বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

কুরআনিক ভাষাজ্ঞানার্জন কতটা অপরিহার্য

মুহাম্মদ আল-হেলাল:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৩

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মানবজাতির দিক নির্দেশনা সংবলিত বিভিন্ন ধরনের আয়াত নাজিল করেছেন। সে সব আয়াতে আল্লাহ কোনোটিতে তার নিজের একত্ববাদ, কোনোটিতে ভালো কাজের প্রতিদান, কোনোটিতে খারাপ কাজের শাস্তি, কোনোটিতে রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, কর্মনীতি ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা করেছেন। তা হলে মহান আল্লাহ কোন আয়াত দিয়ে কোন নির্দেশনা দিয়েছেন এটি জানার জন্য আমাদের পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোর অর্থ জানতে হবে নিজ ভাষায়। আর মুমিনদের কাজ হলো আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন। আরবি ভাষা না জানলে মহান আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা হয় না। আর আল্লাহ তায়ালার সব হুকুম সঠিকভাবে মেনে না চললে মুমিনও হওয়া যায় না। যেমন- কোনো প্রাণীর শুধু চারটি পা আছে, বড় দু’টি কান আছে, বিশাল দেহও আছে কিন্তু শুঁড় নেই, তাহলে সেই প্রাণীকে আমরা পরিপূর্ণ হাতি বলতে পারি না বা বলি না।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে অর্থনীতির আলোচনার মধ্যে সুদ এবং ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন। সেটিও আমরা আরবি ভাষা না জানার কারণে এবং ইসলামিক অর্থনীতির বিষয়ে সম্যক জ্ঞান না থাকার কারণে ইসলামের সুমহান আদর্শ ও মুমিন হওয়া থেকে বি ত হচ্ছি। যেমন- আমরা আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত দেখতে পাই একজন পোদ্দার, মহাজন, সুদখোর বা সুদ ব্যবসায় লিপ্ত কোনো কর্মচারী রীতিমতো সালাত আদায় করছেন, রোজা রাখছেন ইসলামিক লেবাস পরিধান করছেন এমনকি দাড়ি রাখছেন প্রিয় নবী সা:-এর সুন্নত অনুযায়ী এবং দাড়ি ও চুলে লাল মেন্দি লাগাচ্ছেন। তিনি সালাতে বা সালাতের বাইরে আল্লাহ তায়ালা সুদ সম্পর্কে যে আয়াতগুলো নাজিল করেছেন সেগুলো তিলাওয়াত করছেন, তার অর্থাৎ ওই আয়াতগুলোর অর্থ কী তা তিনি জানেন না বা জানার চেষ্টা করছেন না। ধরা যাক এমনই এক ব্যক্তি হয়তো সালাতের মধ্যে সূরা বাকারার ২৭৫ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করছেন, যে আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে যে শয়তানের স্পর্শে পাগল হয়ে গেছে তা এই জন্য যে, তারা বলে ‘ব্যবসায় তো সুদের মতোই’ অথচ আল্লাহ ব্যবসায়কে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। যার কাছে পালনকর্তার উপদেশ এসেছে তারপর সে বিরত হয়েছে, অতীতে যা হয়েছে তা তারই এবং তার ব্যাপার আল্লাহর জিম্মায়। আর যারা আবার আরম্ভ করবে তারাই দোজখের বাসিন্দা, তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে।’
সুতরাং প্রতীয়মান হলো, আমাদের আরবি ভাষাজ্ঞান না থাকার কারণে আমরা মুখে যে ভাষায়ই হোক যেটিকে খারাপ, গর্হিত, নিন্দনীয় বা হারাম ঘোষণা করছি আবার বাস্তব ক্ষেত্রে সেটি নিজেরা অনুসরণ করছি তা থেকে বিরত না থেকে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের একই সূরার ২৭৬ নম্বর আয়াতে আরো ঘোষণা করেছেন- ‘আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ কোনো পাপীকে ভালোবাসেন না।’ পবিত্র কুরআনের এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করার পাশাপাশি দান সদকাকারীদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছেন। আবার তিনি কোনো পাপীকে পছন্দ করেন না এমন ঘোষণাও দিয়েছেন। আমরা যারা নিজেদের কে মুমিন দাবি করি হয়তো এই আয়াত আমরা জীবনে বহুবার সালাতের মধ্যে তিলাওয়াত করেছি বা করি কিন্তু হয়তো আমাদের সুদের সাথেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্ক রয়েছে। আবার দান সদকাকারীদের জন্য এত সুন্দর সুসংবাদ থাকা সত্ত্বেও সেটি আমরা সঠিকভাবে বা বেশি বেশি প্র্যাক্টিস করছি না। ফলে মহান আল্লাহর সন্তোষ অর্জন না করে শুধু অসন্তোষ অর্জন করছি। আর আমরা পাপীদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছি শুধু ভাষাজ্ঞানের অভাবে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে একই সূরার ২৭৮ নম্বর আয়াতে যারা সুদের মতো মহাপাপে লিপ্ত হয়েছে, তাদের ওই পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি স্কিম ঘোষণা করেছেন। সেটি হলো- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বাকি আছে তা ছেড়ে দাও যদি তোমরা মুমিন হও।’
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মুমিনদের ডাক দিয়েছেন যেন তারা সুদের মধ্যে তাদের যে নিজ নিজ স্বার্থ আছে তা ত্যাগ করে ও খাঁটি মুমিন হয়। সূরার ২৭৯ নম্বর আয়াতে আরো ঘোষণা- ‘যদি তোমরা না ছাড়ো এহেন কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করার শামিল। তবে যদি তোমরা তওবা করো তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরা অত্যাচারকারীও নও-অত্যাচারকৃতও নও।
শুধু আরবি ভাষা বা কুরআনের ভাষা না বোঝার কারণে আমরা সুদের মতো গুরুপাপে সম্পৃক্ত থেকে অনেক লঘু সওয়াবের কাজ করে নিজেদের মুমিন ভাবতে থাকি। সুদভিত্তিক কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করাও আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর সাথে যুদ্ধ করার শামিল যদি ওই ব্যক্তির কৃষিকাজ, শ্রমিকের কাজ, জেলের কাজ বা যেকোনো ধরনের হালাল কাজের মাধ্যমে জীবিকার ব্যবস্থা থাকে।
কেননা, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বাস্তবিক জীবনে তাকে খুশি করা যায় না অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে যতক্ষণ না উভয় ব্যক্তির মত ও পথ এক না হয়। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে ওই যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-কে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ না করা পর্যন্ত মুমিন হওয়া যাবে না।
সুতরাং আরবি ভাষাজ্ঞান বা কুরআনিক ভাষাজ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য। তা ছাড়া পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার কোনো পন্থা নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কুরআনিক ভাষাজ্ঞানার্জন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com