমনকি সারায় নানা ধরনের অসুখ। তেমনই এক মূল্যবান ভেষজ ও মসলা হলো লবঙ্গ। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। লবঙ্গ গাছের শুকনো ফুলই ব্যবহৃত হয় মসলা হিসেবে। মধ্যযুগের শেষের দিকে চীনের মসলা দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় রন্ধনপ্রণালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে লবঙ্গের ব্যবহার শুরু হয়। এরপর এই মসলা ইউরোপ ও এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। জানলে অবাক হবেন, ছোট্ট এই মসলায় থাকা পুষ্টিগুণ শারীরিক নানা ব্যাধির সঙ্গে লড়ায় করে। লবঙ্গ বিটা-ক্যারোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রো ভিটামিন।
ক্যারোটিন রঙ্গক ভিটামিন এ’তে রূপান্তরিত করতে পারে। যা চোখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। জেনে নিন লবঙ্গ পাতে রাখলে কী কী সুফল মিলবে-
প্রদাহ কমায়: লবঙ্গে থাকে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য। এতে থাকা যৌগগুলোতে ইউজেনল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইউজেনল শরীরে প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া কমাতে, আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে ও উপসর্গগুলো সারাতের সাহায্য করে।
ফ্রি র্যাডিকেল কমায়: লবঙ্গে থাকা ইউজেনল যৌগ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই যৌগগুলো শরীরে থাকা ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এসব ফ্রি র্যাডিকেল কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে। লবঙ্গে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আলসার সারায়: বেশ কিছু প্রমাণ আছে যে, লবঙ্গ পেটের আলসার সারাতে এমনকি প্রতিরোধে দারুন কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গ নিয়মিত খেলে আলসার হওয়ার ঝুঁকি কমায় এমনকি আলসার নিরাময়েও সহায়তা করে।
লিভার ভালো রাখা’সহ যেভাবে আলসার সারায় লবঙ্গ: লিভার ভালো রাখে: লবঙ্গ লিভার ফাংশন উন্নত করতে সাহায্য করে। বেশ কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে, লবঙ্গে থাকা ইউজেনল লিভার সিরোসিস ও ফ্যাটি লিভার রোগের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে। এমনকি লিভারের সাধারণ কার্যকারিতাও উন্নত করতে পারে।
লবঙ্গ শরীরে খনিজ ম্যাঙ্গানিজ সরবরাহ করে। ম্যাঙ্গানিজ আপনার শরীরকে এনজাইমগুলো পরিচালনা করতে সাহায্য করে। যা আপনার হাড় মেরামত করতে ও হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে। ম্যাঙ্গানিজ একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেও কাজ করে, যা শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। এছাড়া লবঙ্গে আরও থাকে ভিটামিন কে, পটাসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ইউজেনল ইত্যাদি।
লবঙ্গ গ্রহণে যেসব সতর্কতা মেনে চলবেন-
ওষুধের মিথস্ক্রিয়া: লবঙ্গে থাকা ইউজেনল যৌগ কখনো কখনো ওষুধের সঙ্গে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে যেমন- ওয়ারফারিন।
আপনি যদি রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান তাহলে লবঙ্গ তেল বা লবঙ্গ চা খাওয়া এড়িয়ে চলুন। যদিও মসলা হিসেবে অল্প পরিমাণে লবঙ্গ খাওয়া তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া: লবঙ্গ রক্তে শর্করার মাত্রাকেও প্রভাবিত করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ইউজেনল রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। তবে অত্যধিক পরিমাণে লবঙ্গ গ্রহণ হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা একেবারে কমে যাওয়া) হতে পারে।
এসেনশিয়াল অয়েল বিষাক্ততা: ক্লোভ এসেনশিয়াল অয়েলে আস্ত লবঙ্গের তুলনায় ইউজেনলের অনেক বেশি থাকে। তাই খাঁটি লবঙ্গ তেল গ্রহণ শরীরে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। ফলে মাথা ঘোরা’সহ নানা গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লবঙ্গ কীভাবে গ্রহণ করবেন? লবঙ্গ শুকনো ফুল, এগুলো সারা বছরই মুদি দোকান’সহ সুপার শপগুলোতে পেয়ে যাবেন। খাবারে মসলা হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি আপনি লবঙ্গ ব্যবহার করতে পারে চায়ে। এজন্য লবঙ্গ পানিতে জ্বাল দিয়ে চা তৈরি করে নিন। আবার চায়ের সঙ্গে সামান্য লবঙ্গ গুঁড়া মিশিয়ে পান করলেও উপকৃত হবেন। সূত্র: ওয়েবএমডি