টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে এবার দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ দিয়েছেন তার সৎবোন রত্না বালা প্রজাপতি। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে তিনি এ ব্যাপারে লিখিত আবেদন করেছেন। প্রদীপ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযোগটির অনুসন্ধানের অনুমতি চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
অভিযোগে বলা হয়, প্রদীপ কুমার দাশ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নগরীর মুরাদপুর মোহাম্মদপুর এলাকায় রত্না বালার ১২ শতক জমি এবং মুরাদপুর এলাকায় একটি চার তলা ভবন দখল করে নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ শতক জমিটি প্রদীপ তার স্ত্রী চুমকি কারনের নামে এক কোটি ৩০ লাখ টাকায় কিনেছেন বলে রেজিস্ট্রি বায়না করে নেন। অথচ বায়না অনুযায়ী প্রদীপ একটি টাকাও রত্না বালাকে দেননি। ইতোমধ্যে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অন্য একটি অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে দুদক। ওই মামলায় তাকে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হবে। ওইদিন দুদকের মামলায় প্রদীপ দাশকে শ্যেন অ্যারেস্ট দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের চট্টগ্রাম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু। অন্যদিকে মামলা দায়ের করার পর থেকে আত্মগোপনে প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারন।
দুদকে অভিযোগকারী রত্না বালা প্রজাপতি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন প্রেম লাল প্রজাপতি। মা যুগলরানী প্রজাপতি। এ সংসারে আমরা দুই বোন। বোনটি অল্প বয়সে মারা যায়। আমার বাবার মৃত্যুর পর মা হরেন্দ্র লাল দাশ নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। ওই সংসারে প্রদীপসহ তিন সন্তান রয়েছে। পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে আমি মুরাদপুরের মোহাম্মদপুরের ১২ শতক জমি এবং মুরাদপুর এলাকার চার তলা ভবনটির মালিক।’
তিনি আরও জানান, ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রদীপ দাশ মুরাদপুরের মোহাম্মদপুর এলাকার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১২ শতক জমিটি জোরপূর্বক দখল করে নেন। পরবর্তী সময়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার স্ত্রী চুমকি কারনের নামে রেজিস্ট্রি বায়না করে নেন। এতে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় ওই জমি বায়না করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও তাকে একটি টাকাও তিনি দেননি। ওই জমিতে প্রদীপ ৯টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তী সময়ে প্রদীপ কুমার দাশ পৈতৃক সূত্রে পাওয়া মুরাদপুর এলাকার চার তলা ভবনটিও দখল করে নেন। প্রদীপ তার কুকর্মের সহযোগী আলী আকবর নামে এক ব্যক্তিকে নিয়ে ওই বাড়িটি বর্তমানে দখলে রেখেছেন। আলী আকবর ইয়াবা মামলায় ৯ মাস জেলও খেটেছেন।
রত্না বালা প্রজাপতি বলেন, প্রদীপ সম্পত্তি দখলে নিতে আমার ছেলে বিবেক রঞ্জন চৌধুরীকে সাজানো নারী নির্যাতন মামলার আসামি করেছে। নিলুফা নামে টেকনাফের এক নারীকে দিয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করা হয়। এ মামলায় আমার ছেলেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, আমার মেয়ে বেবী চৌধুরীকেও নানা লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। এমনকি তাদের হামলায় বেবী চৌধুরী আহত হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে। শুধু আমার ছেলেমেয়ে নয়, পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ওপর প্রদীপ নির্যাতন করেছে। এদিকে দুদক কার্যালয়ে প্রদীপ দাশের স্ত্রী চুমকি কারনের দেয়া সম্পদ বিবরণীতে বলা হয়: মুরাদপুরের মোহাম্মদপুরের ১২ শতক জমিটি তার মৎস্য খামার থেকে লাভের টাকায় কিনেছে। যা বিশ্বাস করানো যায়নি দুদক কর্মকর্তাদের। এদিকে চুমকি কারনের সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই শেষে দুদক কর্মকর্তারা ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ পান। ওই টাকা প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করে স্ত্রীর নামে দিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় প্রদীপ কুমার দাশসহ ১০ পুলিশ সদস্য কক্সবাজার কারাগারে আছেন। মামলার তদন্ত করছে র্যাব।