বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ অপরাহ্ন

আল্লাহর জিকিরের কল্যাণ

মুফতি জাকারিয়া মাসউদ :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মহান আল্লাহ জিকিরের মধ্যে যে কল্যাণ রেখেছেন তা যদি কেউ মনে করত তবে সর্বদা মহান আল্লাহর নামই জপ করত। আসুন একটু কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জিকিরের ফজিলত জেনে আসি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর প্রতি নৈকট্য-মাধ্যম অন্বেষণ করো এবং তাঁর পথে সংগ্রাম করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩৫) অসিলা বা মাধ্যম গ্রহণ হলো- সমগ্র আদেশ কর্মের মাধ্যমে পালন করা। সব ধরনের নিষেধ থেকে বিরত থাকা। এ ক্ষেত্রে সব রকমের অনুসরণ ও আনুগত্য অন্তর্ভুক্ত। জিকির ও আল্লাহর স্মরণ হলো-কল্যাণের উন্মুক্ত দ্বার, শাস্তি থেকে মুক্তির মাধ্যম, পুণ্যার্জনের মহৎ পন্থা ও অমঙ্গল থেকে রক্ষার কারণ। আমলের ঘাটতি পূরণ করে। সওয়াব-পুণ্য বিপুল করে দেয়। গুনাহ-ত্রুটি মিটিয়ে দেয়। জিকিরের মাহাত্ম্য, মর্যাদা ও কল্যাণের দিক থেকে এর অবস্থান বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা জিকিরকে নামাজ ও হজসহ অনেক ইবাদতে ফরজ করেছেন। আর শরিয়তও সর্বাবস্থায় জিকিরের প্রতি উৎসাহিত করেছে।
জিকিরের সওয়াব ও প্রাপ্য হলো- আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে এমন পুরস্কার দেবেন, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো হৃদয় তা কল্পনাও করেনি। আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ দিনের প্রথম ভাগে বলবে, বিনিময়ে তাকে একজন দাস স্বাধীন করার সওয়াব দেয়া হবে। তার জন্য ১০০টি নেকি লেখা হবে। তার ১০০টি গুনাহ মাফ করা হবে। এই দোয়া সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য শয়তান থেকে রক্ষাকবচ হবে। এর চেয়ে বেশি কল্যাণ আর কেউ অর্জন করতে পারবে না; তবে যে এই আমলটি বেশি করবে সেই কেবল পারবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪১২) জিকিরের সবচেয়ে বড় সওয়াব হলো, জান্নাত অর্জন ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। জিকির আদায়কারীকে আল্লাহ তায়ালা বিপদ-দুর্বিপাক, কষ্ট-অসুবিধা ও সামগ্রিক সমস্যা থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেন- যদি তিনি আল্লাহর তসবিহ পাঠ না করতেন, তবে তাকে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হতো। ‘ (সূরা সাফফাত, আয়াত- ১৪৩-১৪৪) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫২)। জিকিরের একটি পার্থিব লাভ হলো, জিকির আত্মা ও শরীরকে শক্তিশালী করে। ইবাদতে নিমগ্ন হতে সহায়তা করে। হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা রিজিকে বরকত দান করেন।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘নূহ আ: তার পুত্রকে বলেছেন, তোমাকে ‘সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি’ পড়ার তাগিদ দিচ্ছি। কারণ এটি হলো সৃষ্টির সালাত, সৃষ্টির তাসবিহ। আর এটির মাধ্যমে সৃষ্টিকে রিজিক দেয়া হয়। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৬৫৮৩)
তবে জিকিরের নামে লাফালাফি বা মাতলামী করা যাবে না। জিকিরের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এমন পদ্ধতিতে জিকির করা যাবে না। পর্দা লঙ্ঘন করে নারী-পুরুষ এক সাথে জিকির করা যাবে না। আর সর্বোপরি জিকিরকে শুধু মুখে উচ্চারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। সব খারাপ বা মন্দ কাজের সময় আল্লাহর শাস্তিকে স্মরণ করে মন্দ থেকে বিরত থাকাও আল্লাহর জিকির। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিপুল পরিমাণে জিকির করার তাওফিক দান করুন। লেখক : প্রধান মুফতি কাশফুল উলুম নেছারীয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স নেছারীবাদ, সিংড়া, নাটোর




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com