সাইবার হামলার আশঙ্কায় প্রতি দিন রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথে লেনদেন স্থগিত থাকবে। আইটি খাতে সাইবার হামলা প্রতিহত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা আসার পর বেশির ভাগ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি সীমিত করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর অনলাইন লেনদেন। নিজস্ব কার্ড ছাড়া অন্য ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমেও লেনদেন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম জানান, সাইবার সিকিউরিটির বিষয়ে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) থেকে সতর্কতামূলক পরামর্শ আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। তেমনিভাবে গত কয়েকদিন এ ধরনের সতর্কতামূলক পরামর্শ এসেছে বিসিসির কাছ থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছে। সাইবার হামলা প্রতিহত করতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এটিএম বুথ বন্ধ করার মতো কোনো নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেয়া হয়নি। তবে কোনো ব্যাংক যদি নিজস্ব উদ্যোগে নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নিতে চায় তাহলে সেটা ওই ব্যাংকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, সিকিউরিটি এলার্ট আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা এটিএম বুথগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ব্যাংকগুলোর আইটি সার্ভারে হ্যাকারোা প্রবেশ করে যাতে ব্যাংকের তথ্য চুরি করতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এ আশঙ্কা দূর না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা বাড়তি সতর্ক থাকব।
এ দিকে গতকাল থেকে সাইবার হামলার আশঙ্কা প্রতিহত করতে গ্রাহকের মোবাইলে সতর্ক বার্তা পাঠাচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। এর মধ্যে একটি ব্যাংকের ক্ষুদে বার্তায় বলা হয়েছে, রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত এটিএম বুথে লেনদেন স্থগিত থাকবে। অন্য একটি ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে, শহরে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এবং গ্রামে রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এটিএম বুথে লেনদেন স্থগিত রাখা হবে। ব্যাংক থেকে এটিএম বুথে লেনদেন স্থগিত রাখার ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হচ্ছে।
সাইবার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইতোমধ্যে দেশের তিনটি ইন্টারনেট প্রোটোকলে (আইপি) ম্যালওয়ার ভাইরাসের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি খ্যাতিমান ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানির সার্ভারে ম্যালওয়্যার ভাইরাসটি হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় কোম্পানির ইন্টারনেট সেবা প্রদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ডেটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ওই কোম্পানির ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করেন তাদের তথ্যভা-ার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভাইরাসটি ধীরে ধীরে আরো ছড়াতে পারে। এটি যাতে আর ছড়াতে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কেননা এই ভাইরাসের মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতে সাইবার হামলা চালিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে প্রতিটি ব্যাংকের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তারা অনলাইন লেনদেনের নিজস্ব সফটওয়্যারে কোনো হামলা আসছে কি না তা সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিসিসি সূত্র জানায়, ম্যালওয়্যার ভাইরাসটি দেশের যে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) কোম্পানির সার্ভারে সাইবার হামলা করেছে সেটি মেরামতের কাজ চলছে। একই সাথে আরো যে দু’টি ইন্টারনেট প্রটোকলে (আইপি) ম্যালওয়্যারের অস্তিত্ব¡ মিলেছে সেগুলোকেও ব্লক করার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট) কাজ করছে। সার্টের সাইভার বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, অচিরেই ম্যালওয়্যার ভাইরাসগুলো ক্লিন করে ফেলা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, সাইবার হামলা প্রতিরোধে প্রায় সব ব্যাংকই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে এটিএম সেবার সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের। এর পরেই রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের। ক্রেডিট কার্ড সেবা সবচেয়ে বেশি রয়েছে সিটি ব্যাংকের। এ ছাড়াও সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংকসহ প্রায় সব ব্যাংকই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রায় সব ব্যাংকই রাত ৮টার পর সুইফট ও ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ সিস্টেম রাখছে। ফলে অনলাইন লেনদেনও সীমিত হয়ে আসছে। আগে সুইফটে সব সময় লেনদেন করা যেত। এ জন্য ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক বিভাগ বা ডিলিং রুম (যে রুমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের যন্ত্রপাতি রয়েছে) সার্বক্ষণিকভাবে খোলা থাকত। ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচেও সব সময় লেনদেন করা যেত। এখন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিও সীমিত করে আনা হয়েছে। আগে এটিএম বুথগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকত। ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড ও আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সব ব্যাংকের এটিএম বুথে লেনদেন করা যেত। এখন সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কেবলমাত্র যেসব ব্যাংক কার্ড ইস্যু করেছে ওই ব্যাংকের এটিএম বুথে ব্যবহার করা যাবে। অন্য কোনো ব্যাংকের বুথে ব্যবহার করা যাবে না। চায়না ইউনিয়নের পে-কার্ডেও লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।