মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায়। এর মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের বিজয় ও স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে এ দেশের বীর বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে আনে। ইতিহাসের গৌরবময় সেই অধ্যায়কে কেন্দ্র করে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও অনেক সিনেমা নির্মিত হয়েছে। সেসব সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে, যুদ্ধে বিদেশিরা কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতে নির্মিত পাঁচ ছবি নিয়ে এই আয়োজন। লিখেছেন- জাহিদ ভূঁইয়া
১৬ ডিসেম্বর: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মিত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন পাকিস্তান বাহিনী। ঐতিহাসিক সেই ঘটনাকে পটভূমি করে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা। এতে দেখা যায়, একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য পরাজয়ের অপমান ভুলতে না পেরে কালাখানজার নামে একটি অপরাধী চক্র গড়ে তোলে। দলটি গোপনে ভারতে মানি লন্ডারিংসহ নানা অনৈতিক কাজ চালিয়ে যায়। ২০০১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে একটি জঙ্গি হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে কালাখানজার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের দিনটির কথা মাথায় রেখেই এই তারিখ নির্ধারণ করে তারা। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর চার সদস্যকে দেওয়া হয় কালাখানজার ধ্বংসের মিশন। অসীম সাহস ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এ জঙ্গি হামলা প্রতিহত করে চার গোয়েন্দা বিজয়, বিক্রম, শীবা ও ভিক্টর। এতে অভিনয় করেন ড্যানি ডেনজংপা, গুলশান গ্রোভার, মিলিন্দ সোমান, দীপান্বিতা শর্মা, সুশান্ত সিং প্রমুখ।
১৯৭১: এ সিনেমায় সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ দেখানো না হলেও ঘটনা পরম্পরায় উঠে এসেছে যুদ্ধের বিভিন্ন খ-চিত্র। অমৃত সাগর পরিচালিত ছবিটিতে দেখানো হয়, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছয় ভারতীয় সৈন্যের পালিয়ে আসার গল্প। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে লড়তে আসা ছয় ভারতীয় সৈনিক বন্দি হয় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। ছয় বছর কারাবন্দি থাকার পর ১৯৭৭ সালে জেল থেকে পালিয়ে স্বদেশে ফেরেন তারা। রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরপুর এ সিনেমাটিকে বলিউডের অন্যতম সেরা ক্ল্যাসিক ছবির স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপেয়ী, রবি কিষাণ, কুমুদ মিশ্র, মানব কউল, দীপক দব্রিয়াল, পিযূষ মিশ্র প্রমুখ। ২০০৭ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে ছবিটি।
যুদ্ধশিশু- চিলড্রেন অব ওয়ার: ২৫ মার্চের গণহত্যা থেকে শুরু করে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নারী নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা নারীদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর অকথ্য নির্যাতনের চিত্র এ সিনেমায় দেখতে পাই আমরা। প্রথমে সিনেমার নাম রাখা হয়েছিল ‘দ্য বাস্টার্ড চাইল্ড’। তবে সেন্সর বোর্ড বাস্টার্ড শব্দটি নিয়ে আপত্তি করায় নাম পরিবর্তন করেন নির্মাতা। নবীন পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত এটি নির্মাণ করেন। ঋদ্ধি সেন, রুচা ইনামদার, রুদ্রনীল, রাইমা সেন, পবন মালহোত্রা ও ভিক্টর ব্যানার্জির অনবদ্য অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে এ সিনেমায়।
দ্য গাজী অ্যাটাক: বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার অল্প কিছুদিন আগে ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যায় পাকিস্তানি সাবমেরিন পিএনএস গাজী। এর চেয়ে কম শক্তিসম্পন্ন আইএনএস রাজপুত দিয়ে শক্তিশালী এ সাবমেরিন ডুবিয়ে দেওয়ার পুরো কৃতিত্বই ছিল ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা রণ বিজয় সিং ও অর্জুন ভার্মার। এ গল্প নিয়েই নির্মিত হয় সিনেমা ‘দ্য গাজী অ্যাটাক’। জনপ্রিয় বলিউড পরিচালক করণ জোহরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধর্ম প্রডাকশনের ব্যানারে নির্মিত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন রানা দাগ্গুবতী, অতুল কুলকার্নি, তাপসী পান্নু, কে কে মেনন প্রমুখ। এ সিনেমায় বাংলাদেশি শরণার্থী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাপসী পান্নু।
মুক্তি- বার্থ অব আ নেশন: ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর ইহুদি অফিসার জে এফ আর জ্যাকব, যাকে জেইক সুইটি নামেও ডাকা হতো। আমাদের স্বাধীনতায় তার ভূমিকার কথা অনেকেই হয়তো জানি না। যুদ্ধের সংকটময় একটি সময়ে পাকিস্তানি জেনারেল এ এ খান নিয়াজীর সঙ্গে জ্যাকবের চৌকস ও বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথন বদলে দিয়েছিল যুদ্ধের ইতিহাস। মনু চোবে পরিচালিত ২২ মিনিটের এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে, কীভাবে ভারতীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবের কারণে পাল্টে গিয়েছিল যুদ্ধের গতিপ্রবাহ। মিলিন্দ সোমান, যশপাল শর্মা অভিনীত এ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটিকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম তথ্যসমৃদ্ধ একটি সিনেমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।- দৈনিক আমাদের সময়.কম