পূজা সেনগুপ্তকে ফ্রেন্ডশিপ মেডেল দিচ্ছেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। বিদেশিদের জন্য ভিয়েতনাম সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সম্মাননাগুলোর একটি হলো ‘ফ্রেন্ডশিপ মেডেল’ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি লিখে পূজা সেনগুপ্তকে এই পুরস্কার প্রাপ্তির ব্যাপারে অবহিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ফাম ভিয়েত চিয়েন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে অবদান রাখা এবং ‘হোচিমিন: আ জার্নি টু এক্সপ্লোর দ্য লাইট উইদইন’ শিল্পকর্ম নির্মাণে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে পূজা সেনগুপ্তকে ফ্রেন্ডশিপ মেডেল সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে ঢাকাস্থ ভিয়েতনাম দূতাবাসে আগামী ২৮ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১১টায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ অনুষ্ঠানে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে পূজা সেনগুপ্তর হাতে ফ্রেন্ডশিপ মেডেল তুলে দেবেন ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ফাম ভিয়েত চিয়েন। এ বছর একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার পাচ্ছেন তরুণ নৃত্যশিল্পী ও সাংস্কৃতিক উদ্যোক্তা এবং তুরঙ্গমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পূজা সেনগুপ্ত। ভিয়েতনামের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন এবং নিজ কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে বিদেশিদের এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কিংবদন্তি নেতা হোচিমিনের জীবন নিয়ে একটি নৃত্য প্রযোজনা নির্মাণের জন্য তুরঙ্গমীকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় ভিয়েতনাম দূতাবাস। ২০১৯ সালের ৫-৬ সেপ্টেম্বর তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের প্রযোজনায় এবং ভিয়েতনাম সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম মে আসে বিশ্বের প্রথম জীবনীভিত্তিক ড্যান্স থিয়েটার ‘হোচিমিন’।
প্রথম প্রদর্শনীতেই দর্শক, সমালোচক, মিডিয়া এবং দেশি-বিদেশি দর্শকদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় প্রযোজনাটি। ড্যান্স থিয়েটার হোচিমিন পূজা সেনগুপ্তর একটি মৌলিক প্রযোজনা যা ঐ বছরই ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ড্যান্স কাউন্সিলের প্যানোরমায় প্রথম বাংলাদেশি প্রযোজনা হিসেবে জায়গা করে নেয়। প্যানোরমায় পূজা সেনগুপ্তর হোচিমিন প্রযোজনাটিকে বিশ্বের প্রথম জীবনীমূলক নৃত্য নাটক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ৪০ মিনিট দৈর্ঘের এই প্রযোজনার মূল ভাবনা, নকশা, পা-ুলিপি, নৃত্য নির্মাণ ও নির্দেশনায় ছিলেন পূজা সেনগুপ্ত। ২০১৭ সালে ভিয়েতনাম সরকারের আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য সরাসরি প্রতিযোগিতা করে নির্বাচিত হয় তুরঙ্গমীর আরেকটি জনপ্রিয় প্রযোজনা ‘অনামিকা সাগরকন্যা’। সেসময় পূজা সেনগুপ্তর নেতৃত্বে তুরঙ্গমীর ১০ সদস্যের দল উৎসবে অংশগ্রহণ করে ও পুরস্কৃত হয়।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের নাচের নিজস্ব ধারা নির্মাণ ও নাচে পেশাদারিত্ব অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে তুরঙ্গমী। এর মধ্যে ২০১৪ ব্যাংকক ফেস্টিভ্যাল, ২০১৭ ভিয়েতনাম আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব, ২০১৭ দিল্লী ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ফেস্টিভ্যাল, ২০১৮ চীন সিল্ক রোড এক্সপো- ডুঙহুয়াং কনফারেন্স, ২০১৮ রাশিয়া সেন্ট পিটার্সবুর্গ নৃত্য শিক্ষা সম্মেলন, ২০১৮-২২ ফিলিপাইন ড্যান্স এক্সচেঞ্জ, ২০১৯ প্যারিসে জাতিসংঘের ইউনেস্কো সদর দপ্তরে পূজা সেনগুপ্তর ভাষণ, ২০২২ ম্যানিলাতে আইটিআই ও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট উৎসব, ২০২২ দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল, ২০২২ এ জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়া ইন্টারন্যাশনাল কালচার ফেস্টিভ্যাল এবং জাভার জনপ্রিয় বান্দুং আর্টস ফেস্টিভ্যাল ২০২২-এ অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি নৃত্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুরঙ্গমী স্কুল অব ড্যান্স এবং ব্যক্তিগতভাবে পূজা সেনগুপ্ত ইন্টারন্যাশনাল ড্যান্স কাউন্সিল ইউনেস্কোর সদস্যপদ লাভ করেন। সংস্কৃতিকে উদ্যোগ হিসেবে গড়ে তরুণ শিল্পীদের কাজের ক্ষেত্র নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে সম্মানজনক উদ্যোক্তা পুরস্কার ‘নুরুল কাদের সম্মাননা’ লাভ করেন পূজা সেনগুপ্ত। তুরঙ্গমী বিশ্বাস করে বাংলাদেশের নাচ ও ড্যান্স থিয়েটারের এত বড় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য মাইলফলক। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের বন্ধুত্ব আর সাংস্কৃতিক আদান- প্রদানের নতুন ইতিহাসের সূচনা হলো।