লালমনিরহাটের পাটগ্রামে দহগ্রাম ইউনিয়নে তিস্তা নদীর বামতীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ায় নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে দহগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কাতিপাড়া সৈয়দপাড়া বড়বাড়ি মহিমপাড়া আদর্শ গ্রাম সহ যেসব এলাকা এখনো ভাঙ্গনের মুখে পরেনি ওইসব এলাকা রক্ষার্থে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। আগামী জুনে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ওই এলাকার জয়নাল প্রকল্প এলাকায় দাড়িয়ে তিস্তা নদীর বিশাল মরু এলাকা দেখিয়ে বলেন এখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে তার ফসলী জমি রয়েছে। প্রতি বছর ওই জমিতে ধান পাট ভুট্রা সহ বিভিন্ন ফসল রোপন করে ঘরে তুলেন তিনি। তার ওই জমির অদুরেই ভারত সীমান্ত। প্রতিবছর বর্ষায় ভাঙতে ভাঙতে এখানে চলে এসেছে। কিন্ত তিনি সহ সাধারণ কৃষকের এসব ফসলী জমি এখন তিস্তা মরুভুমি। জানা গেছে ভাঙ্গন রোধে জিওবির অর্থায়নে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগ নাটোরের রোজিনা কটেজ দক্ষিন বড়গাছার জেভি সেহা ইউবি নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ওই প্রকল্পের কার্যাদেশ প্রদান করে। তিনটি প্যাকেজের মধ্যে দু’টি প্যাকেজের কাজ এখনো শুরু হয়নি। দশ নম্বর প্যাকেজের নির্মাণ কাজ ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে শুরু করেছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে এগারো কোটি ৯২ লক্ষ ৮৬ হাজার ১৮৫ টাকা। এই প্যাকেজে নদীর ওপরে ৮২৫ মিটার দৈঘ্য এবং প্রায় ১০ মিটার প্রস্থ এলাকায় দুই মিটার বালু খনন করে সিসি ব্লক ডাম্পিং ও পিসিং করা হবে। এতে তিন সাইজের এক লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৪১ টি ব্লক নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন ঠিকাদারের লোকজন প্রকল্প এলাকায় তিস্তা নদী থেকে সিডিউল বহির্ভুত বালু উত্তোলন করে ওই বালু দিয়ে ব্লক নির্মাণ করছে। এসব ব্লক নিয়ম বহির্ভুত ভাবে বড় সাইজের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। যেসব ব্লক নির্মাণ করা হচ্ছে সেসব ব্লক রাতের আধারে খননকৃত জায়গায় পিসিং করার পূর্বে ডাম্পিং করায় ব্লকের সাথে বালু পড়ে গর্ত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্লক নির্মাণ না করার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। এতে প্রকল্পটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। এলাকাবাসী এসব অভিযোগ করে গত বুধবার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। দহগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন অভিযোগ করে বলেন যে বালু এবং পাথর দিয়ে কাজ করা হচেছ তার মান নি¤œমানের। নি¤œমানের এসব কাজের ব্যাপারে আপত্তি করে আমরা সিডিউল অনুযায়ী কাজ করার অনুরোধ জানালে সোহেল নামে ঠিকাদারের এক ব্যক্তি আমাদের পুলিশ দিয়ে মামলার হুমকী দেন। চার নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন তারা চান সিডিউল মোতাবেক কাজ হোক কিন্ত তারা তা না করে যেখানে নির্মাণ হচ্ছে, সেখান থেকে সিডিউল বহির্ভুত নি¤œমানের বালু তুলে কাজ করা হচ্ছে। তার দাবী ঠিকাদারের লোকজন প্রকল্প এলাকার নদী থেকে ইতিমধ্যে ১০ লক্ষ সেন্টিমিটার বালু উত্তোলন করেছে। বিষয়টি পাউবোর কার্য সহকারী হালিম ও রমজানকে জানালে তারা জানায় আমরা কিছু জানিনা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন তারা যদি না জানে তাহলে এখানে তাদের দায়িত্ব কি? আমরা তাদের এও বলি এর আগে যেসব ঠিকাদার কাজ করেছে তারা কেউ এসব বালু দিয়ে কাজ করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক কিছুটা ক্ষোভের সাথে বলেন যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে কাজ বন্ধ থাক। তবে অনিয়মটা কি সেটা আমাদের জানতে হবে। ১৬-১৭ সালের প্রকল্প এখনো শেষ করা যাচ্ছেনা, এর কারন দ্রব্যমুল্যের দাম বেশী হওয়ায় ঠিকাদার কাজ না করে চলে যাচ্ছে। কাজ না করায় চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারের যে আর্নেস্ট মানি জমা দিয়েছে সেই টাকা বাজেয়াপ্ত পর্যন্ত হয়ে গেছে। যেসব ব্লক বানানো হবে সেসব ব্লক তো অবশ্যই ফেলতে হবে। ছোটখাট ভুলভান্তি হতে পারে তবুও কাজটা এগিয়ে নিতে হবে।